ইন্দ্রিয়তন্ত্র/বর্ণ প্রত্যক্ষণ
রঙের উপলব্ধি
সম্পাদনাভূমিকা
সম্পাদনামানুষ (বানর ও গরিলার মতো প্রাইমেট) হচ্ছে স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত রঙ উপলব্ধির অধিকারী [১]। তাই এটি কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়, যে রঙ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ রঙ আমাদের বস্তু, পৃষ্ঠতল, প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং এমনকি মুখমণ্ডল আলাদা করে চিনতে সাহায্য করে [২],[৩]। রঙ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ অব্যক্ত যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষ করে আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে [৪]।
অনেক দশক ধরে রঙের পদার্থগত বৈশিষ্ট্য ও তার অনুভূতিগত গুণাবলির মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সাধারণত এই বিষয়গুলো দুইটি আলাদা পদ্ধতিতে অধ্যয়ন করা হয়: রঙ দ্বারা সৃষ্ট আচরণগত প্রতিক্রিয়া (যাকে সাইকোফিজিক্স বলা হয়) এবং এর দ্বারা সৃষ্ট প্রকৃত শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া [৫]। এখানে আমরা শুধুমাত্র দ্বিতীয়টি অর্থাৎ শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করব। বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের দিকে এই বিষয়ে অধিকাংশই অজানা ছিল। তবে ১৯৫০ সাল থেকে শুরু করে এই ক্ষেত্রের অগ্রগতি ধীরে হলেও ধারাবাহিকভাবে ঘটেছে।
বিশেষ করে রিসেপ্টরের স্তরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি হয়েছে। মলিকিউলার বায়োলজির পদ্ধতির মাধ্যমে কন রঞ্জকের জিনগত ভিত্তি সম্পর্কে আগে অজানা অনেক তথ্য জানা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া আরও বেশি কর্টিকাল অঞ্চল ভিজ্যুয়াল উত্তেজনার দ্বারা প্রভাবিত হয় বলে দেখা গেছে। যদিও রিসেপ্টরের বাইরের তরঙ্গদৈর্ঘ্য-নির্ভর শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ ও রঙ উপলব্ধির মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করা সহজ নয় [৬]।
এই অধ্যায়ে আমরা চোখের রেটিনা থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স পর্যন্ত দৃষ্টিপথ বরাবর রঙ উপলব্ধির বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মৌলিক বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করব। শারীরবৃত্তীয় গঠনের বিস্তারিত জানার জন্য অনুগ্রহ করে এই উইকিবই এর "দর্শনতন্ত্র এর গঠন" অংশটি দেখুন।
রেটিনায় রঙ উপলব্ধি
সম্পাদনামানুষ যে সকল রঙ পার্থক্য করতে পারে তা মাত্র তিনটি প্রাথমিক (মৌলিক) রঙ মিশিয়ে তৈরি করা সম্ভব। এই রঙ মিশ্রণের ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, রঙ উপলব্ধির জন্য তিন ধরনের সংবেদক কোষ থাকে। প্রতিটি কোষ দৃশ্যমান বর্ণালীর ভিন্ন ভিন্ন অংশের প্রতি সর্বোচ্চ সংবেদনশীলতা দেখায় [১]। ১৮৫৩ সালে প্রথম স্পষ্টভাবে ধারণা দেওয়া হয় যে, স্বাভাবিক রঙ মেলানোর জন্য তিনটি স্বাধীনতার মাত্রা প্রয়োজন [৭]। পরে ১৮৮৬ সালে এই তত্ত্বের সত্যতা নিশ্চিত হয় [৮]। এই ফলাফল আধুনিক গবেষণার ফলাফলের সাথেও বিস্ময়করভাবে মিলে যায় [৯], [১০]।
এই প্রস্তাবিত রঙ সংবেদক কোষগুলো হচ্ছে "কোণ" কোষ। (বিঃদ্রঃ এই অধ্যায়ে আমরা শুধুমাত্র কোণ কোষ নিয়ে আলোচনা করব। রড কোষগুলো খুব কম আলোতে দৃষ্টির জন্য কাজ করে। যদিও তারা কিছুটা রঙ উপলব্ধিতে ভূমিকা রাখে তবে তা এতটাই ক্ষুদ্র যে এখানে উপেক্ষা করা যায়) [১১]। কোণ কোষ হলো রেটিনায় পাওয়া দুটি আলোকগ্রাহী কোষের একটি। এদের ঘনত্ব ফোভিয়াতে সবচেয়ে বেশি। নিচের ছকে তিন ধরনের কোণ কোষের তালিকা দেয়া হয়েছে। এদের পার্থক্য করা যায় বিভিন্ন ধরনের রডপসিন রঞ্জকের ভিত্তিতে। প্রতিটির শোষণ বক্ররেখা নিচের চিত্রে দেখানো হয়েছে।
নাম | যে রঙের প্রতি বেশি সংবেদনশীল | শোষণ বক্ররেখার শীর্ষবিন্দু [ন্যানো.মি] |
---|---|---|
S, SWS, B | নীল | ৪২০ |
M, MWS, G | সবুজ | ৫৩০ |
L, LWS, R | লাল | ৫৬০ |
যদিও কোণ কোষগুলোর নামকরণে এখনো একমত হওয়া যায়নি তবুও সবচেয়ে প্রচলিত নামকরণ পদ্ধতি দুটি প্রধান ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। একটি হলো এদের সংবেদনশীলতার শীর্ষ তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং অপরটি হলো যে রঙের প্রতি এগুলো বেশি সংবেদনশীল (লাল, সবুজ, নীল) [৬]। এই লেখায় আমরা S-M-L (ছোট, মাঝারি ও দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য) নামকরণ ব্যবহার করব। কারণ এই নামগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি বোধগম্য। নীল-সবুজ-লাল নামকরণ কিছুটা বিভ্রান্তিকর। কারণ প্রতিটি কোণ কোষই অনেক বিস্তৃত তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সংবেদনশীল।
