মঙ্গল পর্যবেক্ষণ যান বা মার্স রিকনাইজেন্স অরবিটার থেকে প্রাপ্ত ফোবোসের চিত্র

ফোবোস বিষয়ক তথ্য:

  • ফোবোস সৌরজগতের অন্য যে কোন উপগ্রহের তুলনায় নিকটবর্তী অবস্থান থেকে কোন গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে।
  • আশা করা হচ্ছে যে, আগামী ৫০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি উভয়ের মধ্যে কোন দৃশ্যমান সংঘর্ষ তৈরি করবে এবং ফোবোসকে ছোট ছোট টুকরোতে ভেঙে ফেলবে।
  • মঙ্গল নিজের অক্ষের চারদিকে এক পাক সম্পন্ন করতে যত সময় অতিবাহিত করে তার থেকে কম সময়ে ফোবোস মঙ্গলকে একবার প্রদক্ষিণ করে।
  • ফোবোসের বিভিন্ন গর্ত গালিভার'স ট্রাভেলস-এর একাধিক চরিত্রের নামে নামাঙ্কিত।

ফোবোস কত বড়? সম্পাদনা

টেমপ্লেট:উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/Mars

সৌরজগতের অন্যান্য উপগ্রহের তুলনায় ফোবস আকারে বেশ ক্ষুদ্র। এটি গোলাকার পরিধি বিশিষ্ট বা গোলকের মতো বস্তু নয়, বরং অনিয়মিত আকৃতির, অনেকটা পিণ্ডময় আলুর মতো। এর সর্বাধিক বিস্তৃতি ২৬ কিমি এবং ক্ষুদ্রতম বিস্তৃতি ১৮ কিমি। মূলত এর আকার পৃথিবীতে একটি বড় শহরের আয়তনের অনুরূপ ধরা যেতে পারে।

 
মঙ্গলের অ্যাসক্রিয়াস মন্স আগ্নেয়গিরির ওপর থেকে ভাইকিং-২ অরবিটার দ্বারা তোলা কক্ষপথে প্রদক্ষিণরত ফোবোসের ছবি

ফোবোসের পৃষ্ঠতল কী রকম? সম্পাদনা

 
ভাইকিং-১ অরবিটার থেকে তোলা ফোবোসের ছবি

মৌলিক চেহারা বিচার করলে এটি পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের মতোই দেখতে হলেও পৃষ্ঠতল বৈশিষ্ট্যমূলক ভাবে অসম। চাঁদের মতোই ফোবোসের বহির্মন্ডলে কোন আবহাওয়া নেই। আবার চাঁদের মতোই ফোবোসেরও একটিই মাত্র দিক সব সময়ে মঙ্গলের মুখোমুখি থাক, এবং ওই পাশটিকে টাইডালি লক্‌ড মহাকর্ষ বন্ধন তল বলা হয়ে থাকে।

 
ভাইকিং-১ অরবিটার থেকে তোলা ফোবোসের কাছ থেকে নেওয়া একটি ছবি

সবচেয়ে বড় বৈষম্যের বিষয়ে এই যে, ফোবোসের নিজস্ব কোন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রায় নেই। নিজের পায়ে লাফ দিয়ে যে কেউ (মহাকাশ ভ্রমণকারী) এটির কক্ষপথে যেতে এবং উপগ্রহের চারদিকে উড়ে বেড়াতে পারবে। এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির পরিমাণ পৃথিবীর এখ সহস্রাংশের সমান। এটি ফোবোসে "পর্বত"কেও প্রভাবিত করে, কারণ সেখানে থাকা বিশাল পাহাড় এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলো অপরিবর্তিত থাকে যেখানে পৃথিবীর চাঁদে এই আকারগুলি মাধ্যাকর্ষণের কারণে পুনর্বিন্যস্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফোবোসের অন্যতম দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্য হলো একটি বৃহৎ গর্ত যা স্টিকনি নামে পরিচিত। এই গর্তটি সমগ্র উপগ্রহের আকারের ওপর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। ফোবোসে ঐ গর্তের প্রভাবে পৃষ্ঠতল বরাবর রেখা এবং খাঁজ লক্ষ্য করা যায়।

