মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস/Civil War
গৃহযুদ্ধের কারণ
সম্পাদনাগৃহযুদ্ধের একাধিক মৌলিক কারণ ছিল, যার বেশিরভাগই যুক্ত ছিল দক্ষিণে দাসপ্রথার ব্যবহারকে কেন্দ্র করে।[১] এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আব্রাহাম লিঙ্কনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া—যেখানে তিনি দক্ষিণের কোনো নির্বাচনী কলেজের ভোট পাননি।[১] এছাড়াও রিপাবলিকান পার্টির উত্থান, যারা দাসপ্রথার পশ্চিমমুখী সম্প্রসারণের বিরোধিতা করছিল।[১] দক্ষিণাঞ্চল চাইছিল তাদের নিজ নিজ রাজ্যে দাসদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হবে তা ফেডারেল সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নির্ধারণ করতে।[১] উত্তর ও দক্ষিণের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে বিরাট পার্থক্য ছিল—যেখানে দক্ষিণে দাসশ্রমের উপর নির্ভরতা ছিল, আর উত্তরে বিনামূল্যের শ্রম ব্যবস্থার ফলে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হয়েছিল।[২][৩]
“ | একটি ভৌগোলিক রেখা আমেরিকার ইউনিয়নের ওপর অঙ্কিত হয়েছে, এবং ঐ রেখার উত্তরে অবস্থিত সবগুলো রাজ্য ঐক্যবদ্ধভাবে এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করেছে, যার দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্দেশ্য দাসপ্রথার বিরোধী।
এই ব্যক্তির হাতে জাতীয় সরকারের দায়িত্ব অর্পণ করা হচ্ছে, কারণ তিনি ঘোষণা করেছেন যে “এই সরকার দীর্ঘমেয়াদে অর্ধেক দাস এবং অর্ধেক মুক্ত অবস্থায় টিকে থাকতে পারে না” এবং জনগণের মনে এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত যে দাসপ্রথা একসময় অবলুপ্তির পথে যাবে। |
” |
—দক্ষিণ ক্যারোলাইনার ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘোষণা - ২৪ ডিসেম্বর, ১৮৬০[৪] |
ডিক্সির সংবিধান
সম্পাদনা১৮৬১ সালের মার্চের শেষ নাগাদ কনফেডারেট রাষ্ট্র একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে এবং জেফারসন ডেভিসকে তাদের প্রথম ও একমাত্র রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করে। কনফেডারেট স্টেটস অফ আমেরিকার সংবিধান ছিল ঐ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, যা ১১ মার্চ ১৮৬১ তারিখে গৃহীত হয় এবং পুরো গৃহযুদ্ধ চলাকালীন বলবৎ ছিল। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত তারা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধানের অধীনে পরিচালিত হয়।
এই সংবিধানটিকে যদি ইউএস সংবিধানের সঙ্গে তুলনা করা হয়, দেখা যায় অধিকাংশ অনুচ্ছেদই হুবহু এক। এই হাতে-লিখা মূল দলিলটি বর্তমানে জর্জিয়ার অ্যাথেন্সে অবস্থিত জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষণাগারে রাখা আছে। দুই সংবিধানের মধ্যে প্রধান পার্থক্য ছিল—কনফেডারেসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অধিক স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছিল এবং দাসপ্রথার প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছিল। টেমপ্লেট:Wikisource
ফোর্ট সামটার ও যুদ্ধের সূচনা
সম্পাদনাকয়েকটি ফেডারেল দুর্গ কনফেডারেট বাহিনী দখল করে তাদের ঘাঁটিতে পরিণত করেছিল। লিঙ্কনের অভিষেকের সময় পর্যন্ত দুটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ অবশিষ্ট ছিল, যেগুলো এখনও ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১১ এপ্রিল, কনফেডারেট জেনারেল পি. জি. টি. বিউরেগার্ড, ইউনিয়ন মেজর রবার্ট অ্যান্ডারসনকে দক্ষিণ ক্যারোলিনার চার্লসটনের কাছে অবস্থিত ফোর্ট সামটার আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। এই দুর্গটি শহরের বন্দর রক্ষায় একটি কৌশলগত দ্বীপে অবস্থিত ছিল। ঘেরাওকৃত দুর্গটির রসদের মজুত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যেত। ইউনিয়ন বাহিনী দুর্গে রসদ পাঠানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কনফেডারেট জাহাজ তাদের বাধা দেয়। বিউরেগার্ডের সেনারা দুর্গটি ঘিরে ফেলে গোলাবর্ষণ শুরু করে। তীব্র গোলাগুলির পরও আশ্চর্যজনকভাবে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। ১৪ এপ্রিল অ্যান্ডারসন দুর্গটি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। যুদ্ধের প্রথম প্রাণহানি ঘটে পরদিন, যখন দুর্গের পতাকা নামানো হচ্ছিল, একটি ইউনিয়ন কামান ভুলবশত ফেটে যায়।
পরদিন প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে ঘোষণা দেন। তিনি রাজ্য মিলিশিয়া ও স্বেচ্ছাসেবকদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এবং ফোর্ট সামটারের পতনের পর আরও চারটি রাজ্য—ভার্জিনিয়া, আর্কানসাস, টেনেসি ও নর্থ ক্যারোলাইনা—যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
উভয় পক্ষ নিজেদের কৌশল নির্ধারণ করে। কনফেডারেট নেতারা বিশ্বাস করতেন, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তাদের কেবল আত্মরক্ষা করলেই চলবে। কিন্তু কৌশলগত প্রয়োজনে এবং সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে তারা এমন একটি কৌশল গ্রহণ করে, যেটিকে জেফারসন ডেভিস "আক্রমণাত্মক প্রতিরক্ষা" (offensive defensive) কৌশল বলে অভিহিত করেন। এই কৌশলে মূলত প্রতিরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সুযোগমতো উত্তরাঞ্চলে হঠাৎ আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করা হয়।
তবে কনফেডারেসির পরিকল্পনায় তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। প্রেসিডেন্ট ডেভিস কেবল প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন, জেনারেল রবার্ট ই. লি সরাসরি ইউনিয়ন বাহিনীর মুখোমুখি যুদ্ধের পক্ষে মত দেন, আর জেনারেল থমাস জ্যাকসনের মতে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখল করে শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করাই উচিত।
অন্যদিকে বয়োজ্যেষ্ঠ ইউনিয়ন জেনারেল উইনফিল্ড স্কটের কৌশল ‘অ্যানাকোন্ডা প্ল্যান’ নামে পরিচিতি পায়। দক্ষিণ আমেরিকার অ্যানাকোন্ডা সাপ যেমন শিকারকে ঘিরে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে, তেমনি এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল কনফেডারেসিকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলতে—দক্ষিণের সমুদ্রবন্দরগুলোর অবরোধ এবং দ্রুত মিসিসিপি নদী দখল করে দক্ষিণকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা।
- ↑ ১.০ ১.১ ১.২ ১.৩ "Causes Of The Civil War History Detectives PBS"। www.pbs.org। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ "Overview Civil War and Reconstruction, 1861-1877 U.S. History Primary Source Timeline Classroom Materials at the Library of Congress Library of Congress"। Library of Congress, Washington, D.C. 20540 USA। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ "A Guide to Primary Resources for US History :"। www.vcdh.virginia.edu। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ "Avalon Project - Confederate States of America - Declaration of the Immediate Causes Which Induce and Justify the Secession of South Carolina from the Federal Union"। avalon.law.yale.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০।