উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/পেন্সিল

এটি কে আবিষ্কার করেন? সম্পাদনা

পেন্সিলের সবচেয়ে আদিম ধরনটি স্টাইলাস ছিল বলে মনে করা হয়। এটি ছিল একটি পাতলা ধাতব কাঠি, যা সীসা থেকে তৈরি করা হত এবং রোমান সাম্রাজ্যের সময়ে কাঠের ফ্রেমে থাকা মোমের স্তরে দাগ কাটার জন্য বা প্যাপিরাসে (প্যাপিরাস হল বর্তমান কাগজের পুরাতন সংস্করণ) দাগ করার জন্য ব্যবহৃত হত। কাগজ ও পেন্সিল প্রাচীন মিশরীয় এবং রোমানরা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করত। পেন্সিল শব্দটি ল্যাটিন শব্দ পেনসিলাস থেকে এসেছে যার অর্থ "ছোট লেজ"।

এটা কি দিয়ে তৈরি হয়? সম্পাদনা

 
এইচবি গ্রাফাইট পেন্সিল

প্রতিটি পেন্সিলে এই দুটি অংশ রয়েছে -

পিপা: পিপা সাধারণত কাঠের তৈরি হয়। কখনো কখনো মাটি, পুনর্ব্যবহৃত কাগজ বা পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের তৈরি হয়। এটি পেন্সিলের বৃহত্তম, সবচেয়ে ভারী অংশ এবং‌ পেন্সিলটিকে ধরে রাখার জন্য এটি কার্যকরী।

সীসা: "সীসা", এর এমন নামকরণ করা হয়েছে কারণ যখন পেন্সিল প্রথম উদ্ভাবিত হয়েছিল, তখন এই অংশটি মৌলিক ধাতু সীসা দিয়ে তৈরি হতো। এখন এই অংশটি গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি হয়। গ্রাফাইট হলো মৌলিক কার্বনের একটি রূপভেদ যেখানে কার্বন পরমাণুগুলি আণুবীক্ষণিক পাতলা শীটে সাজানো থাকে। গ্রাফাইট এ্য সাথে কাগজের পৃষ্ঠের মধ্যে ঘর্ষণের ফলে গ্রাফাইটের ছোট ছোট গুঁড়ো বেরিয়ে আসে এবং কাগজের পৃষ্ঠের সাথে লেগে যায়। দাগ প্রতিরোধ করার জন্য গ্রাফাইটকে অল্প পরিমাণে কাদামাটির সাথে মিশ্রিত করা হয় যাতে এটি শক্ত হয় এবং এটির সাহায্যে কাজ করা সহজ হয়।

কিছু পেন্সিলে অন্যান্য অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্যও রয়েছে:

ইরেজার: ইরেজার নিজে হাতে এবার যন্ত্রের সাহায্যে পেন্সিল ব্যবহারকারীকে পেন্সিল দাঁড়া হয়ে যাওয়া অযাচিত কোন দাগকে উক্ত পৃষ্ঠায় ঘষে সরিয়ে দিতে সাহায্য করে। অনেক ক্ষেত্রে একটি ইরেজার একটি ধাতব কলার দিয়ে পেন্সিলের পিপার সাথে সংযুক্ত থাকে, যাকে ফেরুল বলে। এই ডিভাইসটি প্রথম ৩০ মার্চ ১৮৫৮ সালে হাইমেন লিপম্যান দ্বারা প্রবর্তন হয়। একটি পেন্সিলের শেষে একটি ইরেজার সংযুক্ত করার জন্য এই পদ্ধতিটি পেটেন্ট তখন পেটেন্ট পায়। লিপম্যান‌ ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে এক লক্ষ ডলারের বিনিময়ে তার পেটেন্ট জোসেফ রেকেন্ডরফারের কাছে বেচে দেন। যিনি পেটেন্ট এর নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য পেন্সিল প্রস্তুতকারক ফেবারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ আদালত এই পেটেন্টকে অকার্যকর করে।

 
ব্যবহৃত, খোলা স্ট্যাডটলার শার্পনার

শার্পনার: যখন একটি পেন্সিল দিয়ে কাগজে কাটা দাগ ভোঁতা হয়ে যায় তখন একটি শার্পনার পেন্সিল ব্যবহারকারীকে তাদের পেন্সিলটিকে আরও তীক্ষ্ণ করতে সাহায্য করে। এটি পেন্সিলটিকে ছোট করে ফেলে।

প্রকার সম্পাদনা

কিছু ধরণের পেন্সিল হল:

গ্রাফাইট পেন্সিল: এগুলি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। এগুলি কাদামাটি এবং গ্রাফাইটের মিশ্রণে তৈরি।