তিন ধরনের কোণ কোষের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এদের রেটিনায় আপেক্ষিক বণ্টন। দেখা যায় S-কোণ এর ঘনত্ব পুরো রেটিনাজুড়ে তুলনামূলকভাবে কম। এমনকি ফোভিয়ার কেন্দ্রীয় অংশে এরা একেবারেই অনুপস্থিত। আসলে এরা এতটাই দূরে দূরে থাকে যে স্থানিক দৃষ্টিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারে না। তবে দুর্বল সীমারেখা বোঝাতে কিছুটা সাহায্য করতে পারে [১২]। ফোভিয়াতে প্রধানত L এবং M কোণ আধিপত্য দেখা যায়। এদের অনুপাত সাধারণত একটি অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় L/M অনুপাত ০.৬৭ [১৩] থেকে ২ [১৪] পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২ অনুপাতকেই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। কেন L-কোণের সংখ্যা প্রায় সবসময় M-কোণের চেয়ে বেশি হয় তা এখনো পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই কোণ কোষের অনুপাত রঙ দেখতে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। এটি স্পষ্ট করে যে মস্তিষ্ক অত্যন্ত নমনীয়। এটি যেকোনো কোণ সংকেত থেকেই বোধগম্য অর্থ তৈরি করতে সক্ষম [১৫], [১৬]।
এছাড়াও L-কোণ কোষ এবং M-কোণ কোষের শোষণ বর্ণালির মধ্যে যে ওভারল্যাপ বা আচ্ছাদন রয়েছে সেটাও মনে রাখা জরুরি। S-কোণ কোষের শোষণ বর্ণালি স্পষ্টভাবে পৃথক থাকে। কিন্তু L এবং M কোণ কোষের শোষণ শিখর মাত্র প্রায় ৩০ ন্যানোমিটার ব্যবধানে অবস্থিত। এদের বর্ণালি বক্ররেখাগুলোও উল্লেখযোগ্যভাবে একে অপরকে আচ্ছাদন করে। এর ফলে এই দুই কোণ কোষ শ্রেণির মধ্যে ফোটন শোষণের উচ্চ সামঞ্জস্য দেখা যায়। এই ঘটনাটি ব্যাখ্যা করা যায় এইভাবে ফোভিয়ার কেন্দ্রভাগে সবচেয়ে উচ্চমাত্রার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি অর্জনের জন্য দর্শনতন্ত্র L এবং M কোণ কোষকে সমভাবে ব্যবহার করে। তাদের শোষণ বর্ণালিকে আলাদা করে বিবেচনা করে না। ফলে যদি কোনো পার্থক্য থাকে তাহলে তা উজ্জ্বলতার সংকেতে বিঘ্ন ঘটায় [১৭]। সহজ কথায় L এবং M কোণ কোষের বর্ণালির মধ্যে সামান্য ব্যবধান রঙের তীব্র বৈসাদৃশ্য এবং তীক্ষ্ণ উজ্জ্বলতা দৃষ্টির মধ্যে সমঝোতার প্রতিফলন হিসেবে দেখা যায়। এটি ফোভিয়ার কেন্দ্রে S-কোণ কোষ না থাকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কারণ সেখানেই সর্বোচ্চ দৃষ্টিশক্তি কাজ করে। আরও একটি ব্যাখ্যা হতে পারে যে L এবং M কোণ কোষের শোষণ বর্ণালির ঘনিষ্ঠ অবস্থান তাদের জিনগত উৎসের ফল। ধারণা করা হয় এই দুই কোণ কোষ একই পূর্বপুরুষ থেকে "সম্প্রতি" প্রায় ৩৫ মিলিয়ন বছর আগে বিবর্তিত হয়েছে। অন্যদিকে S-কোণ কোষ এই পূর্বপুরুষ থেকে আরও আগেই বিভক্ত হয়েছে [১১]।
এই তিন ধরনের কোণ কোষের বর্ণালিভিত্তিক শোষণ কার্যকারিতা মানব রঙ দেখার মূল ভিত্তি। এই তত্ত্ব একটি পুরনো সমস্যার সমাধান দেয়। আমরা মানুষরা প্রায় ৭ থেকে ১০ মিলিয়ন আলাদা রঙ পার্থক্য করতে পারি [৫]। অথচ আমাদের রেটিনায় প্রতিটি রঙের জন্য প্রতিটি স্থানে আলাদা শনাক্তকারী কোষ বসানোর মতো জায়গা নেই।
রেটিনা থেকে মস্তিষ্কে
সম্পাদনারেটিনা থেকে যে সংকেতগুলো উচ্চস্তরে পাঠানো হয় সেগুলো কেবলমাত্র রিসেপ্টরের সংকেতের সাধারণ প্রতিনিধিত্ব নয়। বরং এই সংকেতগুলো অনেক বেশি সূক্ষ্মভাবে সংমিশ্রিত হয়ে থাকে। এই অংশে আমরা এইসব সংকেত যে পথ ধরে যায় তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেব।
যখন রেটিনার উপর অপটিক্যাল চিত্র ফোটোরিসেপ্টরে রাসায়নিক ও বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত হয় তখন অ্যামপ্লিটিউড-মডুলেটেড সংকেতগুলো গ্যাংগ্লিয়ন কোষ এবং তার ঊর্ধ্বস্তরে ফ্রিকোয়েন্সি-মডুলেটেড রূপে রূপান্তরিত হয়। এই স্নায়ু কোষগুলোতে সংকেতের মান, প্রতি কোষে সেকেন্ডে কতবার বৈদ্যুতিক স্পাইক ঘটছে তা দিয়ে বোঝানো হয়। এটি কোষের মেমব্রেনের উপর ভোল্টেজ পার্থক্যের মান নয়। এই কোষগুলোর কার্যপ্রণালি ব্যাখ্যা করার জন্য “রিসেপ্টিভ ফিল্ড” ধারণাটি বেশ কার্যকর। একটি রিসেপ্টিভ ফিল্ড হচ্ছে একটি চিত্ররূপ যা দেখায় একটি কোষ চোখের দৃষ্টিক্ষেত্রের কোন অঞ্চলে প্রতিক্রিয়া দেখায়। সাধারণত এই অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে প্রতিক্রিয়ার প্রকৃতিও এতে নির্দেশ করা থাকে। উদাহরণস্বরূপ একটি ফোটোরিসেপ্টরের রিসেপ্টিভ ফিল্ডকে একটি ছোট বৃত্তাকার অংশ হিসেবে ধরা যেতে পারে, যা সেই রিসেপ্টরের দৃষ্টিক্ষেত্রে সংবেদনশীলতার আকার ও অবস্থান বোঝায়।
