বাড়ির ছাদের উপর একটি পায়রা (কবুতর), কোলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

কবুতর বা পায়রা বা কপোত বা পারাবত এক প্রকারের জনপ্রিয় গৃহপালিত পাখি। এর মাংস মনুষ্যখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রাচীন কালে কবুতরের মাধ্যমে চিঠি আদান-প্রদান করা হত। কবুতর ওড়ানোর প্রতিযোগিতা প্রাচীন কাল থেকে অদ্যাবধি প্রচলিত আছে। গৃহপালিত কবুতরের বৈজ্ঞানিক নাম কলাম্বা লিভিয়া ডোমোস্টিকা। সব গৃহপালিত কবুতরের উদ্ভব বুনো কবুতর বা কলাম্বা লিভিয়া থেকে।

পৃথিবীতে প্রায় ২০০ জাতের কবুতর পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রায় ৩০ প্রকার কবুতর রয়েছে। বাংলাদেশের সর্বত্র এসকল কবুতর রয়েছে। বাংলাদেশের জলবায়ু এবং বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত্র কবুতর পালনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। পূর্বে কবুতরকে সংবাদবাহক, খেলার পাখি হিসাবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্বারের পুষ্টি সরবরাহ, সমৃদ্ধি, শোভাবর্ধনকারী এবং বিকল্প আয়ের উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হচেছ। এদের সুষ্ঠু পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সঠিকভাবে প্রতিপালন করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা যায়। কবুতর প্রতিপালন এখন শুধু শখ ও বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং তা এখন একটি লাভজনক ব্যবসা হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। কবুতর বাড়ি ও পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা ছাড়াও অল্প খরচে এবং অল্প ঝামেলায় প্রতিপালন করা যায়। বাংলাদেশে কবুতরের জাতের মধ্যে গিরিবাজ খুবই জনপ্রিয়

কবুতরের শারীরবৃত্তিক তথ্যাদি

সম্পাদনা

দেহের তাপমাত্রা ৩৮.৮ - ৪০.০ সে.

দৈহিক ওজন-

(ক) হালকা জাতঃ ৪০০-৪৫০ গ্রাম

(খ) ভারী জাতঃ ৪৫০-৫০০ গ্রাম


পানি পান-

(ক) শীতকালঃ ৩০-৬০ মিলি প্রতিদিন

(খ) গ্রীষ্মকালঃ ৬০-১০০ মিলি প্রতিদিন

(গ) পূর্ণবয়স্ক একটি কবুতরের ডানায় সাধারনত ১০টি পালক থাকে, ঐ পালকগুলিকে পর বলা হয়। (পর কবুতরের বয়স নির্ণয়েও সাহায্য করে।)

খাদ্য গ্রহণ ৩০-৬০ গ্রাম প্রতিদিন (গড়) ডিম ফুটানোর সময়কাল = ১৭-১৮ দিন।

কবুতরের খাবার[] হছে গম, চাউল, কাউন, ধান, খুদ, চিনা সরিষা, ডাবলি, রেজা, বাজরা, বিভিন্ন বীজ ইত্যাদি খায়। মুরগির জন্য তৈরি খাবারও কবুতর খায়। খাবারের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি দিতে হয়। ২×২ ফুট স্থানের মধ্যে দুটি কবুতর থাকতে পারে। কবুতরের বাসস্থান কুকুর, বিড়াল, বেজি ইত্যাদি প্রাণী থেকে দূরে রাখতে হয়। কবুতরের ঘরে যাতে পানি না আসে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়।কবুতরের ঘর সব সময় পরিষ্কার রাখা বাঞ্ছনীয়। বাচ্চাগুলো নিজে খাদ্য গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্ত্রী এবং পুরুষ কবুতর উভয়ে দানাদার খাদ্যের সাথে দুধ মিশিয়ে ঠোঁট দিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ায়। কবুতরের জন্য তৈরিকৃত খাদ্য শর্করা, আমিষ, খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, চর্বি এবং খনিজ লবণসম্পন্ন সুষম খাদ্য হতে হবে। কবুতর ম্যাশ বা পাউডার খাদ্যের তুলনায় দানাদার জাতীয় খাদ্য বেশি পছন্দ করে। ছোট আকারের কবুতরের জন্য ২০-৩০ গ্রাম, মাঝারি আকারের জন্য ৩৫-৫০ গ্রাম এবং বড় আকারের জন্য ৫০-৬০ গ্রাম খাদ্য প্রতিদিন দিতে হবে। দানাদার জাতীয় খাদ্যের মধ্যে গম, ধান, ভুট্টা, সরগম, ওট শতকরা ৬০ ভাগ এবং লেগুমিনাস বা ডাল জাতীয় খাদ্যের মধ্যে সরিষা, খেসারী, মাটিকলাই শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ সরবরাহ করতে হবে। কবুতরের ভিটামিন সররাহের জন্য বাজারে প্রাপ্ত ভিটামিন ছাড়া সবুজ শাকসবজি, কচি ঘাস সরবরাহ করা প্রয়োজন। প্রতিদিন ২ বার খাদ্য সরবরাহ করা ভাল। মাঝে মাঝে পাথর, ইটের কণা (গ্রিট) এবং কাঁচা হলুদের টুকরা দেয়া উচিত কারণ এ গ্রিট পাকস্থলিতে খাবার ভাঙতে এবং হলুদ পাকস্থলী পরিষ্কার বা জীবাণুমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

