উইকিশৈশব:ইংল্যান্ডের রাজা ও রানি/আরও অ্যাংলো-স্যাক্সন

উইকিশৈশব:ইংল্যান্ডের রাজা ও রানি
দিনেমার আরও অ্যাংলো-স্যাক্সন নর্ম্যানস


এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর (১০৪২ - ১০৬৬) সম্পাদনা

এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর ১০০৪ সাল নাগাদ অক্সফোর্ডশায়ারের ইসলিপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের শেষ অ্যাংলো-স্যাক্সন রাজা এবং হাউস অফ ওয়েসেক্সের শেষ রাজা, তিনি ১০৪২ থেকে শুরু করে ১০৬৬ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত শাসন করেছিলেন। তার রাজত্বকালে ইংল্যান্ডে রাজকীয় ক্ষমতা ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করেছিল, ক্রমাগত সমস্ত ক্ষমতা আঞ্চলিক আর্লদের হাতে চলে যাচ্ছিল।

এডওয়ার্ড এবং তার ভাইদের নিয়ে তাঁদের মা এম্মা নরম্যান্ডিতে চলে গিয়েছিলেন। এম্মা ছিলেন নরম্যান্ডির ডিউক দ্বিতীয় রিচার্ডের বোন। তারা ১০১৩ সালে দিনেমারদের হাতে ইংল্যান্ডের আক্রমণ থেকে বাঁচতে নরম্যান্ডি চলে গিয়েছিলেন। প্রায় পঁচিশ বছরের মত সেখানে নির্বাসনে থেকে, এডওয়ার্ড একটি তীব্র ব্যক্তিগত ধর্মানুরাগ গড়ে তুলেছিলেন এবং নরম্যান্ডি ও সেখানকার নেতাদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। এটি পরবর্তীকালে তার শাসনকে অনেকাংশে প্রভাবিত করেছিল।

১০৩৬ সালে তিনি নিজের ভাই আলফ্রেডের সাথে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন, হ্যারল্ড হেয়ারফুটকে রাজত্ব থেকে স্থানচ্যুত করার চেষ্টায়। কিন্তু এটি ব্যর্থ হয় এবং আলফ্রেড ধরা পড়েন। আর্ল গডউইন একটি লাল গরম শিক দিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। ভাগ্যক্রমে, এডওয়ার্ড নরম্যান্ডিতে পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। ১০৪১ সালে অ্যাংলো-স্যাক্সন লে সমাজ এবং গির্জার আভিজাতরা তাঁকে আমন্ত্রণ জানান হার্থাকানুটের সঙ্গে সহ-শাসক হওয়ার জন্য। ১০৪২ সালের জুন মাসে যখন হার্থাকানুট মারা যান, এডওয়ার্ড এককভাবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১০৪৩ সালের ৩রা এপ্রিল উইনচেস্টারের প্রধান গির্জায় তাঁকে মুকুট পরানো হয়েছিল।

এডওয়ার্ডের শাসনকাল সম্পাদনা

এডওয়ার্ডের রাজত্বকালে শান্তি ও সমৃদ্ধি ছিল, কিন্তু কার্যকরভাবে শাসন করার জন্য এডওয়ার্ডকে তিনজন শক্তিশালী অভিজাতের সাথে চুক্তি করতে হয়েছিল। এর মধ্যে প্রথম ছিলেন ওয়েসেক্সের আর্ল গডউইন, যিনি দৃঢ়ভাবে ওয়েসেক্সকে নিয়ন্ত্রণে করতেন। এই অঞ্চল আগে অ্যাংলো-স্যাক্সন রাজতন্ত্রের কেন্দ্রস্থল ছিল। এছাড়া ছিলেন মার্সিয়ার আর্ল লিওফ্রিক। উত্তর অংশে ছিলেন নর্দামব্রিয়ার আর্ল সিওয়ার্ড।