নিচের চিত্রে গ্যাংগ্লিয়ন কোষের কিছু উদাহরণ রিসেপ্টিভ ফিল্ড দেখানো হয়েছে। সাধারণত এতে কেন্দ্র-পরিপার্শ্ব বিরোধিতার ধারণা থাকে। বামপাশের রিসেপ্টিভ ফিল্ডে একটি ধনাত্মক কেন্দ্র প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে (যাকে অন-সেন্টার বলা হয়)। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সাধারণত একটি কোণ কোষ থেকে ধনাত্মক ইনপুট এবং তার চারপাশের একাধিক কোণ কোষ থেকে ঋণাত্মক ইনপুট পেয়ে তৈরি হয়। ফলে এই গ্যাংগ্লিয়ন কোষটি বিভিন্ন কোণ কোষ থেকে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সংকেত পায়। এইভাবে কোষটি কেবল আলো বিন্দুর প্রতিক্রিয়া করে না বরং এটি প্রান্ত শনাক্তকারী (আরও নির্ভুলভাবে বিন্দু শনাক্তকারী) হিসেবেও কাজ করে। কম্পিউটার ভিশনের ভাষায়, এটি একটি এজ-ডিটেক্টর কার্নেলের সাথে চিত্রের কনভলুশনের ফলাফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। ডানপাশের রিসেপ্টিভ ফিল্ডে একটি ঋণাত্মক কেন্দ্র প্রতিক্রিয়া (অফ-সেন্টার) দেখানো হয়েছে, যা হওয়াটাও সমান সম্ভাব্য। সাধারণত অন-সেন্টার এবং অফ-সেন্টার কোষ একই স্থানে থাকে এবং একই ফোটোরিসেপ্টর দ্বারা চালিত হয়। এর ফলে গ্যাংগ্লিয়ন কোষের প্রতিক্রিয়ার গতিশীল ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পায়।
নিচের চিত্রগুলোতে দেখা যায় কোষের মধ্যে শুধু স্থানীক বিরোধিতা নয় গ্যাংগ্লিয়ন কোষে বর্ণবিরোধিতাও থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ নিচের বাম চিত্রে লাল-সবুজ বিরোধী প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। কেন্দ্রে একটি L-কোণ কোষ থেকে ধনাত্মক ইনপুট এবং চারপাশে M-কোণ কোষ থেকে ঋণাত্মক ইনপুট আসছে। অন্যদিকে ডান অংশে এর অফ-সেন্টার সংস্করণ দেখানো হয়েছে। তাই দৃষ্টিসংবেদন রেটিনা ছেড়ে যাওয়ার আগেই সেখানে প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হয়ে যায়। যা রঙের দেখায় গভীর প্রভাব ফেলে। গ্যাংগ্লিয়ন কোষের আরও অনেক ধরনের প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে কিন্তু এদের সবার ভিতরে এই মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো থাকে।
গ্যাংগ্লিয়ন কোষের অক্ষরন্ধ্রগুলো একত্র হয়ে অপটিক স্নায়ু গঠন করে, যা থ্যালামাসের ল্যাটারাল জেনিকুলেট নিউক্লিয়াস এ সংকেত পাঠায়। অপটিক স্নায়ুতে সংকেত কোডিং অত্যন্ত দক্ষভাবে হয়। এতে স্নায়ু তন্তুর সংখ্যা ন্যূনতম থাকে (অপটিক স্নায়ুর আকার দ্বারা সীমিত)। এর ফলে রেটিনার ব্লাইন্ড স্পটও ক্ষুদ্র রাখা সম্ভব হয় (প্রায় ৫° চওড়া ও ৭° লম্বা)।
এছাড়া যেসব গ্যাংগ্লিয়ন কোষের উদাহরণ গুলো দেয়া হয়েছে সেগুলো একই রকম আলোয় প্রতিক্রিয়া দেখায় না। কারণ এতে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক ক্ষেত্রগুলো ভারসাম্যে থাকে। অর্থাৎ প্রেরিত সংকেতগুলো একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কহীন থাকে। উদাহরণস্বরূপ প্রকৃতির চিত্রের পার্শ্ববর্তী অংশগুলোতে সাধারণত উচ্চ মাত্রার স্থানিক সামঞ্জস্য থাকে এবং তা অত্যন্ত পূর্বানুমানযোগ্য [১৮]। রেটিনার পার্শ্ববর্তী গ্যাংগ্লিয়ন কোষগুলোর মধ্যে পার্শ্বীয় নিষেধ কার্যক্রম এই স্থানিক সামঞ্জস্য কমিয়ে দেয়। ফলে সংকেত প্রক্রিয়াকরণ আরও দক্ষ হয়। একে আমরা বলতে পারি, রেটিনার ভেতরেই একধরনের চিত্র সংকোচন প্রক্রিয়া ঘটছে। L এবং M কোণ কোষের শোষণ বর্ণালির উপরিপাতনের কারণে তাদের সংকেতগুলোও একে অপরের সঙ্গে অত্যন্ত সংযুক্ত থাকে। এই পরিস্থিতিতে সংকেতগুলোর মধ্যে এই সংযোগ বা সম্পর্ক কমানোর জন্য কোণ কোষের সংকেতগুলো একত্রিত করে সংকেত কোডিং আরও কার্যকর করা হয়। আমরা এই বিষয়টি সহজভাবে বুঝতে পারি প্রধান উপাদান বিশ্লেষণ (Principal Component Analysis বা PCA) ব্যবহার করে। PCA একটি পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি যা কোনো একটি পরিবর্তনশীলের সেটকে কম মাত্রায় রূপান্তরিত করে। এতে মূল পরিবর্তনশীলগুলোকে নতুন কিছু পরিবর্তনশীলের সেটে রূপান্তর করা হয়, যেগুলোকে বলা হয় প্রধান উপাদান (PC)। প্রথম PC মূল ভেরিয়েবলের মধ্যে সর্বাধিক তারতম্য ব্যাখ্যা করে। দ্বিতীয় PC ব্যাখ্যা করে সেই তারতম্য যা প্রথম PC ব্যাখ্যা করতে পারেনি। এভাবে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য PC গুলোও তৈরি হয়। এই PC গুলো একে অপরের সঙ্গে সরলরৈখিকভাবে নিরপেক্ষ এবং পরামিতিকস্থানে একে অপরের সাথে সমকোণিক ভাবে অবস্থান করে।
PCA এর প্রধান সুবিধা হলো কয়েকটি শক্তিশালী প্রধান উপাদানই পুরো সিস্টেমের বেশিরভাগ তারতম্য ব্যাখ্যা করতে পারে [১৯]। এই পদ্ধতি কোণ কোষের শোষণ কার্যাবলি বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয় [২০] এবং এমনকি প্রাকৃতিক বর্ণালির ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয় [২১],[২২]। প্রাকৃতিক বস্তু থেকে সৃষ্ট কোণ কোষের উদ্দীপনার স্থানে পাওয়া প্রধান উপাদানগুলো হলো: ১) একটি উদ্দীপ্ত অক্ষ যেখানে L এবং M কোণ কোষের সংকেত যোগ হয় (L+M), ২) L এবং M কোষ সংকেতের পার্থক্য (L-M) ৩) একটি বর্ণ অক্ষ যেখানে S কোষের সংকেত থেকে (L+M) সংকেতের যোগফল বিয়োগ করা হয় (S-(L+M))। এই গাণিতিক/কম্পিউটার ভিত্তিক চ্যানেলগুলো বিদ্যুৎ-চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরীক্ষায় আবিষ্কৃত তিনটি রেটিনো-জেনিকুলেট চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায় [২৩],[২৪]। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে চোখে থাকা অপ্রয়োজনীয় ও পুনরাবৃত্ত রঙের তথ্য বাতিল করে দেওয়া হয়।
