ইসলামি জীবনধারা/আইন প্রণয়ন
কর্তৃত্বের উৎস কি? কেউ কেউ বিশ্বাস করতে পারে এর উৎস সৃষ্টিকর্তা, মানুষ বা এর মাঝামাঝি কিছু। ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআন শুধু আল্লাহ কর্তৃক আরোপিত বৈধ সীমাগুলোকে ঠিক করে দিয়েছে; এগুলো পরম, সার্বজনীন এবং শাশ্বত আইনি সীমা। এর বাইরে বাকি সব ক্ষেত্রে যে অংশীজনরা জড়িত থাকে, তাদের তৈরি করা আইনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই আইন বিশেষজ্ঞদের ঐক্যমত, প্রথা, চুক্তি, এবং সংবিধান আকারে থাকতে পারে। প্রথাগুলোর মধ্যে রয়েছে নবী ও তাঁর সাহাবীদের প্রথা― যাকে সুন্নাহ বলা হয়।
আধুনিক যুগের ইসলামি রাষ্ট্রে অন্তত তিন ধরনের সরকার রয়েছে।
- মদিনা: এটি নবী মুহাম্মদ কর্তৃক প্রবর্তিত সরকারের একটি রূপ। মদিনার আক্ষরিক অর্থ নাগরিক সমাজ। এই ধরনটি কুরআনকে আইনের উৎস হিসেবে আনুষ্ঠানিক করতে চুক্তি বা সংবিধানের উপর নির্ভর করে। এই চুক্তি বা সংবিধানের ক্ষেত্রে ইসলাম বা কুরআনকে উল্লেখ করা আবশ্যক নয়, দেখুন মদিনা সনদ (মিছাক-আল-মদিনা নামেও পরিচিত)
- খেলাফত: এটি নবী মুহাম্মদের উত্তরসূরিদের প্রবর্তন করা সরকারের একটি রূপ। খলিফাহ শব্দের অর্থ উত্তরাধিকারী। এই ধরনটির ক্ষেত্রে কোনো লিখিত চুক্তি বা সংবিধানের প্রয়োজন নেই। আইনের উৎস হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহই যথেষ্ট। এই উত্সগুলোর ব্যাখ্যা শাসক বা শাসক কর্তৃক নিযুক্ত বিশেষজ্ঞদের উপর নির্ভর করে।
- ইমামত: এটি খিলাফতের বিপরীতে সরকারের ধরনের একটি প্রতিদ্বন্দ্বী রূপ। যারা এমনকি মুহাম্মদের মৃত্যুরও আগে আলীকে মুহাম্মদের পরবর্তী নেতা মনে করত তারাই এই ধরনটি প্রবর্তন করেছে। এর অনুসারীরা বিশ্বাস করে যে আবু বকরের পরিবর্তে তার প্রথম খলিফা হওয়া উচিত। এটি মূলত খেলাফত ব্যবস্থার অনুরূপ, তবে নেতৃত্ব নবী মুহাম্মদের বংশধর থেকে নির্বাচিত হতে হবে। ইমামের আভিধানিক অর্থ নেতা।
ইসলামি পবিত্র আইন বা শরিয়ত হলো আধুনিক যুগের ইসলামি রাষ্ট্রের আইনের একটি রূপ। শরিয়ত শব্দের আক্ষরিক অর্থ পানির উৎস। শরিয়তের ব্যাখ্যা নির্ভর করে একটি নির্দিষ্ট আধুনিক যুগের ইসলামি রাষ্ট্রের সরকারের গঠনের উপর। বিশেষজ্ঞদের ঐকমত্যই খেলাফত বা ইমামত পদ্ধতিতে শরিয়তকে আনুষ্ঠানিকতা দেয়ার জন্য যথেষ্ট। মদিনা সরকার পদ্ধতিতে পারস্পরিক চুক্তি বা জনগণের গণভোট শরিয়তের প্রতিটি বিষয়কে আনুষ্ঠানিকতা দেয়ার জন্য আবশ্যক।
কোন কোন বিশেষজ্ঞ যুক্তি দেন যে মদিনা সরকার পদ্ধতির একটি অপ্রচলিত রূপ কারণ এটি এমন সময় গঠিত হয়েছিল যখন কুরআন নাজিল সম্পূর্ণ হয়নি। কিন্তু খেলাফত এবং ইমামত ধরনের সরকারের জনপ্রিয়তার তুলনায় মদিনা হল আধুনিক যুগের ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর সবচেয়ে জনপ্রিয় সরকার পদ্ধতি। উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের আগ পর্যন্ত একটি একক খেলাফত সাম্রাজ্য আধুনিক স্পেন থেকে আধুনিক ইরাকের মধ্যকার বিস্তৃত অঞ্চল শাসন করেছে। এই বিশেষজ্ঞরা আবার একটি একক খেলাফত সাম্রাজ্য গঠিত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
এই বইটি আধুনিক যুগের ইসলামি রাষ্ট্রের আইনের উপর আলোকপাত করতে চায়। এই বইটি ঐ তিন ধরনের সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব এবং ইরানের সরকার ব্যবস্থার উপর আলোকপাত করবে। অনুরূপ আইন পাকিস্তান, কানাডার কিছু অংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার কিছু অংশেও প্রয়োগ করা হয়েছে।