এডওয়ার্ড নরম্যানদের পছন্দ করতেন, কিন্তু এই হতাশ স্যাক্সন এবং ডেনিশ অভিজাতরা, উভয়েই গডউইনের নেতৃত্বে নরম্যান বিরোধী মতামত জাগিয়ে তুলেছিলেন। গডউইন ১০৪৫ সালে রাজার শ্বশুর হয়েছিলেন। যখন এডওয়ার্ড গডউইনের পছন্দের পরিবর্তে নিজের পছন্দ মত লন্ডনের তৎকালীন বিশপ, নরম্যান রবার্ট জুমিজেসকে ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ হিসাবে নিযুক্ত করেন, তখন এই সম্পর্কে ভাঙন ধরতে শুরু করে। এডওয়ার্ডের আত্মীয়, বোলোনের কাউন্ট ইউস্টেস এবং শহরবাসীর মধ্যে ডোভারে একটি রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়েছিল। গডউইন এই দাঙ্গার অপরাধে শহরের লোকদের শাস্তি দিতে অস্বীকার করার পরে, লিওফ্রিক এবং সিওয়ার্ড রাজা এডওয়ার্ডকে সমর্থন করেছিলেন এবং গডউইন ও তার পরিবারকে ১০৫১ সালের সেপ্টেম্বরে নির্বাসিত করা হয়েছিল। এডওয়ার্ডের রানি, এডগিথ, যিনি গডউইনের কন্যাও ছিলেন, তাঁকে হেরওয়েলে নারীদের জন্য তৈরি একটি মঠে পাঠানো হয়েছিল। গডউইন এক বছর পরে একটি সেনাবাহিনী নিয়ে ফিরে আসেন, এবং রাজাকে বাধ্য করেন তার উপাধি ফিরিয়ে দিতে এবং রাজার নরম্যান উপদেষ্টাদের বিদায় করতে। গডউইন ১০৫৩ সালে মারা যান এবং একজন নরম্যান, রাল্ফ দ্য টিমিডকে হেয়ারফোর্ডশায়ার দেওয়া হয় কিন্তু তার পুত্র হ্যারল্ড গডউইনদের জন্য আরও বৃহত্তর অঞ্চল জয় করেন এবং পরে এডওয়ার্ডের উত্তরাধিকারী হন।

বিবাহ এবং উত্তরাধিকারী সম্পাদনা

এডওয়ার্ড ১০৪৫ সালের ২৩শে জানুয়ারী গডউইনের কন্যা, ওয়েসেক্সের এডিথকে বিবাহ করেছিলেন। তাঁদের কোন সন্তান ছিল না। তার নিকটতম উত্তরাধিকারী ছিলেন তার একজন ভাগ্নে, তারও নাম ছিল এডওয়ার্ড। তিনি ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বটে কিন্তু নিজের জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কাটিয়েছিলেন হাঙ্গেরিতে। তিনি ১০৫৬ সালে নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন এবং পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে মারা যান। তাই এডওয়ার্ড তার ভাগ্নের ছেলে এডগার অ্যাথেলিংকে নিজের উত্তরাধিকারী করেছিলেন, কিন্তু অভিজাতদের মধ্যে এডগারের অনুসারী খুব বেশি ছিল না এবং এর ফলে হ্যারল্ড গডউইনসনকে রাজা ঘোষণা করা হয়।

মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার সম্পাদনা

এডওয়ার্ড ১০৬৬ সালের জানুয়ারিতে মারা যান। পরবর্তী প্ল্যান্টজেনেট রাজাদের অধীনে মধ্যযুগীয় সময়ে তার চারপাশে যে ধর্মানুষ্ঠান বেড়ে উঠেছিল, ইংরেজি ইতিহাসে তার একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়েছিল। এডওয়ার্ড ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে ১০৪৫ থেকে ১০৫০ সালের মধ্যে তাঁকে সমহিত করা হয়েছিল, এবং ১০৬৫ সালের ২৮শে ডিসেম্বর তারিখে সেটি পবিত্র করা হয়েছিল। ১১৫৪ সালে দ্বিতীয় হেনরি যখন রাজা হলেন, তিনি স্যাক্সন এবং নর্মান রাজকীয় বংশকে একত্রিত করেছিলেন। রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসরের বৈধতা জোরদার করতে, তার ধর্মকে প্রচার করা হয়েছিল। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেকে নতুনভাবে নকশা করা হয়েছিল এবং সেখানে এডওয়ার্ডের উপাসনা গৃহ তৈরি করা হয়েছিল। এটি আজও সেখানে রয়েছে। অনেক তদবিরের পরে, ১১৬১ সালে পোপ আলেকজান্ডার তৃতীয় এডওয়ার্ডকে একজন সন্তের মর্যাদা দিয়েছিলেন। যে সময়ে এডওয়ার্ডকে সন্ত বানানো হয়েছিল, সেই সময় দুই ধরনের সন্ত হতেন: শহীদ এবং স্বীকারকারী (কনফেসর)। শহীদরা ছিলেন প্রভুর সেবা করতে গিয়ে মারা যাওয়া মানুষ, এবং কনফেসররা হতেন এমন মানুষ যাঁদের স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হত। যেহেতু এডওয়ার্ডের একটি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল, তাই তাঁকে এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর বলা হয়।

রোমান ক্যাথলিক চার্চ এরপর এডওয়ার্ড দ্য কনফেসরকে রাজাদের সমস্যা সঙ্কুল বিবাহ এবং বিচ্ছিন্ন স্বামী স্ত্রীদের পৃষ্ঠপোষক সন্ত হিসাবে বিবেচনা করে। দ্বিতীয় হেনরির রাজত্ব কালের পর, ১৩৪৮ সাল পর্যন্ত এডওয়ার্ডকে ইংল্যান্ডের পৃষ্ঠপোষক সাধু হিসাবে বিবেচনা করা হত। এর পরে এই ভূমিকায় নির্বাচিতত হন সেন্ট জর্জ। তিনি রাজপরিবারের পৃষ্ঠপোষক সন্ত হিসেবে রয়ে গেছেন।

হ্যারল্ড গডউইনসন (১০৬৬) সম্পাদনা

 
রাজা দ্বিতীয় হ্যারল্ড

হ্যারল্ড গডউইনসন বা ইংল্যাণ্ডের দ্বিতীয় হ্যারল্ড ১০২২ সাল নাগাদ ওয়েসেক্সে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১০৬৬ সালের ৫ই জানুয়ারি থেকে ১৪ই অক্টোবর পর্যন্ত শাসন করেছিলেন, এর পরে তিনি হেস্টিংসের যুদ্ধে নিহত হন। হ্যারল্ডের পিতা ছিলেন গডউইন, যিনি ছিলেন ওয়েসেক্সের শক্তিশালী আর্ল। গডউইন দুবার বিবাহ করেছিলেন এবং এটি ছিল তার দ্বিতীয় বিয়ে। এই বিবাহের ফলে হ্যারল্ড, টোস্টিগ এবং এডিথের জন্ম হয়েছিল।

১০৪৫ সালে হ্যারল্ডকে পূর্ব অ্যাঙ্গলিয়ার আর্ল করা হয়েছিল, এবং তারপর ১০৫১ সালে তিনি তার পিতা গডউইনের সাথে নির্বাসনে যান। এক বছর পর তিনি গডউইনকে তার জমিদারি ফিরে পেতে সাহায্য করেন। যখন গডউইন ১০৫৩ সালে মারা যান, হ্যারল্ড উত্তরাধিকারসূত্রে ওয়েসেক্সের আর্ল হয়েছিলেন। আর্লের স্থলাভিষিক্ত হয়ে, তিনি রাজার পর ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় শক্তিশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। ১০৫৮ সালে হ্যারল্ড হেয়ারফোর্ডেরও আর্ল হন, এবং তিনি এডওয়ার্ড দ্য কনফেসরের পুনরুদ্ধারকৃত স্যাক্সন রাজতন্ত্রের অধীনে ইংল্যান্ডে ক্রমবর্ধমান নরম্যান প্রভাবের বিরোধিতার কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে তার প্রয়াত পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। তারপর ১০৬২ এবং ১০৬৩ সালে হ্যারল্ড সাফল্যের সাথে গুইনেডের শাসক গ্রুফিড এপি লিওয়েলিনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। গ্রুফিড সমগ্র ওয়েলস জয় করেছিলেন। ১০৬৪ সাল নাগাদ, হ্যারল্ড অ্যালডিথকে বিবাহ করেন। অ্যালডিথ ছিলেন মার্সিয়ার আর্লের কন্যা এবং গ্রুফিড এপি লিওয়েলিনের বিধবা স্ত্রী। তাঁদের দুটি পুত্র হয়ে ছিল, যাদের নাম হ্যারল্ড এবং আলফ। হ্যারল্ড এবং তার উপপত্নী এডজিথের বেশ কিছু অবৈধ সন্তান ছিল।