রেটিনা থেকে গ্যাংগ্লিয়ন কোষের মাধ্যমে LGN পর্যন্ত এই তথ্য তিনটি ভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। এগুলো কেবল তাদের বর্ণগত বৈশিষ্ট্যে নয়, তাদের গঠনতাত্ত্বিক ভিত্তিতেও আলাদা। এই চ্যানেলগুলো রঙ শনাক্তকরণ ও পার্থক্য নির্ধারণের মতো মৌলিক রঙ কাজের ওপর গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। প্রথম চ্যানেলে L এবং M কোষের সংকেত একত্রে ছড়ানো বাইপোলার কোষে প্রবাহিত হয় এবং পরে তা LGN এর ম্যাগনোসেলুলার স্তরে পৌঁছায় (রেটিনার M কোণ কোষের সাথে এটি মিলিয়ে ফেলা যাবে না)[২৪]। M কোষের গ্রাহক ক্ষেত্র দুটি অংশে বিভক্ত একটি কেন্দ্র এবং একটি পরিধি যেগুলো স্থানিকভাবে বিপরীত। এই কোষগুলোর উজ্জ্বলতা উদ্দীপনার প্রতি উচ্চ সংবেদনশীলতা রয়েছে। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট L-M ইনপুটের ক্ষেত্রে তারা কোনো সাড়া দেয় না [২৫]। যেহেতু বিভিন্ন M কোষের 'নাল পয়েন্ট' কিছুটা ভিন্ন হয় তাই পুরো জনসংখ্যার প্রতিক্রিয়া কখনোই একেবারে শূন্য হয় না। এই বৈশিষ্ট্য কর্টেক্সের সেই অঞ্চলেও পৌঁছায় যেখানে মূলত M কোষের ইনপুট থাকে [২৬]।
পার্ভোসেলুলার পথ শুরু হয় L অথবা M কোণ কোষের পৃথক সংকেত মিজেট বাইপোলার কোষে পাঠানোর মাধ্যমে। এই কোষগুলো রেটিনার P কোষে ইনপুট সরবরাহ করে [১১]। ফোভিয়ায় একক L অথবা M কোষ দিয়ে P কোষের গ্রাহকের কেন্দ্র গঠিত হয় । P কোষের চারপাশের গঠন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত অনুসারে চারপাশে একটি নির্দিষ্ট কোণ কোষ থাকে। ফলে স্থানিক বিপরীত গ্রাহকক্ষেত্র তৈরি হয় উজ্জ্বলতা উদ্দীপনার জন্য [২৭]। পার্ভোসেলুলার স্তরগুলো LGN এ রেটিনা থেকে প্রায় ৮০% তথ্য পরিবহন করে [২৮]।
সবশেষে সম্প্রতি আবিষ্কৃত কনিওসেলুলার পথ (K-) মূলত S-কোণ কোষের সংকেত বহন করে [২৯]। এই ধরনের কোষগুলো বিশেষ বাইপোলার কোষে প্রক্ষেপণ করে, যেগুলো আবার নির্দিষ্ট ছোট গ্যাংগ্লিয়ন কোষে সংকেত পাঠায়। সাধারণত এই কোষগুলো স্থানিক প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। ছোট গ্যাংগ্লিয়ন কোষগুলোর অ্যাকসন LGN এর পাতলা স্তরে (পার্ভোসেলুলার স্তরের পাশে) পৌঁছায় [৩০]। যদিও গ্যাংগ্লিয়ন কোষ LGN এ এসে শেষ হয় (LGN কোষের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে) মনে করা হয় যে গ্যাংগ্লিয়ন কোষ ও LGN কোষের মধ্যে এক-একটি সরাসরি সম্পর্ক থাকে। LGN মূলত সংকেত পরিবহনের জন্য একটি ট্রানজিট স্টেশন হিসেবে কাজ করে। তবে, এটি কিছু ভিজুয়াল ফাংশনও সম্পাদন করে, কারণ কর্টেক্স থেকে LGN এর দিকে ফিরে যাওয়া স্নায়বিক প্রক্ষেপণ আছে, যা এক ধরনের সুইচিং বা অভিযোজনমূলক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। LGN কোষের অ্যাকসন ভিজুয়াল কর্টেক্সের ভিজুয়াল এরিয়া এক (V1) এ অর্থাৎ অক্সিপিটাল লোবে পৌঁছায়।
মস্তিষ্কে রঙ উপলব্ধি
সম্পাদনাকর্টেক্সে, ম্যাগনো, পার্ভো, এবং কনিওসেলুলার পথের সংকেতগুলো প্রাথমিক ভিজুয়াল কর্টেক্সের বিভিন্ন স্তরে শেষ হয়। ম্যাগনোসেলুলার ফাইবার প্রধানত 4Cα এবং স্তর ৬ এ পৌঁছায়। পার্ভোসেলুলার নিউরন প্রধানত 4Cβ এবং স্তর 4A ও ৬ এ প্রক্ষেপণ করে। কনিওসেলুলার নিউরন স্তর ১, ২ ও ৩ এ সাইটোক্রোম অক্সিডেজ সমৃদ্ধ ব্লবগুলিতে শেষ হয় [৩১]।
একবার সংকেত ভিজুয়াল কর্টেক্সে প্রবেশ করলে ভিজুয়াল তথ্যের সংকেতকরণ অনেক বেশি জটিল হয়ে ওঠে। যেমন বিভিন্ন আলোকগ্রাহী কোষের আউটপুট একত্র করে গ্যাংগ্লিয়ন কোষের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় তেমনি LGN কোষগুলোর আউটপুট একত্র ও তুলনা করে কর্টিকাল প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। কর্টেক্সে সংকেত যত উপরের দিকে অগ্রসর হয় এই প্রক্রিয়া তত বেশি জটিল হয়। এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে 'গ্রাহক ক্ষেত্র' শব্দটির ব্যবহারও প্রাসঙ্গিকতা হারাতে থাকে। তবে কিছু নির্দিষ্ট ভিজুয়াল কর্টেক্স অঞ্চলে নির্দিষ্ট কার্যপ্রণালি ও প্রক্রিয়া চিহ্নিত ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। V1 অঞ্চলে (স্ট্রাইয়েট কর্টেক্স) ডাবল অপোনেন্ট নিউরন থাকে। এই নিউরনগুলোর রিসেপটিভ ফিল্ডে রঙ এবং স্থানভিত্তিকভাবে অন/অফ অঞ্চলে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তারা সম্পূর্ণ দৃষ্টিক্ষেত্র জুড়ে রঙের সংকেত তুলনা করে [৩২]। V1 অঞ্চলের মোট কোষের মধ্যে এরা মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ। এদের আকার তুলনামূলকভাবে বড় এবং সংখ্যা কম। এই বৈশিষ্ট্য রঙদর্শনের দুর্বল স্থানিক রেজোলিউশনের সঙ্গে মেলে [১]। এরা চলমান উত্তেজকের দিকনির্দেশনার প্রতি সংবেদনশীল নয় যেমনটা অন্য কিছু V1 নিউরনে দেখা যায়। তাই এরা গতি অনুধাবনে ভূমিকা রাখে না বলেই মনে করা হয় [৩৩]। তবে এদের বিশেষ রিসেপটিভ ফিল্ড গঠনের কারণে এ ধরণের কোষগুলো রঙের কনট্রাস্ট প্রভাব বুঝতে এবং রঙের সংকেত কার্যকরভাবে ধারণ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে [৩৪],[৩৫]।