যান্ত্রিক পেন্সিল: এই পেন্সিলগুলি যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে একটি ছোট খোলার মাধ্যমে সীসাকে ধাক্কা দেয়। এগুলি জনপ্রিয় কারণ তাদের তীক্ষ্ণ করার প্রয়োজন নেই এবং সীসা পরিবর্তনযোগ্য।

পপ-এ-পয়েন্ট পেন্সিল: এই ধরনের পেন্সিল অ-তীক্ষ্ণকরণযোগ্য পেন্সিল নামেও পরিচিত। এই প্রকারে পেন্সিলের শরীরে অনেক ধারালো বিন্দুর গ্রাফাইট একটার পর একটা স্তরে স্তরে রাখা হয়। যখন একটি বিন্দু ভোঁতা হয়ে যায়, এটি সরিয়ে ফেলা হয় এবং পেন্সিলের শেষ ঢোকানো হয়। এর ফলে নিচ থেকে পরবর্তী তীক্ষ্ণ গ্রাফাইট বেরিয়ে আসে।

এটা কিভাবে ব্যবহার করা হয়? সম্পাদনা

পেন্সিল বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে, কিছু কিছু সদর্থক, বাকিগুলো নয়। সুস্পষ্ট ব্যবহার বলতে প্রিয় বন্ধুদের, শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষককে চিঠি লিখতে ব্যবহার করা হয়। গ্রাফাইট, তবে, সাধারণত কাগজটিকে ভাঁজ করার সময় বরং অগোছালো ও নোংরা করে তোলে এবং এটা অবশ্যই কাউকে কোনো বার্তা দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি নয়। পেন্সিলের আরেকটি ব্যবহার হল জনপ্রিয় খেলা "গেম অব স্ল্যাপ", এটি এমন একটি খেলা যা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা আজও খেলে। খেলার উদ্দেশ্য হল নিজের পেন্সিলের ডগা দিয়ে প্রতিপক্ষের পেন্সিলকে পরপর আঘাত করা। যার পেন্সিল প্রথম ভেঙে যাবে সে হেরে যাবে।

পেন্সিল কখনও কখনও একটি চিবানোর বস্তুর ভূমিকা পালন করে। বেশিরভাগ মানুষ যখন বিচলিত হয়ে পড়েন বা মাথায় কোন বুদ্ধি আসে না বা কোন কিছু মনে পড়ে না তখন তারা পেন্সিল কামড় দেন (বা অনুরূপ বস্তু, নখ না থাকাও একটি সাধারণ পছন্দ)। এইভাবে বেশিরভাগ মানুষই সহজে তাদের পেন্সিলগুলি শনাক্ত এবং ব্যক্তিগতকৃত করতে পারেন। এটিকে বস্তুটিকে এক ধরণের সুরক্ষা প্রদান হিসাবেও বিবেচনা করা যেতে পারে, যেহেতু অন্য কোনও ব্যক্তি সম্ভবত ভবিষ্যতে সেই পেন্সিলটি ব্যবহার করতে আপত্তি করবে (এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে এর ফলে পেন্সিলের বিশেষ কোনো ক্ষতি হয় না কারণ পিপের কাঠ বেশ কঠিন)।

এইভাবে, পেন্সিলটি অনেকের কাছে অনেক সময়ে একটি ভাল বন্ধু হয়ে কাজে এসেছে। তবে দুঃখজনকভাবে, শিক্ষা লাভের নতুন পদ্ধতির আবির্ভাব হওয়ার সাথে সাথে পেন্সিলের মর্যাদা এবং ব্যবহার কমে গেছে, কিছু ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সবাই এখন কম্পিউটারের স্ক্রিনে বার্তা লেখে, পেন্সিল ছুলতে কখনও শার্পনারের কাছে আসতে হয় না। যখন নতুন কিছু আসবে তখন কীবোর্ডের কী হবে সেটাই ভাবনার বিষয়।

এটা কতটা ক্ষতিকারক? সম্পাদনা

পেন্সিলগুলিতে ব্যবহৃত গ্রাফাইটটি মূলত সীসা বলে মনে করা হতো। সীসা শব্দটি এখনও পেন্সিলের মূল দাগ কাটার অংশ বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যদিও এটি আসলে তা নয়।

পেন্সিলের "সীসা" আসলে গ্রাফাইট এবং ভুলবশত খেয়ে ফেললেও এটি বিপজ্জনক নয়। কিন্তু যদি পেন্সিলে খোঁচা দিতে দিতে কেটে ফেলার ঘটনা ঘটে, তাহলে সেক্ষেত্রে জীবাণু মারার জন্য পারক্সাইড দিয়ে আপনার ক্ষত ধুয়ে ফেলুন।