১০৬৪ সালে, নরম্যান্ডিতে হ্যারল্ডের জাহাজডুবি হয়েছিল এবং তাঁকে ডিউক উইলিয়ামের রাজসভায় স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। উইলিয়াম নিজেকে নিঃসন্তান এডওয়ার্ড দ্য কনফেসারের উত্তরসূরি বলে মনে করেছিলেন, এবং ইংল্যান্ডের ভবিষ্যত রাজা হিসেবে উইলিয়ামকে সমর্থন করার জন্য হ্যারল্ডকে শপথ নিতে বাধ্য করেন। ১০৬৫ সালে হ্যারল্ড তার ভাই টোস্টিগ কর্তৃক আরোপিত করের বিরুদ্ধে নর্দামব্রিয়ান বিদ্রোহকে সমর্থন করেন এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন নর্থামব্রিয়ার আর্ল মরকার। এডওয়ার্ডের উত্তরসূরি হিসেবে এটি তার গ্রহণযোগ্যতাকে শক্তিশালী করে তুলেছিল, কিন্তু তার নিজের পরিবারকে বিভক্ত করে দিয়েছিল। টোস্টিগ নরওয়ের রাজা হারাল্ড হার্দ্রাদার সাথে জোট বাঁধেন। ১০৬৬ সালের জানুয়ারিতে, এডওয়ার্ডের মৃত্যুর পর, হ্যারল্ডকে উইটেনগেমোট রাজা ঘোষণা করেছিলেন। অ্যাংলো-স্যাক্সন আইনের অধীনে উইটেনগেমোট রাজত্ব প্রকাশের চূড়ান্ত কর্তৃত্বের অধিকারী ছিলেন।

হ্যারল্ডের রাজত্বকাল সম্পাদনা

রাজা হিসেবে হ্যারল্ডের অবস্থান ছিল অনেক বিতর্কিত। তার রাজত্ব প্রথমে নরওয়ের হারাল্ড হার্দ্রাদা এবং তারপরে নরম্যান্ডির ডিউক উইলিয়াম দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। হ্যারল্ড তার ভাই টোস্টিগকে রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ দিতে চেয়েছিলেন। টোস্টিগ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন হ্যারল্ড নরওয়ের রাজাকে কি দেবেন। হ্যারল্ডের প্রত্যুত্তর ছিল, হান্টিংডনের হেনরির মতে, "ছয় ফুট জমি বা তার যতটুকু বেশি প্রয়োজন ততটাই, যেহেতু তিনি বেশিরভাগ পুরুষের চেয়ে লম্বা"। ১০৬৬ সালের সেপ্টেম্বরে বর্তমানের যে ইয়র্কশায়ার অঞ্চল, সেই অঞ্চল আক্রমণ করে, ২০শে সেপ্টেম্বর, ইয়র্কের কাছে ফুলফোর্ডের যুদ্ধে, হারাল্ড হার্দ্রাদা এবং টোস্টিগ ইংরেজ আর্লদ্বয় মার্সিয়ার এডউইন এবং নর্থামব্রিয়ার মরকারকে পরাজিত করেছিলেন। কিন্তু পাঁচ দিন পর স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের যুদ্ধে হ্যারল্ডের সেনাবাহিনীর কাছে তারা পরাজিত ও নিহত হন। হ্যারল্ড এরপর তার সেনাবাহিনীকে নিয়ে ২৪০ মাইল পদযাত্রা করেন উইলিয়ামের মুখোমুখি হওয়ার জন্য, উইলিয়াম ২৮শে সেপ্টেম্বর সাসেক্সে প্রায় ৭,০০০ সৈন্যকে নামিয়ে ছিলেন। হ্যারল্ড হেস্টিংসের কাছে তার বাহিনী নিয়ে অবস্থান করেন, এবং ১৪ই অক্টোবর বর্তমান শহরের কাছে হেস্টিংসের যুদ্ধে দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। হ্যারল্ড নিহত হন এবং তার বাহিনী পরাজিত হয়। প্রথা অনুযায়ী, হ্যারল্ডের চোখে তীর মেরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, কিন্তু বায়ো টেপেস্ট্রিতে চিত্রিত যে মৃতকে এইভাবে দেখানো হয়েছে তার পরিচয় জানা যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, তিনি এই পদ্ধতিতে মারা গিয়েছিলেন, নাকি তরবারির আঘাতে নিহত হয়েছিলেন, তা অজানা।