কবুতরের ডিম দেয়ার সময় গ্রিট মিশ্রণ বা খনিজ মিশ্রণ, ডিম এবং ডিমের খোসা তৈরী এবং ভাল হ্যাচাবিলিটির জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এই খনিজ মিশ্রণ বোন মিল (সিদ্ধ) ৫%, ঝিনুক ৪০%, লাইম স্টোন ৩৫%, গ্রাউন্ড লাইম স্টোন ৫%, লবণ ৪%, চারকোল ১০% এবং শিয়ান রেড ১% তৈরী করতে হবে।

বিভিন্ন প্রজাতির কবুতরের খাবারও ভিন্ন ভিন্ন। গোল্লা প্রজাতির কবুতর সাধারণত সব ধরনের শস্যদানাই খায়। আর গিরিবাজ কবুতরে খায় ধান, গম, সরিষা, তিসি, ভুট্টা, কুসুম ফুলের বিচি ইত্যাদি। ফেন্সি কবুতরের খাবার হচ্ছে ডাবি্ল বুট, ছোলা বুট, গম, সূর্যমুখীর বিচি, কুসুম ফুলের বিচি ইত্যাদি। হোমারের খাবার একেবারেই ভিন্ন। ১৭ পদের শস্যদানা পরিমাণমতো মিশিয়ে এদের খাবার তৈরি করা হয়। এ খাবারে অন্তর্ভুক্ত থাকে বাদাম, ডাবি্ল বুট, ছোলা বুট, সূর্যমুখীর বিচি, কুসুম ফুলের বিচি, তিসি, বাজরা, চিনা, মুগ ডাল, মাসকলাই, মসুর, হেলেন ডাল ইত্যাদি। যখন হোমার কবুতরকে প্রতিযোগিতার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তখন এই খাবারের পাশাপাশি ধানের সঙ্গে মাখন বা ঘি মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর উৎপাদনের জন্য নিম্নে প্রদত্ত খাদ্য মিশ্রণ ব্যবহার করা উত্তম।

খাদ্য উপাদান পরিমাণ (%) ভুট্টা ৩৫ % মটর ২০ % গম ৩০ % ঝিনুকের গুঁড়া/চুনাপাথর চূর্ণ/অস্থিচূর্ণ ০৭% ভিটামিন/এমাইনো এসিড য়োজপ্রিমিক্স ০৭% লবণ ০১ % মোট= ১০০%

পানি সরবরাহ- প্রতিদিন গভীর বা খাদ জাতীয় পানির পাত্র ভালভাবে পরিষ্কার করে ৩ বার পরিষ্কার পরিচছন্ন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা উচিত। দুই সপ্তাহ পর পর পটাশ মিশ্রিত পানি সরবরাহ করলে পাকস্থলি বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে।

এমাইনো এসিড- আমিষ বিভিন্ন প্রকার এমাইনো এসিড সরবরাহ করে যা দেহ গঠনের জন্য অত্যাবশ্যক। যে সব এমাইনো এসিড পাখির দেহে সংশ্লেষণ হয় না তাকে অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড বলে। সুতরাং পাখিকে এমাইনো এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য (শুটকি মাছের গুঁড়া, সরিষা, তিল ও চীনাবাদামের খৈল) সরবরাহ করতে হবে।