দেশ অনুযায়ী বিবরণ
সম্পাদনাকানাডা
সম্পাদনাইন্দোনেশিয়া
সম্পাদনাইরান
সম্পাদনাপাকিস্তান
সম্পাদনা১৯৭৮ সালের ২ ডিসেম্বর জেনারেল মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক হিজরি বছরের প্রথম দিন উপলক্ষে দেশব্যাপী একটি ভাষণ দেন। তিনি পাকিস্তানে একটি ইসলামী ব্যবস্থা চালু করার প্রেক্ষিতে এই ভাষণ দিয়েছিলেন। বক্তৃতায় তিনি রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ইসলামের নামে শোষণের অভিযোগ তুলে বলেন,
- অনেক শাসক ইসলামের নামে যা খুশি করেছে।
ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকার যে আইন প্রণয়ন করবে বলে ঠিক করেছিল তা ছিল পাকিস্তানের প্রধান অ্যাংলো-স্যাক্সন আইন থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে নিজাম-ই-ইসলাম (ইসলামিক ব্যবস্থা) কার্যকর করার জনসাধারণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি। পাকিস্তানে একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে জেনারেল জিয়া শরিয়াহ বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। শরীয়াহ বেঞ্চের এখতিয়ার সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন,
- প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার থাকবে সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত যেকোন আইন "শরিয়াহ বেঞ্চ"-এর সামনে উপস্থাপন করার এবং তার রায় পাওয়ার, তা আইনটি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ইসলামী বা অ-ইসলামি যা-ই হোক না কেন।
কিন্তু জেনারেল জিয়া উল্লেখ করেননি যে শরীয়াহ বেঞ্চের এখতিয়ার নিম্নলিখিত অগ্রাধিকারমূলক ধারার মাধ্যমে হ্রাস করা হয়েছে: "(কোনো) আইন সংবিধান, মুসলিম ব্যক্তিগত আইন, কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালের কার্যপ্রণালী সম্পর্কিত কোনো আইন বা কোনো আর্থ-সংক্রান্ত আইন যতক্ষণ না সেটির তিন বছরের মেয়াদ পূর্ণ হয়, বা কর এবং ফি আদায় সংক্রান্ত কোনো আইন বা বীমা অনুশীলন এবং পদ্ধতিকে আওতাভুক্ত করে না।" এর অর্থ হল যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ আইন যা প্রতিটি ব্যক্তিকে সরাসরি প্রভাবিত করে সেগুলো শরিয়াহ বেঞ্চের আওতার বাইরে থেকে যাবে। যদিও ছাঁটাই করার পরও শরিয়াহ বেঞ্চগুলোর সাথেও তার যাত্রা মসৃণ ছিল না। ফেডারেল শরিয়াহ বেঞ্চ রজম বা পাথর মারাকে অ-ইসলামি বলে ঘোষণা করে; জিয়াউল হক আদালত পুনর্গঠন করেন, যা পরে রজমকে ইসলামি বলে ঘোষণা করে।
হুদুদ অধ্যাদেশ
সম্পাদনাসম্পত্তি সম্পর্কিত অপরাধের অধীনে (হুদুদ অধ্যাদেশ এর প্রয়োগ ১৯৭৯), চুরির অপরাধের জন্য বিদ্যমান পাকিস্তান দণ্ডবিধিতে উল্লেখিত কারাদণ্ড বা জরিমানা, বা উভয় শাস্তির বিধানকে একজন সার্জন কর্তৃক অপরাধীর ডান হাত কব্জির সন্ধিস্থল থেকে কেটে ফেলার বিধানের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হয়। ডাকাতির ক্ষেত্রে অপরাধীর ডান হাত থেকে কব্জি এবং গোড়ালি থেকে তার বাম পা একজন সার্জন কর্তৃক কেটে ফেলতে হবে। হুদুদ (আরবি حدود, এছাড়াও হাদুদ, হুদুদ হিসেবে প্রতিলিপিকৃত; এটি হাদ, حد, সীমা বা নিষেধাজ্ঞা শব্দের বহুবচন) শব্দটি প্রায়শই ইসলামি সামাজিক এবং আইনী রচনায় গ্রহণযোগ্য আচরণের সীমা বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