এডগার অ্যাথেলিং (১০৬৬) সম্পাদনা

এডগার অ্যাথেলিং ১০৫১ সালের কাছাকাছি হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি এডগার দ্য আউট ল নামেও পরিচিত ছিলেন। অ্যাংলো-স্যাক্সন নামের অ্যাথেলিং এর অর্থ "উচ্চ রক্তের মানুষ, প্রধান, রাজপুত্র" এবং এই নামটি রাজার পুত্রদের বোঝাতে ব্যবহৃত হত। এডগার ছিলেন এডওয়ার্ড দ্য এক্সাইলের একমাত্র পুত্র, ইংরেজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী এবং রাজা দ্বিতীয় এডমন্ড আয়রনসাইডের নাতি। ১০৫৭ সালে এডগারের পিতার মৃত্যুর পর, এডগারকে রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর দ্বারা স্পষ্টভাবে উত্তরাধিকারী হিসাবে মনোনীত করা হয়েছিল। এডগার তার বোন মার্গারেট এবং ক্রিস্টিনার সাথে একসাথে এডওয়ার্ডের দরবারে প্রতিপালিত হয়েছিলেন। কিন্তু, ১০৬৬ সালের জানুয়ারিতে রাজার মৃত্যুর সময় তিনি খুব ছোট ছিলেন, এত ছোট যে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করা তার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। সেজন্য হ্যারল্ডের মৃত্যুর পর রাজা হিসেবে তার নির্বাচন আক্রমণকারী নর্মান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীকী চিহ্ন ছাড়া আর কিছু ছিল না। দ্বিতীয় হ্যারল্ডের মৃত্যুর পর তাঁকে রাজা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু কখনো ইংল্যাণ্ডের রাজমুকুট পরানো হয় নি। এডগার মূলত আর্চবিশপ স্টিগ্যান্ড এবং দুই আর্ল, মার্সিয়ার এডউইন এবং নর্দামব্রিয়ার মরকারের উপর নির্ভর করেছিলেন সমর্থন পাওয়ার জন্য। কিন্তু উইটান (একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান) তাঁকে রাজা ঘোষণা করার কয়েক দিনের মধ্যেই যখন এই শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তখন এডগার বার্খামস্টেডে উইলিয়ামের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হন, সময়টা হল ১০৬৬ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে বা ডিসেম্বরের শুরুর দিকে।