 
বাড়ির দেয়ালে বসে রোদ পোহাচ্ছে একদল কবুতর

জীবনকাল, প্রজনন

সম্পাদনা

হাঁস-মুরগির মতো যে কোনো মর্দা কবুতর মাদী কবুতরের সাথে সহজে জোড়া বাঁধে না। এদেরকে এক সাথে এক সপ্তাহ রাখলে জোড়া বাঁধে। মুরগীর ন্যায় কবুতরের জননতন্ত্রে ডিম উৎপন্ন হয়। তবে ডিম্বাশয়ে একসাথে সাধারণত মাত্র দু'টি ফলিকুল তৈরি হয়। এ কারণে প্রতিটি মাদী কবুতর দু'টি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার ৪০-৪৪ ঘণ্টা পূর্বে ডিম্ব স্খলন হয় এবং ডিম পাড়ার কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা পূর্বে তা নিষিক্ত হয়। অর্থাৎ যে ১৬-২০ ঘণ্টা পর্যন্ত ডিম ডিম্বনালীতে থাকে সে সময়ে তা নিষিক্ত হয়ে থাকে। ডিম পাড়ার পর থেকে মর্দা ও মাদী উভয় কবুতর পর্যায়ক্রমে ডিমে তা দিতে শুরু করে। মাদী কবুতর প্রায় বিকেল থেকে শুরু করে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ডিমে তা দেয় এবং বাকী সময়টুকু অর্থাৎ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মর্দা কবুতর তা দিয়ে থাকে। তা দেয়ার পঞ্চম দিনেই ডিম পরীক্ষা করে উর্বর বা অনুর্বর ডিম চেনা যায়। বাতির সামনে ধরলে উর্বর ডিমের ভিতর রক্তনালী দেখা যায়। কিন্তু অনুর্বর ডিমের ক্ষেত্রে ডিমের ভিতর স্বচ্ছ দেখাবে। সাধারণত ডিম পাড়ার ১৭-১৮ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এভাবে একটি মাদী কবুতর সাধারণত ১২ মাসে ১০-১২ জোড়া বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে। জন্মের প্রথম দিন থেকে ২৬ দিন বয়স পর্যন্ত কবুতরের বাচ্চার ক্রমবর্ধমান অবস্থা থাকে। প্রথমে সারা দেহ হলুদ পাতলা বর্ণের লোম দ্বারা আবৃত থাকে। এই সময় নাক ও কানের ছিদ্র বেশ বড় দেখায়। প্রায় ৪-৫ দিন পর বাচ্চার চোখ খোলে বা ফুটে। পনের দিনে সমস্ত শরীর পালকে ছেয়ে যায়। প্রায় ১৯-২০ দিনে দু'টো ডানা এবং লেজ পূর্ণতা লাভ করে ও ঠোঁট স্বাভাবিক হয়। এই ভাবে ২৬-২৮ দিনে কবুতরের বাচ্চা পূর্ণতা লাভ করে। কবুতর সাধারণত ২০-৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। জঙ্গলী কবুতর ৫ বছর এবং গৃহপালিত কবুতর ১০-১৫ বছর বাঁচে। ৫-৬ মাস বয়স হলে স্ত্রী কবুতর ডিম দেয়। গড়ে প্রতি মাসে এক বার ডিম দেয়। বাচ্চা ২৫/২৬ দিন বয়স হলে খাবার উপযুক্ত হয়। এ সময় বাচ্চা সরিয়ে ফেললে মা কবুতর নতুন করে ডিম দিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

বাচ্চার জন্য পিজিয়ন মিল্ক

সম্পাদনা

কবুতরের খাদ্যথলিতে পিজিয়ন মিল্ক উৎপাদিত হয়। এই খাদ্যথলিতে দুইটি অংশ বা লোব (ষড়নব) থাকে। ডিমে তা দিতে বসার প্রায় অষ্টমদিন থেকে "পিজিয়ন মিল্ক" উৎপাদনের প্রস্তুতি শুরু হয়। এন্টিরিত্তর পিটুইটারী গ্রন্থির প্রোল্যাকটিন (Prolactin) হরমোনের প্রভাবে এই ' পিজিয়ন মিল্ক' উৎপন্ন হয়। এ কারণে কবুতর ছানার জন্য কোনো বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। কারণ, প্রায় ৭ দিন পর্যন্ত ছানা তার মাতা-পিতার কাছ থেকে প্রকৃতিপ্রদত্ত খাবার পেয়ে থাকে। এটিকে পিজিয়ন মিল্ক বা কবুতরের দুধ বলা হয়। পিজিয়ন মিল্ক হলো পৌষ্টিক স্তরের কোষের মধ্যে চর্বির গুটিকা (globules of fat) যা পিতা মাতা উভয়ের খাদ্য থলিতে যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ হয়। পিজিয়ন মিল্ক কবুতর ছানার জন্য একটি আদর্শ খাবার। এতে ৭০% পানি, ১৭.৫% আমিষ, ১০% চর্বি এবং ২.৫% বিভিন্ন খনিজ পদার্থ থাকে। মাতাপিতা উভয় কবুতরের খাদ্য থলির অভ্যন্তরীণ আবরণ থেকে পিজিয়ন মিল্ক উৎপন্ন হয়। কবুতরের জিহ্বা লম্বা ও সরু। মুখ গহ্বরের নিচের অংশ বেশ প্রশস্ত হয় যা ছানাকে খাওয়ানোর উপযোগী। মাতা ও পিতা কবুতর ছানার মুখের মধ্যে মুখ প্রবেশ করিয়ে খাবার সরাসরি অন্ননালিতে পৌঁছে দেয়।