V1 এর অন্যান্য কোষ বিভিন্ন ধরণের উত্তেজকের প্রতিক্রিয়া দেখায়। যেমন নির্দিষ্ট দিকের প্রান্ত, বিভিন্ন স্থানিক এবং কালিক ফ্রিকোয়েন্সি, নির্দিষ্ট স্থান এবং এদের বিভিন্ন সমন্বয়। এছাড়াও এমন কোষও আছে যারা LGN কোষ থেকে আগত সংকেতকে সরলভাবে সংযুক্ত করে। আবার কিছু কোষ অসরল বা ননলিনিয়ারভাবে সংকেতের সমন্বয় ঘটায়। এসব প্রতিক্রিয়া উন্নত রূপে রঙ উপলব্ধি ও চিত্র বিশ্লেষণে সহায়তা করে।
V2 অঞ্চলে একক নিউরনের রঙ সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তথ্য V1 এর তুলনায় অনেক কম। প্রথম দৃষ্টিতে মনে হয় V1 ও V2 অঞ্চলে রঙ সংকেত প্রক্রিয়াকরণে খুব বড় কোনো পার্থক্য নেই [৩৬]। এর একটি ব্যতিক্রম হলো একটি নতুন ধরনের রঙ-সংবেদনশীল জটিল কোষের আবির্ভাব হওয়া[৩৭]। তাই ধারণা করা হয় V2 অঞ্চলটি রঙের শেড বা হিউ বিশ্লেষণে যুক্ত। তবে এটি এখনও বিতর্কিত এবং নিশ্চিত নয়।
V1 এ ফাংশনাল অকুলার ডমিন্যান্স আবিষ্কারের পর যে মডুলার ধারণার বিকাশ ঘটেছিল এবং P, M, ও K পাথওয়েগুলোর গঠনগত বিভাজন বিবেচনা করে (যা সেকশন ৩ এ বর্ণিত) তখন ধারণা করা হয়েছিল যে দৃষ্টিপ্রক্রিয়ার কর্টেক্সে একটি বিশেষায়িত রঙ বিশ্লেষণ ব্যবস্থা থাকতে পারে [৩৮]। V4 অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে মস্তিষ্কের সম্ভাব্য "রঙ অঞ্চল" হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। এর কারণ হলো একটি প্রভাবশালী গবেষণা যা দাবি করেছিল V4 অঞ্চলের ১০০ শতাংশ কোষ রঙ-সংবেদনশীল [৩৯]। তবে এই দাবি পরবর্তী বহু গবেষণায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মাত্র ১৬ শতাংশ V4 কোষ রঙ শনাক্তে সাড়া দেয় [৪০]। বর্তমানে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ধারণা হলো V4 অঞ্চল শুধু রঙ নয় আকৃতি শনাক্তকরণ, দৃষ্টিগত মনোযোগ এবং ত্রিমাত্রিক উপলব্ধিতেও ভূমিকা রাখে। এছাড়া সাম্প্রতিক গবেষণায় TEO [৪১] এবং PITd [৪২] এর মতো অন্যান্য অঞ্চলে সম্ভাব্য রঙ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র খোঁজা হয়েছে। তবে এদের পারস্পরিক সম্পর্ক এখনো স্পষ্ট নয়। এই বিতর্ক নিরসনে অনেকেই V4, TEO ও PITd অঞ্চলসমূহকে মিলিয়ে একটি বৃহত্তর অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করতে "পস্টেরিয়র ইনফেরিয়র টেম্পোরাল (PIT) কর্টেক্স" শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন [১]।
যদি V1, V2, ও V4 অঞ্চলের কর্টিকাল প্রতিক্রিয়াগুলো বোঝাই কঠিন হয়, তাহলে পুরো দৃষ্টিপ্রক্রিয়ায় থাকা প্রায় ৩০টি কর্টিকাল অঞ্চলের জটিল প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করা আরও কঠিন। চিত্র ৪ এ এইসব কর্টিকাল অঞ্চলের সংযোগের একটি ছোট অংশ দেখানো হয়েছে [৪৩]।
এই স্তরে এসে একক কর্টিকাল কোষের কার্যকারিতা সহজ ভাষায় বোঝানো খুব কঠিন হয়ে যায়। বাস্তবে একক কোষের কাজ হয়তো আলাদা কোনো অর্থ বহন করে না। কারণ বিভিন্ন অনুভূতির প্রতিনিধিত্ব কর্টেক্সের বিভিন্ন কোষের সমষ্টিগত সক্রিয়তায় প্রকাশ পায়।
রঙদর্শনের অভিযোজন প্রক্রিয়া
সম্পাদনাযদিও গবেষকরা মানুষের দৃষ্টিপ্রণালিতে রঙ সংকেত প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছেন তবুও বোঝা জরুরি যে রঙদর্শন কোনো নির্দিষ্ট বা অপরিবর্তনীয় প্রক্রিয়া নয়। বরং এটি একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। পরিবেশের ওপর নির্ভর করে আমাদের দৃষ্টিপ্রতিক্রিয়াকে সর্বোত্তম করার জন্য কিছু অভিযোজন প্রক্রিয়া কাজ করে। বিশেষভাবে রঙ উপলব্ধির ক্ষেত্রে "অন্ধকার অভিযোজন", "আলো অভিযোজন" এবং "বর্ণ অভিযোজন" গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অন্ধকারে অভিযোজন
সম্পাদনাঅন্ধকারে অভিযোজন হলো এমন একটি পরিবর্তন যেখানে আলো কমে যাওয়ার ফলে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠাকে বোঝায়। আলো কমে গেলে দর্শনতন্ত্রের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে আরও সংবেদনশীল হওয়া। এর ফলে এমনকি নিম্নমানের আলোতেও অর্থবহ দৃষ্টিগ্রহণ সম্ভব হয়[৪৪]।
চিত্র ৫-এ দেখা যাচ্ছে, যখন আমরা খুব উজ্জ্বল আলো থেকে একেবারে অন্ধকারে প্রবেশ করি, তখন কীভাবে দৃষ্টিসংবেদনশীলতা ধীরে ধীরে ফিরে আসে[৪৩]। প্রথমে কোণ কোষগুলো ধীরে ধীরে আরও সংবেদনশীল হয়। কয়েক মিনিট পর এই সংবেদনশীলতা একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছে স্থির হয়। প্রায় ১০ মিনিট পর দৃষ্টিশক্তি মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকে।
