উপস্থাপনা/কয়েক জন বাঙালি উপস্থাপক: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
কসমেটিক পরিবর্তন
১ নং লাইন:
== <big><big>বাঙালী উপস্থাপক পরিচিতি</big></big> ==
 
উপস্থাপনার সাথে যারা জড়িত ছিলেন এবং স্টেজ পারফর্মেন্স কে যারা জনপ্রিয় করে গেছেন বা করে চলেছেন তাদের সম্পর্কে জানার জন্য এই বাঙালী উপস্থাপক পরিচিতি। প্রথম পর্বেই আছেন প্রয়াত শ্রদ্ধেয় ফজলে লোহানী স্যার।
৬ নং লাইন:
 
 
অন্যতম বাঙালী উপস্থাপক এবং বিশিষ্ট টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ফজলে লোহানী ১৯২৮ সালের ১২ মার্চ সিরাজগঞ্জ জেলার কাউলিয়া গ্রামে এক শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবু লোহানী ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। মা ফাতেমা লোহানী ছিলেন কলকাতা করপোরেশন স্কুলের শিক্ষিকা।ফজলে লোহানী ছিলেন একাধারে সাংবাদিক, লেখক, টিভি উপস্থাপক ও চলচ্চিত্র প্রযোজক। বড় ভাই ফতেহ লোহানী ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা, আবৃত্তিকার, চিত্রপরিচালক, সাহিত্যিক, অনুবাদক ও বেতার ব্যক্তিত্ব। ফজলে লোহানী সিরাজগঞ্জ বিএল স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে এমএসসি ক্লাসে ভর্তি হলেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেননি। ভারত বিভাগের পর তিনি অন্য কয়েকজনের সাথে ঢাকা থেকে সাপ্তাহিক পূর্ববাংলা নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৯ সালে তার সম্পাদনায় ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মাসিক পত্রিকা অগত্যা। পঞ্চাশের দশকে তিনি ইংল্যান্ড যান এবং লন্ডনের বিবিসি’র ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে চাকরি করেন। ষাটের দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশে ফিরে এসে ফজলে লোহানী সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতে আত্মনিয়োগ করেন। এ সময় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং মওলানা ভাসানীর সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিক্ষা ও বিনোদনমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও পরিচালনা করে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। তার পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘যদি কিছু মনে না করেন’ সে সময়ে দর্শক-শ্রোতা মহলে খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে।বাংলাদেশের টিভি রিপোর্টার হিসাবে ফজলে লোহানী মতো প্রতিভার সাক্ষাৎ আর কখনো মিলবে কিনা সন্দেহ আছে। ‘‘যদি কিছু মনে না করেন’’ এই শিরোনামে প্রতি মাসে পাক্ষিক দুটি টিভি রিপোর্টিং দেখার জন্য লক্ষ লক্ষ টিভি দর্শক বিপুল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতো। ভয়েস অব আমেরিকা ও রয়টারের জগত বিখ্যাত টিভি রিপোর্টারদের সমকক্ষ ফজলে লোহানী অপূর্ব ভঙ্গিমায় টিভি পর্দায় হাজির হয়ে দর্শকবৃন্দের বিপুল করতালির মধ্যে কখনো হাসি আনন্দ, কখনো বেদনা ভারাক্রামত্ম টিভি রিপোর্টিং এর মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখতেন। সেই আশির দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে টিভি রিপোর্টিং এর প্রবর্তন ঘটানোর মতো যুগান্তকারী কাজ তিনি করেছেন। এসিড-নিক্ষেপের ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনতার শুরুটা তাঁর হাত ধরেই।
লেখক হিসেবেও তিনি অনেক সুনামের অধিকারী ছিলেন। সর্বশেষ ফজলে লোহানী পেনশন নামে একটি সৃজনশীল চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন।
উল্লেখ করার বিষয় হলো বিবিসির “ইউ আস্ক ফর ইট” নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের অনুকরণে প্রয়াত ফজলে লোহানী বিটিভির জন্য “যদি কিছু মনে না করেন” নামে ঐ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটি করতেন। সে সময় হানিফ সংকেত ছিলেন একজন কৌতুকাভিনেতা এবং যদি কিছু মনে না করেন অনুষ্ঠানে তিনি ফজলে লোহানীর সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। ফজলে লোহানী প্রয়াত হওয়ার পর তিনি এখনকার সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন “ইত্যাদি” অনুষ্ঠানটি শুরু করেন।
৩০ অক্টোবর ১৯৮৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৫৮ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।