আইনি পরিভাষায় (ইসলামি আইনকে সাধারণত শরিয়ত, شريعة হিসাবে উল্লেখ করা হয়) এই শব্দটি এমন সব আইন বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয় যেগুলো অপরাধের শ্রেণিবিন্যাসের একটি স্তরকে সংজ্ঞায়িত করে। হুদুদের অধীনে শ্রেণীবদ্ধ অপরাধগুলো সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ, যেমন খুন, চুরি এবং ব্যভিচার। চারটি প্রধান সুন্নি মাযহাবের মধ্যে সাজা এবং এই আইনগুলোর বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে মতামতের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। এই যুক্তি প্রায়শই দেওয়া হয় যে, যেহেতু শরিয়ত হল আল্লাহর আইন এবং প্রতিটি অপরাধের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শাস্তির কথা বলা আছে, তাই সেগুলো অপরিবর্তনীয়। তবে, ইসলামে উদারপন্থী আন্দোলনগুলো কিভাবে ইসলামী আইন তৈরি করা হয় তার একটি প্রধান উপাদান বা হাদিসের বৈধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার সাথে সাথে, কিছু কিছু শাস্তির ব্যবস্থা করার বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেক দেশে ইসলামি আইন যেভাবে চর্চা করা হয় তার সাথে মানবাধিকারের অসঙ্গতি অনেককে হুদুদ আইনের শাস্তির উপর আন্তর্জাতিক স্থগিতাদেশ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যতক্ষণ না বৃহত্তর পণ্ডিতদের ঐক্যমত পৌঁছানো যায়। কেউ কেউ যুক্তিও দিয়েছেন যে, শরিয়তের হুদুদ অংশ মানবতাবাদ বা মানবাধিকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
নিষেধাজ্ঞা আদেশ
সম্পাদনামদ (অর্থাৎ অ্যালকোহলযুক্ত সকল পানীয়) পান করা পাকিস্তান দণ্ড বিধির অধীনে মোটেই কোন অপরাধ ছিল না। তবে, ১৯৭৭ সালে সেই আইনে পাকিস্তানে মুসলমানদের জন্য মদ পান ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয় এবং ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০০০ রুপি জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা আদেশের অধীনে, আইনের এই বিধানগুলো আশিটি বেত্রাঘাতের শাস্তির বিধান দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। এটির জন্য দ্বিতীয় খলিফা উমরের সময়কালে মুহাম্মদের সাহাবীদের একটি ইজমার উল্লেখ করা হয়। তবে, আইনটি অমুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়; যদি তারা সরকারের কাছ থেকে মদ্যপান এবং/অথবা মদ্য পানীয় তৈরির লাইসেন্স নেয়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল মুরি ভাঁটিখানা।
ব্যভিচার (যিনা) অধ্যাদেশ
সম্পাদনাযিনা অধ্যাদেশের অধীনে ব্যভিচার সংক্রান্ত বিধানকে দোষী মহিলা এবং পুরুষ অবিবাহিত হলে তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত করা হবে এই বিধান দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। আর যদি তারা বিবাহিত হয় তবে তাদের পাথর মেরে হত্যা করা হবে। বিতর্ক ছিল যে ব্যভিচারের অপরাধের সাথে জড়িত পাকিস্তান দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অপরাধীকে কিছু সুরক্ষা প্রদান করছিল কারণ ব্যভিচার স্বামীর সম্মতি বা সহযোগিতায় করা হলে আইনের চোখে ব্যভিচারের কোনও অপরাধ হয়েছে বলে সাব্যস্ত করা হতো না। প্রচলিত আইনে স্ত্রীকেও মদদদাতা হিসেবে শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। ইসলামী শরিয়ত এরকম কোন ব্যতিক্রম অনুমোদন করে না।