উইলিয়াম এডগারের সাথে ভাল আচরণ করেছিলেন। রাজনৈতিক সুবিধা আছে দেখে উইলিয়াম তাঁকে নিজের হেফাজতে রেখে দেন এবং অবশেষে তাঁকে নরম্যান্ডিতে নিজের রাজসভায় ফিরিয়ে নিয়ে যান। ১০৬৮ সালে এডগার দুই আর্ল এডউইন এবং মরকারের বিদ্রোহে যোগদান করেছিলেন কিন্তু তিনি পরাজিত হন এবং স্কটল্যান্ডের তৃতীয় ম্যালকমের রাজসভায় পালিয়ে যান। পরের বছর ম্যালকম এডগারের বোন মার্গারেটকে বিয়ে করেন এবং ইংরেজ সিংহাসন দাবি করার প্রচেষ্টায় এডগারকে সমর্থন করতে সম্মত হন। বিনিময়ে এডগার ম্যালকমের বোনকে বিবাহ করেন, তিনিও ছিলেন আরেক মার্গারেট। ডেনমার্কের রাজা এবং ক্যানিউটের ভাইপো সোয়েন এস্ট্রিডসন বিশ্বাস করতেন এডগারই ইংল্যান্ডের বৈধ রাজা। তাই তাঁদের লক্ষ্যের মধ্যে একটা মিল তৈরি হয়েছিল। তাঁদের সম্মিলিত বাহিনী ১০৬৯ সালে ইংল্যান্ড আক্রমণ করে, এবং তারা ইয়র্ক দখল করেন। উইলিয়াম উত্তর দিকে অগ্রসর হন, এবং যেতে যেতে তিনি জমি ধ্বংস ও লুণ্ঠন করতে থাকেন। তিনি দিনেমারদের অর্থ প্রদান করেন চলে যাওয়ার জন্য এবং এডগার স্কটল্যান্ডে পালিয়ে আসেন। ১০৭২ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। এরপর উইলিয়াম ম্যালকমকে একটি শান্তি চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য করেন যার জন্য এডগারকে নির্বাসিত করতে হয়। এডগার অবশেষে ১০৭৪ সালে উইলিয়ামের সাথে শান্তি স্থাপন করেন, কিন্তু ইংল্যান্ডের সিংহাসন পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন তিনি পুরোপুরি ছেড়ে দেননি। ১০৯১ সালে তিনি দ্বিতীয় উইলিয়ামের বিরুদ্ধে নরম্যান্ডির ডিউক রবার্টকে সমর্থন করেছিলেন এবং আবার পরাজিত হয়ে তাঁকে স্কটল্যান্ডে পালিয়ে যেতে হয়। তিনি তৃতীয় ডোনাল্ডকে উৎখাত করে স্কটিশ সিংহাসন লাভে তার ভাগ্নে এডগারকেও সমর্থন করেছিলেন।

১০৯৮ সাল নাগাদ তিনি কনস্টান্টিনোপলে চলে যান, সেখানে গিয়ে তিনি হয়তো বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের ভারাঙ্গিয়ান প্রহরী দলে যোগ দিয়েছিলেন। সেই বছরের শেষের দিকে সম্রাট প্রথম অ্যালেক্সিয়াস তাঁকে একটি নৌবহর দিয়েছিলেন যাতে তিনি প্রথম ক্রুসেডে সাহায্য করতে পারেন, এবং অ্যান্টিওক অবরোধের সময় এডগার ক্রুসেডারদের শক্তিবৃদ্ধি করার জন্য পৌঁছে ছিলেন। ১১০৬ সালে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম হেনরির বিরুদ্ধে ডিউক রবার্টের হয়ে যুদ্ধ করার সময় তাঁকে বন্দী করা হয়েছিল। তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন এবং সেখানে হেনরি তাঁকে ক্ষমা করে দেন, এরপর তিনি হার্টফোর্ডশায়ারে তার জমিদারিতে গিয়ে অবসর গ্রহণ করেন। তার ভাগ্নি এডিথকে (নাম পরিবর্তন করে মাটিল্ডা হয়েছিলেন) ১১০০ সালে প্রথম হেনরি বিবাহ করেছিলেন। মনে করা হয় এডগার হয়তো জীবনের শেষ দিকে স্কটল্যান্ড রাজ্যে ফিরে এসেছিলেন, সম্ভবত ১১২০ সালের দিকে, এবং ১১২৫ সালেও তিনি জীবিত ছিলেন, কিন্তু তার পরেই হয়তো তার মৃত্যু হয়েছিলো, সত্তরের কোঠায় পৌঁছে।