কেউ যদি ফোবোসে অবস্থান করেন, তবে ফোবোসের এক চতুর্থাংশ আকাশ জুড়ে মঙ্গল গ্রহের উপস্থিতি লক্ষণীয়।

ফোবোসের একদিনের দৈর্ঘ্য কত? সম্পাদনা

ফোবোসে একটি দিনের দৈর্ঘ্য মোটামুটি ভাবে ৭ ঘন্টা ৪০ মিনিট।

মঙ্গল গ্রহের চতুর্দিকে এর কক্ষপথের দৈর্ঘ্য কত? সম্পাদনা

ফোবোস তার গ্রহ মঙ্গলের সাথে টাইডালি লক্‌ড বা মহাকর্ষ বন্ধনে আবদ্ধ। এর অর্থ ফোবোসের নিজের অক্ষের চারদিকে একবার প্রদক্ষিণ করতে যত সময় লাগে, সেটির মঙ্গলকে প্রদক্ষিণ করতে ঠিক তত সময়ই অতিবাহিত হয়। অর্থাৎ বলা যায় ফোবোসের একটি পৃষ্ঠই সব সময় মঙ্গলের মুখোমুখি থাকে।

ফোবোস মঙ্গলের পৃষ্ঠতলের খুব কাছাকাছি অবস্থিত উপগ্রহ। শুধু তাই নয় সৌরজগতের অন্য যে কোন গ্রহ ও উপগ্রহের মধ্যবর্তী দূরত্ব তুলনা করলে মঙ্গল ও ফোবোসের দূরত্ব সবচেয়ে কম। ফোবোসের কক্ষপথ মঙ্গলের নিজস্ব কক্ষরেখার খুব কাছাকাছি। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে মঙ্গলে অবস্থানরত কোন ব্যক্তি একটি বিশেষ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন যে, মঙ্গল গ্রহের একটি দিনে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ফোবোসের গতি সূর্যের আপাত গতি তুলনায় অধিক।

 
মঙ্গলে ফোবাস দ্বারা সূর্য গ্রহণের দৃশ্য

ফোবোস কি মঙ্গলে সূর্য গ্রহণের জন্য দায়ী? সম্পাদনা

পৃথিবীতে যেরকম পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের জন্য সূর্যগ্রহণ হয়ে থাকে সেরকমই মঙ্গলেও হয়ে থাকে ফোবোসের জন্য। এই ঘটনা ট্রানজিট নামে পরিচিত এবং পৃথিবীতে দৃশ্যমান সূর্যগ্রহণের মতই একই রকম প্রভাব মঙ্গলেও দেখা যায়। মঙ্গলে সূর্যগ্রহণ এর বৈশিষ্ট্য হলো গ্রহণের সময় মঙ্গল থেকে দেখলে সূর্যের আলো যথেষ্ট কম মনে হলেও পৃথিবীতে চাঁদ যেরকম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ করতে পারে মঙ্গলের ক্ষেত্রে সে রকম হয় না। এর কারণ স্বরূপ বলা যায় ফোবোসের আকৃতি এতটাই ছোট যে এটি মঙ্গলে অবস্থানরত যে কোন বিন্দুতে সূর্যকে পুরোপুরিভাবে ঢেকে ফেলতে পারেনা। আবার ফোবোসের কক্ষগতি খুব দ্রুত হওয়ার কারণে গ্রহণের সময় কাল খুব কম, পৃথিবীর মতো বেশকিছু মিনিট ধরে গ্রহণ চলে না, বরং কিছু সেকেন্ডের জন্য স্থায়ী হয়।

ফোবোসের কক্ষপথ যেহেতু মঙ্গলের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে ও নিরক্ষীয় তল বরাবর প্রদক্ষিণ করে তাই মঙ্গলের নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থানরত কেউ মেরু অঞ্চলে অবস্থানরত কারোর থেকে স্পষ্ট গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করবেন।