জিয়ার ইসলামিকরণ এবং এর অসঙ্গতির ভার নারীরাই বহন করে। জিনা অধ্যাদেশ এটির মাধ্যমে আসা অনুভূত অন্যায় ও দুর্দশা সম্পর্কে তিক্ত আন্তর্জাতিক সমালোচনার জন্ম দেয়। নারী অধিকার গোষ্ঠীগুলো হুদুদ অধ্যাদেশের অধীনে নারীদের নিপীড়ন ও দুর্ভোগ তুলে ধরার জন্য "প্রথম পাথর কে নিক্ষেপ করবে?" শিরোনামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে সহায়তা করে। ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ফেহমিদা ওআল্লাহ বখশকে পাথর ছুঁড়ে হত্যার জন্য যিনা অধ্যাদেশের অধীনে প্রথম দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং সাজা বাতিল করা হয়।
অনেক ক্ষেত্রে, যিনা অধ্যাদেশের অধীনে একজন মহিলা যিনি ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন তাকে ব্যভিচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়, যদিও ধর্ষককে খালাস দেওয়া হয়। এটি এই অধ্যাদেশ বাতিলের জন্য আইনবিদ এবং মহিলা কর্মীদের ক্রমবর্ধমান দাবির দিকে পরিচালিত করে। ১৯৮৩ সালে সাফিয়া বিবি নামের একটি ১৩ বছর বয়সী অন্ধ মেয়ে, যে তার নিয়োগকর্তা এবং তার ছেলের দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগ করেছিল, তাকে জিনা অধ্যাদেশের অধীনে ব্যভিচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়, ধর্ষকদের খালাস দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তটি জনসাধারণের এবং গণমাধ্যমের কাছ থেকে এত প্রচার এবং নিন্দাকে আকর্ষণ করেছিল যে ফেডারেল শরিয়াহ আদালত তার নিজস্ব এখতিয়ারে মামলার নথি তলব করে এবং আদেশ দেয় যে তাকে তার নিজের মুচলেকায় কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত। পরবর্তীকালে, আপিলের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতের ফলাফল উল্টে দেওয়া হয় এবং দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
১৯৮৮ সালের গোড়ার দিকে,শাহিদা পারভীন এবং মুহাম্মদ সারওয়ারকে পাথর ছুঁড়ে হত্যার জন্য আরেকটি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রায় শাস্তি তিক্ত জনসমালোচনার জন্ম দেয় যার ফলে ফেডারেল শরিয়াহ আদালত তাদের রায় পুনর্বিচার করে এবং খালাস দেয়। এই ক্ষেত্রে বিচারিক আদালত এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছিল যে শাহিদার প্রাক্তন স্বামী খুশি মুহাম্মদের বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ধারা-৭(৩) এর অধীনে নির্ধারিত স্থানীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে দেওয়া উচিত ছিল। এই ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি যে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে, তাকে অবশ্যই ইউনিয়ন পরিষদে তালাক নিবন্ধন করাতে হবে। অন্যথায়, আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হবে যে বিবাহবিচ্ছেদটি অবৈধ হয়ে গেছে এবং দম্পতি যিনা অধ্যাদেশের অধীনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য দায়বদ্ধ।
১৯৮৬ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অফ জুরিস্ট নারী ও অমুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক অপরাধ এবং "ইসলামী" শাস্তি সংক্রান্ত হুদুদ অধ্যাদেশের কিছু ধারা বাতিল করার আহ্বান জানায়। কমিশন একটি উদাহরণ উদ্ধৃত করেছে যে, একজন মুসলিম মহিলা একজন পুরুষের প্রমাণের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত হতে পারে এবং একজন অমুসলিম একজন মুসলিমের প্রমাণের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত হতে পারে, কিন্তু এর বিপরীতটি আইনের আওতায় পড়ে না।