রোগব্যাধি

সম্পাদনা

পাখি হিসেবে মুরগি বা হাঁসের রোগগুলো এর মধ্যে দেখা দিয়ে থাকে। সাধারণত: ককসিডিওসিস বা পাতলা চুনযুক্ত পায়খানা, সালমোনেলা, রানিক্ষেত পি এমভি/নিউ ক্যাসল ডিজিজ, কৃমি, ক্যাংকার বা মুখে ঘা, ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজ, সি আর ডি, পক্স, বার্ড ফ্লু ইত্যাদি রোগ হতে দেখা যায়। প্রায় সব রোগের জন্যই বিভিন্ন কোম্পানির ঔষধ পাওয়া যায়। তাছাড়া পশু সম্পদ গবেষণাগার হতে রানিক্ষেত, পক্স ইত্যাদির টিকা বা প্রতিষেধক পাওয়া যায়।

কবুতরের বিভিন্ন জাত

সম্পাদনা

উত্তম নিষ্কাশন, পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং বায়ুর চলাচল আছে এরূপ উঁচু এবং বালুময় মাটিতে কবুতরের ঘর করতে হবে, যা খামারির আবাসস্থল থেকে ২০০-৩০০ ফুট দূরে এবং দক্ষিণমুখী হওয়া উচিত। মাটি থেকে ঘরের উচ্চতা ২০-২৪ ফুট এবং খাঁচার উচ্চতা ৮-১০ফুট হওয়া ভাল। একটি খামারের জন্য ৩০-৪০ জোড়া কবুতর আদর্শ। এরূপ ঘরের মাপ হবে ৯ ফুট ৮.৫ ফুট। কবুতরের খোপ ২-৩ তলা বিশিষ্ট করা যায়। এরূপ খোপের আয়তন প্রতিজোড়া ছোট আকারের কবুতরের জন্য ৩০ সে. মি.x ৩০ সে.মি.x ২০ সে.মি. এবং বড় আকারের কবুতরের জন্য ৫০ সে. মি.x ৫৫ সে.মি. x৩০ সে.মি.। ঘর স্বল্প খরচে সহজে তৈরী এবং স্থানান্তরযোগ্য যা কাঠ, টিন, বাঁশ, খড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরী করা যায়। খামারের ভিতরে নরম, শুষ্ক খড়-কুটা রেখে দিলে তারা ঠোঁটে করে নিয়ে নিজেরাই বাসা তৈরি করে নেয়। ডিম পাড়ার বাসা তৈরীর জন্য ধানের খড়, শুকনো ঘাস, কচি ঘাসের ডগাজাতীয় দ্রব্যাদি উত্তম। খোপের ভিতর মাটির সরা বসিয়ে রাখলে কবুতর সরাতে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা ফুটায়।

বর্তমানে অনেক শৌখিন ব্যক্তি খাঁচায় বিভিন্ন ধরনের নজরকাড়া কবুতর [] পুষে থাকছেন। এই শৌখিন কবুতর যে কত সুন্দর হতে পারে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। খাঁচার আকার বা সাইজ কি হবে তা নির্ভর করে আপনি কি ধরনের কবুতর পালতে চাচ্ছেন তার উপর। যদি আপনি শুধু গিরিবাজ পালতে চান, তাহলে ১৪*১৪*১৬ ইঞ্চি হলে ভাল। আর যদি শৌখিন কবুতর পালতে চান তাহলে সাধারণত আদর্শ মাপ হল- ২৪*২৪*১৮ ইঞ্চি বা ২৪*২৪*২০ ইঞ্চি হলে আরও ভাল।