ফোবোসে মানুষের জন্য কোন ভবিষ্যৎ আছে কি? সম্পাদনা

যেহেতু ফোবোস মঙ্গলের খুব কাছাকাছি অবস্থিত ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রায় নেই বললেই চলে, তাই ফোবোসকে পৃথিবী এবং মঙ্গলের মধ্যবর্তী পৃথিবীর কক্ষে অবস্থানরত স্পেস স্টেশনের অনুরূপ মঙ্গলের কক্ষে অবস্থিত স্পেস স্টেশনের মতো ব্যবহার করা যেতে পারে। কোন ব্যক্তি বা তার সরঞ্জাম পৃথিবী থেকে মঙ্গলে বা মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে আসার মাঝে ফোবোসকে ব্যবহার করা সম্ভব। সাধারণত কোন মহাকাশচারী মঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে তিনি বা তারা অবশ্যই সহজে ফোবোস পরীক্ষণ করতে পারবেন। ফোবোসে বরফীকৃত জল রয়েছে যা মহাকাশচারীদের তৃষ্ণা প্রশমনে ও শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন প্রস্তুতির ব্যবহার্য হয়ে উঠতে পারে।

তবে ফোবোস ক্রম ধ্বংসপ্রাপ্তির পথে সামিল। প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে ফোবোসের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। প্রতিবছর এটি মঙ্গলের পৃষ্ঠতলের দুই মিটার করে কাছে চলে যাচ্ছে যা ভবিষ্যতে মঙ্গলপৃষ্ঠে সংঘর্ষের অনুমান দেয়।

ফোবোস কার নামে নামাঙ্কিত? সম্পাদনা

ফোবোস (প্রাচীন গ্রিক Φόβος) গ্রিক পুরাণে উল্লিখিত মঙ্গলের পুত্রের নামে নামাঙ্কিত, ছিলেন ভয় বা ভীতির দেবতা ও মঙ্গলের দাস।

 
আসাফ হল, ফোবোসের আবিষ্কর্তা

ফোবোস কীভাবে আবিষ্কৃত হয়? সম্পাদনা

আসাফ হল ছিলেন ইউনাইটেড স্টেটস নেভাল অবজারভেটরি-র একজন জ্যোতির্বিজ্ঞান ছাত্র, যেখানে তিনি সৌরজগৎ, তার গ্রহ এবং অন্যান্য অনেক বস্তু সম্পর্কে অধ্যয়নরত ছিলেন। ১৮৭৭ সালে তিনি ফোবোস ও ডিমোস দুটিকে আবিষ্কার করেন এবং উভয়কে মঙ্গলের উপগ্রহ বলে শনাক্ত করেন। ধ্রুপদী গ্রীক পৌরাণিক বই ইলিয়াডের ওপর ভিত্তি করে হেনরি মাদান ফোবোস নামটি রাখেন। তার স্ত্রীয়ের পরিচারিকা স্টিকনির নামে রাখা হয় ফোবোসের বৃহত্তম গর্তের নাম।

ফোবোসের মাধ্যাকর্ষণ আমার উপর কত পরিমাণ অভিকর্ষজ বল দেবে? সম্পাদনা

আকারে ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে ফোবোসের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রায় নেই বললেই চলে। এর মাধ্যমে সব শক্তি এতটাই কম যে পৃথিবীতে ১০০ পাউন্ড ওজনের কোন ব্যক্তির ওজন ফোবোসে বড় জোর হবে এক বিংশতি অংশ পাউন্ড। এর অর্থ যেকেউ পৃথিবী সাপেক্ষে বিশাল পরিমাণ ওজনের বস্তু তুলে ধরতে সক্ষম। একজন মানুষ যিনি পৃথিবীতে ১০ কিলো ওজনের কোন বস্তুকে তুলে ধরতে পারেন তিনি ফোবোসে তিনটি হাতি সমান ওজন বহন করতে পারবেন।

ফোবোসের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নগণ্য হওয়ার কারণে থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং ফোবোসের আকাশে ভেসে থাকা সহজ বিষয়। প্রসঙ্গত বলা যায় ফোবোসের মাধ্যাকর্ষণ এতটাই কম যে, কেউ সেখান থেকে একটি টেনিস বল বা বেসবল ছুড়ে মারলে সেটি সবুজ থেকে অনেক দূর পর্যন্ত প্রক্ষেপিত হবে এবং সেটিকে মঙ্গলের নতুন উপগ্রহ বলেও গণনা করা যেতে পারে!