ধর্ম অবমাননা আইন
সম্পাদনামুহাম্মদ, আহলে বাইত (নবীর পরিবার), সাহাবা (নবীর সঙ্গী) এবং শা'আর-ই ইসলাম (ইসলামি প্রতীক) এর অসম্মান করা হয় এমন যেকোনো কিছুর শাস্তি বিধানের জন্য ১৯৮০, ১৯৮২ এবং ১৯৮৬ সালে অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাকিস্তান পেনাল কোড (পিপিসি) এবং ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করা হয়। এটি কারাদণ্ড বা জরিমানা, বা উভয়ই শাস্তিযোগ্য একটি প্রত্যক্ষ অপরাধ।
ধর্মীয় অপরাধ ও শাস্তি
সম্পাদনাপিপিসি | বর্ণনা | শাস্তি |
২৯৮এ | পুণ্যাত্মা ব্যক্তিদের সম্মানে অবমাননাকর মন্তব্য ইত্যাদি ব্যবহার | ৩ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় |
২৯৮বি | আহমদীদের নির্দিষ্টকৃত পবিত্র ব্যক্তিত্ব বা স্থানের জন্য সংরক্ষিত উপাধি, বর্ণনা এবং উপাধি ইত্যাদির অপব্যবহার | ৩ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা |
২৯৮সি, বা বিংশ অধ্যাদেশ | একজন আহমদী, যে নিজেকে একজন মুসলিম বলে পরিচয় দেয়, বা তার ধর্মের প্রচার বা বিস্তার করে, বা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা নিজেকে একজন মুসলিম হিসেবে তুলে ধরে | ৩ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা |
২৯৫ | কোন শ্রেণীর ধর্মকে অবমাননা করার অভিপ্রায়ে উপাসনালয়কে আঘাত করা বা অপবিত্র করা | সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় |
২৯৫এ | ইচ্ছাকৃত এবং বিদ্বেষপূর্ণ কাজ যা ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে কোন শ্রেণীর ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করে | সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় |
২৯৫বি | বিকৃত করা, যেমন: কুরআনকে | আমৃত্যু কারাদণ্ড |
২৯৫সি | অবমাননাকর প্রতীক ব্যবহার; যেমন মুহাম্মদের সম্পর্কে | মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানা |
এই আইনগুলো আজ অবধি বিতর্কিত এবং সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দ্বারা আলোচিত এবং পাকিস্তানের উদারপন্থী এবং মধ্যপন্থীদের দ্বারাও প্রশ্নের সম্মুখীন। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবিন রাফায়েল ৭ মার্চ, ১৯৯৬ তারিখে সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক উপ-কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করে যে পাকিস্তানের ধর্মীয় দলগুলোর "রাজপথের শক্তি" রয়েছে কিন্তু "ব্যালটের শক্তি" নেই এবং ধর্ম অবমাননা আইন বাতিল করতে বেনজির ভুট্টোর সরকারের সামনে এটি একটি বড় বাধা। তিনি প্রকাশ্যে আনেন যে ১৯৮৬ সাল থেকে পাকিস্তানে ১৫০ টিরও বেশি ধর্ম অবমাননা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই আহমদী সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে। আহমদীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাই কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়নি। একই সময়ে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে অন্তত নয়টি এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তবে আইনের বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ডের অধীনে কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি। কিছু দণ্ডাদেশ বাতিল করা হয়েছে এবং বেশ কিছু ব্যক্তি বর্তমানে তাদের দণ্ডাদেশের ব্যাপারে আপিল করছে।