এই সময়ে রড কোষগুলো, যেগুলোর পুনরুদ্ধার সময় বেশি, তারা পর্যাপ্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে এবং কোণ কোষগুলোর চেয়ে ভালো কাজ করতে শুরু করে। ফলে দৃষ্টিশক্তির নিয়ন্ত্রণ তারা নিয়ে নেয়। এরপর রড কোষগুলোর সংবেদনশীলতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং প্রায় ৩০ মিনিট পর এটি চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছে যায়। অর্থাৎ, প্রথম ১০ মিনিট কোণ কোষগুলো সংবেদনশীলতা পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখে। এরপর রড কোষগুলো কোণ কোষকে ছাড়িয়ে যায় এবং প্রায় ৩০ মিনিটে পূর্ণ সংবেদনশীলতা ফিরে আসে।
এটি শুধু একটি স্নায়বিক প্রক্রিয়া। অন্ধকারের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও কিছু স্নায়বিক ব্যবস্থা কাজ করে। যেমন—চোখের পিউপিলের আকার পরিবর্তন (পিউপিল রিফ্লেক্স), ফটোপিগমেন্টের ক্ষয় ও পুনর্গঠন, রেটিনাল কোষের গেইন নিয়ন্ত্রণ, উচ্চতর স্তরের স্নায়বিক প্রক্রিয়া এবং মানসিক ব্যাখ্যা ইত্যাদি।
আলোতে অভিযোজন
সম্পাদনাআলোর সাথে অভিযোজন হলো অন্ধকার অভিযোজনের বিপরীত প্রক্রিয়া। যদিও এই দুটি প্রক্রিয়ার ভিতরের শারীরবৃত্তীয় উপাদান একই, তবুও আলাদাভাবে আলোচনা করা জরুরি। কারণ এই প্রক্রিয়ার ভিজ্যুয়াল বৈশিষ্ট্যগুলো ভিন্ন।
আলোর সাথে অভিযোজন ঘটে তখন, যখন আলোর পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন ভিজ্যুয়াল সিস্টেমকে কম সংবেদনশীল হতে হয়। কারণ, এখন অনেক বেশি দৃশ্যমান আলো রয়েছে। ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের আউটপুটের সীমিত ডাইনামিক রেঞ্জ আছে। কিন্তু বাস্তব জগতে আলোর মাত্রা অন্তত ১০ গুণেরও বেশি পার্থক্য তৈরি করতে পারে। সৌভাগ্যবশত আমাদের সব সময় এই সম্পূর্ণ আলো রেঞ্জ একসঙ্গে দেখতে হয় না। যখন আলোর মাত্রা অনেক বেশি হয়, তখন অভিযোজন ঘটে ফটোপিগমেন্ট ব্লিচিংয়ের মাধ্যমে। এর ফলে রিসেপ্টরে ফোটন ধারণের পরিমাণ কমে যায়। এতে করে উজ্জ্বল পটভূমিতে কোণ কোষের স্যাচুরেশন বা অতিসংবেদনশীলতা রোধ হয়।
আলোর অভিযোজন মূলত ঘটে রেটিনার ভেতরে[৪৫]। গেইন পরিবর্তন প্রায়ই কোণ কোষভিত্তিক এবং এটি নির্দিষ্ট কোষ এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে[৪৬],[৪৭]। এর মানে হলো আলো অভিযোজনের প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু হয় প্রত্যক্ষ গ্রহণকারীর (রিসেপ্টর) স্তরেই। তবে আলো অভিযোজনের জন্য একাধিক স্তরে সংবেদনশীলতা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকতে পারে। কিছু পরিবর্তন খুব দ্রুত ঘটে। আবার কিছু স্থিতিশীল হতে কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটও লাগে[৪৮]। সাধারণভাবে আলো অভিযোজন সম্পূর্ণ হতে প্রায় ৫ মিনিট সময় নেয় (অন্ধকার অভিযোজনের তুলনায় ছয় গুণ দ্রুত)। এটি দেখায় যে রিসেপ্টরের পরবর্তী ধাপেরও প্রভাব রয়েছে।
চিত্র ৬ এ আলো অভিযোজনের বিভিন্ন উদাহরণ দেখানো হয়েছে[৪৩]। যদি আমরা একটি নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া ফাংশন ব্যবহার করে সব ধরনের তীব্রতা ভিজ্যুয়াল সিস্টেমে প্রকাশ করি, তবে একটি নির্দিষ্ট দৃশ্যের জন্য আমাদের খুব সীমিত রেঞ্জ থাকবে। ফলে ঐ দৃশ্যের কনট্রাস্ট কমে যাবে এবং পরিবর্তন শনাক্ত করার সংবেদনশীলতা কমে যাবে। এই অবস্থা ড্যাশ লাইন দ্বারা দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে, কঠিন রেখাগুলো বিভিন্ন শক্তি স্তরে ভিজ্যুয়াল প্রতিক্রিয়ার নমুনা দেখায়। প্রতিটি রেখা নির্দিষ্ট দৃশ্যের আলোর পরিসরকে সর্বোচ্চ ভিজ্যুয়াল আউটপুটে রূপান্তর করে। এর ফলে প্রতিটি অবস্থায় সর্বোত্তম দৃষ্টিগ্রহণ সম্ভব হয়। আলো অভিযোজনকে এভাবেও ভাবা যায় একটি ভিজ্যুয়াল প্রতিক্রিয়া রেখাকে আলোর মাত্রার অক্ষে সরিয়ে দেওয়া হয়, যতক্ষণ না উপযুক্ত মাত্রায় পৌঁছানো যায়।
বর্ণ অভিযোজন
সম্পাদনাবর্ণ অভিযোজন বলতে বোঝায়, তিনটি কোণ কোষের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সংবেদনশীলতার উচ্চতা পরিবর্তন। প্রতিটি কোণ কোষ আলাদাভাবে আলো অভিযোজনে অংশ নেয় বলে এই সমন্বয় ঘটে। এই তত্ত্বের একটি নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা হলো ‘‘ফন ক্রিস অভিযোজন’’। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, অভিযোজন প্রতিটি কোণ কোষের জন্য আলাদাভাবে ঘটে। এতে প্রতিটি কোষের নির্দিষ্ট তরঙ্গ সংবেদনশীলতা একটি গুণনীয় ধ্রুবক দ্বারা গুণ করা হয়[৪৯]। যদি এই গুণনীয়কগুলো (‘‘ফন ক্রিস সহগ’’ নামেও পরিচিত) প্রতিটি কোষে আলোর শোষণের বিপরীতানুপাতিক হয়, তাহলে প্রতিটি কোষ শ্রেণিতে গড় প্রতিক্রিয়া স্থির থাকে। এটি একটি সহজ কিন্তু কার্যকরী উপায়, যার মাধ্যমে আলোর পরিবর্তন সত্ত্বেও বস্তুর রঙ একই মনে হয়। বিভিন্ন অবস্থায় ‘‘ফন ক্রিস স্কেলিং’’ আলো অভিযোজনের ফলে রঙের সংবেদনশীলতা ও রঙ দেখার ব্যাখ্যার পরিবর্তনগুলো ভালোভাবে বোঝাতে সাহায্য করে[৫০],[৫১]।