লাহোর হাইকোর্ট ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ সালে সালামত মসিহ এবং রহমত মসীহকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ থেকে খালাস দেয়। ১৯৯৩ সালে একটি মসজিদের দেয়ালে ধর্ম অবমাননাকর শব্দ লেখার অভিযোগে ৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৫ তারিখে দায়রা জজের আদেশে তারা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। আন্তর্জাতিক সমালোচনার পর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দ্রুত প্রত্যাহার করা হয়। আপিলের শুনানির সময় প্রায় প্রতিদিনই ছোট ছোট ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো সাজা কার্যকর করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। রায়ের পর সমস্ত ধর্মীয় দল খালাসের প্রতিবাদে পাকিস্তান জুড়ে প্রতিবাদ দিবস পালন করে।
১৯৯৫ সালও ধর্মীয় উন্মাদনার একটি ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল, যখন ডা. সাজ্জাদ ফারুক গুজরানওয়ালাকে একটি থানার বাইরে লোকেরা পিটিয়ে হত্যা করেছিল। তাকে ধর্মত্যাগী ঘোষণা করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে কুরআন অবমাননা করার অভিযোগ আনা হয়। ড. ফারুককে পরবর্তীতে একজন কট্টর মুসলিম বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়; তাকে পুলিশ স্টেশন থেকে টেনে নিয়ে আসা হয়, যেখানে তাকে আটক করা হয় এবং উত্তেজিত জনতা পাথর ছুঁড়ে তাকে হত্যা করে। একটি গুজবের উপর ভিত্তি করে (যা দৃশ্যত ব্যক্তিগত শত্রুতার জন্য কেউ প্রচার করেছিল) তাকে তার এলাকার মসজিদের লাউড-স্পিকারের মাধ্যমে খ্রিস্টান বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
নামাজের সময়
সম্পাদনানামাজ নিয়মিত পালনের জন্য নির্দেশনা জারি করা হয় এবং সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, অফিসের সময়, দাপ্তরিক কার্যক্রম এবং বিমানবন্দর, রেলস্টেশন ও বাস স্টপে দুপুরের নামাজ (সালাত আল যুহুর) আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। বাস্তবে আজকের দিনে মানুষ সাধারণত সরকারী প্রতিষ্ঠানে নামাজ বাদ দিতে পারে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে নামাজের সময় সিডনিতে নামাজের সময় দুবাইতে নামাজের সময় লন্ডনে নামাজের সময় রিয়াদে নামাজের সময়
রোজার প্রতি শ্রদ্ধা অধ্যাদেশ
সম্পাদনা"এহতেরাম-ই-রমজান" (রোজার প্রতি শ্রদ্ধা) অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল যাতে মাগরিবের (সূর্যাস্ত-পরবর্তী) নামাজের তিন ঘন্টা পরবর্তী সময় পর্যন্ত সিনেমা হলগুলো বন্ধ রাখার সাথে সাথে রমজান মাসে সম্পূর্ণ পবিত্রতা পালন করা হয়।
মুসলমানের পরিচয়
সম্পাদনাসংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে জেনারেল জিয়া মুসলিম ও অমুসলিম এর নিম্নলিখিত সংজ্ঞা প্রদান করেন:
- (ক) "মুসলিম" অর্থ এমন একজন ব্যক্তি যিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অনন্যতা ও একত্বে বিশ্বাস করেন, শেষ নবী মুহাম্মদের নবুওয়াতের পরম এবং শর্তহীন চূড়ান্ততায় বিশ্বাস করেন এবং মুহাম্মদের পরে কাউকে নবী বা ধর্মীয় সংস্কারক, বা যে কোনো শব্দ বা যে কোনো বর্ণনার অর্থে নিজেকে নবী বলে দাবি করেছেন এমন কাউকে নবী হিসাবে বিশ্বাস করেন না বা স্বীকার করেন না। ।
- (খ) "অমুসলিম" অর্থ এমন একজন ব্যক্তি যিনি মুসলিম নন এবং খ্রিস্টান, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, বা পার্সি সম্প্রদায়ের একজন ব্যক্তি, কাদিয়ানি গোষ্ঠী বা লাহোরি গোষ্ঠীর (যারা নিজেদেরকে আহমদী বলে দাবি করে) একজন ব্যক্তি, বা একজন বাহাই, বা তফসিলি গোত্রগুলোর যেকোন একজন ব্যক্তি।
জিয়া কর্তৃক অর্থনীতির ইসলামীকরণ
সম্পাদনাঅর্থনীতির ইসলামীকরণের কাঠামোর অধীনে ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ পাকিস্তানকে ১ জুলাই, ১৯৭৯ সাল থেকে সুদের পরিবর্তে ইক্যুইটি বা মালিকানার ভিত্তিতে কাজ করতে বলা হয়। জাতীয়করণকৃত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ৭,০০০টি শাখায় সুদ-মুক্ত কাউন্টার খোলা হয় ১ জানুয়ারী, ১৯৮০ তারিখে। কিন্তু সুদ বহনকারী জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্পগুলোকে সমান্তরালভাবে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।
যাকাত ও উষর অধ্যাদেশ
সম্পাদনাসিংহভাগ শেয়ার মুসলমানদের মালিকানাধীন থাকা ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ পাকিস্তান এবং অন্যান্য কোম্পানিতে বিদ্যমান প্রধানত সুদ-বহনকারী সঞ্চয় এবং শেয়ার থেকে বার্ষিক ২.৫% হারে যাকাত কেটে নিতে সরকারকে ক্ষমতা দেওয়ার জন্য ১৯৮০ সালে জাকাত ও উষর অধ্যাদেশ জারি করা হয়। নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করা ফরেন এক্সচেঞ্জ বিয়ারার সার্টিফিকেট স্কিমকে বাধ্যতামূলক যাকাত কর্তন থেকে ছাড় দেওয়া হয়। এই অধ্যাদেশটি শিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়; তাদেরকে পরে যাকাতের বাধ্যতামূলক কর্তন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এমনকি সুন্নীরাও বাধ্যতামূলক কর্তন এবং যাকাত বন্টনের পদ্ধতির সমালোচনা করেছিল।
ভূমি সংস্কার
সম্পাদনা১৯৮০ সালের ১৩ ডিসেম্বর জেনারেল জিয়াকে বিস্মিত করে, ফেডারেল শরীয়াহ আদালত ১৯৭২ এবং ১৯৭৭ সালের ভূমি সংস্কারকে ইসলামী আদেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে ঘোষণা করে। তারপরে এমন উলামাদের আনা হয় যারা ঐতিহ্যগতভাবে জমিদার শ্রেণীকে সমর্থন করেছিল। তিনজন উলামাকে ফেডারেল শরিয়াহ আদালতে এবং দুজনকে সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা ১৯৯০ সালে এফএসসি এর রায়কে উল্টে দেয়। সামরিক আইন জারির পর, অনেক বাড়িওয়ালা তাদের ভাড়াটেদের তাদের উপকারকারী তথা ভুট্টোর সুরক্ষার দাবি করতে বলেছিল বলে জানা গেছে। বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার ভাড়াটিয়াকে জমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়। সামরিক আইনের শাসন স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে এটি পুনর্বন্টনকারী কৃষি নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয় এবং সমর্থকদের পুরস্কৃত করতে ও শত্রুদের শাস্তি দিতে ভূমি সংস্কারকে সাধারণ রাজনীতি হিসাবে বর্ণনা করেছিল।