বর্ণ অভিযোজন বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, একটি সাদা বস্তু বিভিন্ন ধরনের আলোতে কেমন দেখায় তা দেখা। ধরা যাক, একটি কাগজ টুকরোকে দিনের আলো, ফ্লুরোসেন্ট আলো এবং ইনক্যান্ডেসেন্ট আলোয় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দিনের আলোতে অপেক্ষাকৃত বেশি স্বল্প তরঙ্গের শক্তি থাকে। ইনক্যান্ডেসেন্ট আলোতে আবার বেশি দীর্ঘ তরঙ্গের শক্তি থাকে। তবুও, তিনটি আলোর উৎসেই কাগজটিকে মোটামুটি সাদা দেখায়। এর কারণ হলো, দিনের আলোয় অতিরিক্ত স্বল্প তরঙ্গ ক্ষতিপূরণ করতে S-কোণ কোষের সংবেদনশীলতা কমে যায়। আর ইনক্যান্ডেসেন্ট আলোয় অতিরিক্ত দীর্ঘ তরঙ্গের ক্ষতিপূরণ করতে L-কোণ কোষের সংবেদনশীলতা কমে যায়[৪৩]।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ১.০ ১.১ ১.২ ১.৩ Conway, Bevil R (২০০৯)। "Color vision, cones, and color-coding in the cortex"। The neuroscientist। 15: 274–290।
- ↑ Russell, Richard and Sinha, Pawan} (২০০৭)। "Real-world face recognition: The importance of surface reflectance properties"। Perception। 36 (9)।
- ↑ Gegenfurtner, Karl R and Rieger, Jochem (২০০০)। "Sensory and cognitive contributions of color to the recognition of natural scenes"। Current Biology। 10 (13): 805–808।
- ↑ Changizi, Mark A and Zhang, Qiong and Shimojo, Shinsuke (২০০৬)। "Bare skin, blood and the evolution of primate colour vision"। Biology letters। 2 (2): 217–221।
- ↑ ৫.০ ৫.১ Beretta, Giordano (২০০০)। Understanding Color। Hewlett-Packard।
- ↑ ৬.০ ৬.১ Boynton, Robert M (১৯৮৮)। "Color vision"। Annual review of psychology। 39 (1): 69–100।
- ↑ Grassmann, Hermann (১৮৫৩)। "Zur theorie der farbenmischung"। Annalen der Physik। 165 (5): 69–84।
- ↑ Konig, Arthur and Dieterici, Conrad (১৮৮৬)। "Die Grundempfindungen und ihre intensitats-Vertheilung im Spectrum"। Koniglich Preussischen Akademie der Wissenschaften।
- ↑ Smith, Vivianne C and Pokorny, Joel (১৯৭৫)। "Spectral sensitivity of the foveal cone photopigments between 400 and 500 nm"। Vision research। 15 (2): 161–171।
- ↑ Vos, JJ and Walraven, PL (১৯৭১)। "On the derivation of the foveal receptor primaries"। Vision Research। 11 (8): 799–818।
- ↑ ১১.০ ১১.১ ১১.২ Gegenfurtner, Karl R and Kiper, Daniel C (২০০৩)। "Color vision"। Neuroscience। 26 (1): 181।
- ↑ Kaiser, Peter K and Boynton, Robert M (১৯৮৫)। "Role of the blue mechanism in wavelength discrimination"। Vision research। 125 (4): 523–529।
- ↑ Paulus, Walter and Kroger-Paulus, Angelika (১৯৮৩)। "A new concept of retinal colour coding"। Vision research। 23 (5): 529–540।
- ↑ Nerger, Janice L and Cicerone, Carol M (১৯৯২)। "The ratio of L cones to M cones in the human parafoveal retina"। Vision research। 32 (5): 879–888।
- ↑ Neitz, Jay and Carroll, Joseph and Yamauchi, Yasuki and Neitz, Maureen and Williams, David R (২০০২)। "Color perception is mediated by a plastic neural mechanism that is adjustable in adults"। Neuron। 35 (4): 783–792।
- ↑ Jacobs, Gerald H and Williams, Gary A and Cahill, Hugh and Nathans, Jeremy (২০০৭)। "Emergence of novel color vision in mice engineered to express a human cone photopigment"। Science। 315 (5819): 1723–1725।
- ↑ Osorio, D and Ruderman, DL and Cronin, TW (১৯৯৮)। "Estimation of errors in luminance signals encoded by primate retina resulting from sampling of natural images with red and green cones"। JOSA A। 15 (1): 16–22।
- ↑ Kersten, Daniel (১৯৮৭)। "Predictability and redundancy of natural images"। JOSA A। 4 (112): 2395–2400।
- ↑ Jolliffe, I. T. (২০০২)। Principal Component Analysis। Springer।
- ↑ Buchsbaum, Gershon and Gottschalk, A (১৯৮৩)। "Trichromacy, opponent colours coding and optimum colour information transmission in the retina"। Proceedings of the Royal society of London. Series B. Biological sciences। 220 (1218): 89–113।
- ↑ Zaidi, Qasim (১৯৯৭)। "Decorrelation of L-and M-cone signals"। JOSA A। 14 (12): 3430–3431।
- ↑ Ruderman, Daniel L and Cronin, Thomas W and Chiao, Chuan-Chin (১৯৯৮)। "Statistics of cone responses to natural images: Implications for visual coding"। JOSA A। 15 (8): 2036–2045।
- ↑ Lee, BB and Martin, PR and Valberg, A (১৯৯৮)। "The physiological basis of heterochromatic flicker photometry demonstrated in the ganglion cells of the macaque retina"। The Journal of Physiology। 404 (1): 323–347।
- ↑ ২৪.০ ২৪.১ Derrington, Andrew M and Krauskopf, John and Lennie, Peter (১৯৮৪)। "Chromatic mechanisms in lateral geniculate nucleus of macaque"। The Journal of Physiology। 357 (1): 241–265।
- ↑ Shapley, Robert (১৯৯০)। "Visual sensitivity and parallel retinocortical channels"। Annual review of psychology। 41 (1): 635––658।
- ↑ Dobkins, Karen R and Thiele, Alex and Albright, Thomas D (২০০০)। "Comparison of red--green equiluminance points in humans and macaques: evidence for different L: M cone ratios between species"। JOSA A। 17 (3): 545–556।
- ↑ Martin, Paul R and Lee, Barry B and White, Andrew JR and Solomon, Samuel G and Ruttiger, Lukas (২০০১)। "Chromatic sensitivity of ganglion cells in the peripheral primate retina"। Nature। 410 (6831): 933–936।
- ↑ Perry, VH and Oehler, R and Cowey, A (১৯৮৪)। "Retinal ganglion cells that project to the dorsal lateral geniculate nucleus in the macaque monkey"। Neuroscience। 12 (4): 1101––1123।
- ↑ Casagrande, VA (১৯৯৪)। "A third parallel visual pathway to primate area V1"। Trends in neurosciences। 17 (7): 305–310।
- ↑ Hendry, Stewart HC and Reid, R Clay (২০০০)। "The koniocellular pathway in primate vision"। Annual review of neuroscience। 23 (1): 127–153।
- ↑ Callaway, Edward M (১৯৯৮)। "Local circuits in primary visual cortex of the macaque monkey"। Annual review of neuroscience। 21 (1): 47–74।
- ↑ Conway, Bevil R (২০০১)। "Spatial structure of cone inputs to color cells in alert macaque primary visual cortex (V-1)"। The Journal of Neuroscience। 21 (8): 2768–2783।
- ↑ Horwitz, Gregory D and Albright, Thomas D (২০০৫)। "Paucity of chromatic linear motion detectors in macaque V1"। Journal of Vision। 5 (6)।
- ↑ Danilova, Marina V and Mollon, JD (২০০৬)। "The comparison of spatially separated colours"। Vision research। 46 (6): 823–836।
- ↑ Wachtler, Thomas and Sejnowski, Terrence J and Albright, Thomas D (২০০৩)। "Representation of color stimuli in awake macaque primary visual cortex"। Neuron। 37 (4): 681–691।
- ↑ Solomon, Samuel G and Lennie, Peter (২০০৫)। "Chromatic gain controls in visual cortical neurons"। The Journal of neuroscience। 25 (19): 4779–4792।
- ↑ Hubel, David H (১৯৯৫)। Eye, brain, and vision। Scientific American Library/Scientific American Books।
- ↑ Livingstone, Margaret S and Hubel, David H (১৯৮৭)। "Psychophysical evidence for separate channels for the perception of form, color, movement, and depth"। The Journal of Neuroscience। 7 (11): 3416–3468।
- ↑ Zeki, Semir M (১৯৭৩)। "Colour coding in rhesus monkey prestriate cortex"। Brain research। 53 (2): 422–427।
- ↑ Conway, Bevil R and Tsao, Doris Y (২০০৬)। "Color architecture in alert macaque cortex revealed by fMRI"। Cerebral Cortex। 16 (11): 1604–1613।
- ↑ Tootell, Roger BH and Nelissen, Koen and Vanduffel, Wim and Orban, Guy A (২০০৪)। "Search for color 'center(s)'in macaque visual cortex"। Cerebral Cortex। 14 (4): 353–363।
- ↑ Conway, Bevil R and Moeller, Sebastian and Tsao, Doris Y (২০০৭)। "Specialized color modules in macaque extrastriate cortex"। 560--573। 56 (3): 560–573।
- ↑ ৪৩.০ ৪৩.১ ৪৩.২ ৪৩.৩ Fairchild, Mark D (২০১৩)। Color appearance models। John Wiley & Sons।
- ↑ Webster, Michael A (১৯৯৬)। "Human colour perception and its adaptation"। Network: Computation in Neural Systems। 7 (4): 587 – 634।
- ↑ Shapley, Robert and Enroth-Cugell, Christina (১৯৮৪)। "Visual adaptation and retinal gain controls"। Progress in retinal research। 3: 263–346।
- ↑ Chaparro, A and Stromeyer III, CF and Chen, G and Kronauer, RE (১৯৯৫)। "Human cones appear to adapt at low light levels: Measurements on the red-green detection mechanism"। Vision Research। 35 (22): 3103–3118।
- ↑ Macleod, Donald IA and Williams, David R and Makous, Walter (১৯৯২)। "A visual nonlinearity fed by single cones"। Vision research। 32 (2): 347–363।
- ↑ Hayhoe, Mary (১৯৯১)। Adaptation mechanisms in color and brightness। Springer।
- ↑ MacAdam, DAvid L (১৯৭০)। Sources of Color Science। MIT Press।
- ↑ Webster, Michael A and Mollon, JD (১৯৯৫)। "Colour constancy influenced by contrast adaptation"। Nature। 373 (6516): 694–698।
- ↑ Brainard, David H and Wandell, Brian A (১৯৯২)। "Asymmetric color matching: how color appearance depends on the illuminant"। JOSA A। 9 (9): 1443–1448।