বঞ্চিত ও দখলচ্যুতদের প্রতি জেনারেল জিয়ার পরামর্শ ছিল যে "রোটি (রুটি), কাপড়া (জামাকাপড়) অউর (এবং) মাকান (বাড়ি) (ভুট্টো কর্তৃক ব্যবহৃত একটি সুপরিচিত পিপিপি স্লোগান উল্লেখ করে) প্রদান করা নিয়োগকর্তাদের দায়িত্ব নয়। সর্বশক্তিমান আল্লাহর দায়িত্ব এটি, যিনি তাঁর বান্দাদের জীবিকা প্রদান করেন। আপনার রিযিকের কোন বৃদ্ধি বা হ্রাস তাঁর পক্ষ থেকে আসে। আল্লাহর উপর ভরসা করুন এবং তিনি আপনাকে জীবনে প্রচুর ভাল জিনিস দান করবেন।"
উচ্চ মজুরি, উন্নত কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা, বার্ধক্য সুবিধা এবং দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি এগুলোর কোনটিই প্রতিবাদ ও ধর্মঘট করার জন্য কোনো যৌক্তিক ধরা হতো না। শিল্পপতিদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে ধর্মঘট বা অন্য কোনও ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকলাপের ফলে যে কোনও ধরণের শিল্প অস্থিরতা দমন করা হবে। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং/অথবা বেত্রাঘাত। মুলতানের কলোনি টেক্সটাইল মিলের ব্যবস্থাপনা বিভাগ ধর্মঘটকারী শ্রমিকদের সাথে বিরোধকালীন পুলিশের সহায়তা চাওয়ার প্রেক্ষিতে ১৯৭৮ সালের ২ জানুয়ারি পুলিশ ১৯ জন শ্রমিককে নির্মমভাবে হত্যা করে।
কিসাস ও দিয়াত অধ্যাদেশ ১৯৯০
সম্পাদনা১৯৯০ সালে কিসাস এবং দিয়াত অধ্যাদেশ পাশ হওয়ার সাথে সাথে, কোন অপরাধের শিকার (বা ভুক্তভোগীর এর উত্তরাধিকারী) ব্যক্তি অপরাধীকে ভুক্তভোগী ব্যক্তির ভোগ করা আঘাতের মতোই আঘাত করার অধিকার লাভ করেছে। আইনটি অপরাধীদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত বা তাদের উত্তরাধিকারীদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে অপরাধ থেকে নিজেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ দেয়, এবং এটি শুধু তখনই ঘটে যদি ভুক্তভোগী পরিবার ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হয়।
উপসংহার
সম্পাদনাইসলামীকরণকে কখনো কখনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ইসলামের জিয়ার প্রদত্ত ব্যাখ্যা মৌলবাদ, অস্পষ্টতা এবং পশ্চাদপসরণে ভূমিকা রেঝে থাকতে পারে। ১৯৮৮ সালে জেনারেল জিয়ার মৃত্যুর পর থেকে পাকিস্তানের আইনে অসঙ্গতি ও অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।
অস্থিতিশীলতার অর্থ হলো শাসক দলগুলোর মধ্যকার মতের পার্থক্যের কারণে আইনটি ঘন ঘন পরিবর্তন হচ্ছে বা পরিবর্তনের হুমকিতে রয়েছে। জিয়ার ইসলামী আইনের তিনটি সবচেয়ে সুস্পষ্ট অসঙ্গতি হল:
- যে বিষয়গুলো আইনি নিয়ম এবং সামাজিকভাবে পর্যবেক্ষিত নিয়মের মাঝামাঝি থাকে;
- বিধিবদ্ধ আইনি নিয়ম এবং আদালতে বাস্তবে প্রয়োগ করা নিয়মগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো থাকে (যেমনহাদ স্বীকারোক্তি হিসাবে বাস্তবায়ন করা কঠিন, স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার এবং প্রমাণের কঠোর মানদণ্ড কার্যকর করা কঠিন);
- যে বিষয়গুলো বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক আইনী নিয়মের মধ্যে রয়েছে (যেমন, মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে আদালত কর্তৃক আপস করা হয় কিন্তু জিনা অধ্যাদেশের অধীনে কঠোরভাবে শাস্তি দেওয়া হয়)। এই বৈপরীত্যের আরেকটি উদাহরণ হলো, সংবিধান একদিকে নারীদের সমান মর্যাদার নিশ্চয়তা দিয়েছে কিন্তু অন্যদিকে, ফৌজদারি আইনে তারা ব্যাপকভাবে বৈষম্যের শিকার।