জাত বা ধরন গুলো কোন নির্দিষ্ট কিছু নয়। বিভিন্ন রং, বৈশিষ্ট্য, গুণাগুণ, চোখ ইত্যাদি এর উপর ভিত্তি করে নামকরণ বা জাত ঠিক করা হয়। এছাড়া ক্রস ব্রিডিং -এর মাধ্যমেও নতুন জাত তৈরি হয়ে থাকে। বহুবিচিত্র ধরনের নানা জাতের কবুতরের মধ্যে নিম্নে প্রধান কয়েকটি জাত সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

  • হোমার: হোমিং পিজিয়ন থেকে নামকরণ হয়েছে হোমার। উড়াল প্রতিযোগিতায় ব্যবহার হয় বলে রেসার হোমার বলা হয়। কবুতর দিয়ে রেস খেলা পৃথিবীর একটি প্রাচীনতম শৌখিন খেলা।বেলজিয়াম,নেদারল্যান্ড,জার্মানি,ইংল্যান্ড,আমেরিকা,বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বহু দেশে রেসিং ক্লাব রয়েছে।ক্লাব থেকে কবুতরের রেস অনুষ্ঠিত হয়।বর্তমানে রেসিং ফলাফল নির্ধারিত হয় ইলেকট্রনিক ট্র্যাকিং সিস্টেম (ইটিএস) মেশিন দিয়ে।
  • গোলা (দেশি কবুতর): এই জাতের কবুতরের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ। আমাদের দেশে এ জাতের কবুতর প্রচুর দেখা যায় এবং মাংসের জন্য এটার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। ঘরের আশেপাশে খোপ নির্মাণ করলে এরা আপনাআপনি এখানে এসে বসবাস করে। এদের বর্ণ বিভিন্ন সেডযুক্ত ধূসর এবং বারড-ব্লু রংয়ের। এদের চোখের আইরিস গাঢ় লাল বর্ণের এবং পায়ের রং লাল বর্ণের হয়।
  • গোলী: গোলা জাতের কবুতর থেকে গোলী জাতের কবুতর ভিন্ন প্রকৃতির। এ জাতের কবুতর পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের কলকাতায় বেশ জনপ্রিয় ছিল। এদের লেজের নিচে পাখার পালক থাকে। ঠোঁট ছোট হয় এবং পায়ে লোম থাকে না। এদের বর্ণ সাদার মধ্যে বিভিন্ন ছোপযুক্ত।
  • ফ্যানটেল/লাক্ষা: শৌখিন, লেজগুলো দেখতে ময়ূরের মত ছড়ানো। ভারত থেকে এসেছে। এটি অতি প্রাচীন জাতের কবুতর। ফ্যানটেল জাতের কবুতরের উৎপত্তি ভারতে। এ জাতের কবুতর লেজের পালক পাখার মত মেলে দিতে পারে বলে এদেরকে ফ্যানটেল বলা হয়। এদের রং মূলত সাদা তবে কালো, নীল ও হলুদ বর্ণের ফ্যানটেল সৃষ্টিও সম্ভব হয়েছে। এদের লেজের পালক বড় হয় ও উপরের দিকে থাকে। পা পালক দ্বারা আবৃত থাকে। এ জাতের কবুতর প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয় এবং দেশ-বিদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
  • লাহোরী/সিরাজী (শৌখিন): লাহোর নামে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে এই কবুতরটি সিরাজী কবুতর হিসেবে পরিচিত। এদের উৎপত্তিস্থল লাহোর। এদের চোখের চারদিক থেকে শুরু করে গলার সম্মুখভাগ, বুক, পেট, নিতম্ব, পা ও লেজের পালক সম্পূর্ণ সাদা হয় এবং মাথা থেকে শুরু করে গলার পিছন দিক এবং পাখা রঙিন হয়। সাধারণত কালো, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালি ইত্যাদি বর্ণের কবুতর দেখা যায়।বর্তমানে সিরাজী ও লাহোরী আলাদা ব্রিড এদের শরীরের শেপ একটু আলাদা হয়।
  • কিং: এ জাতের কবুতরের মধ্যে হোয়াইট কিং এবং সিলভার কিং আমেরিকাসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিং জাতের কবুতর প্রদর্শনী এবং স্কোয়াব উৎপাদনে ব্যবহার হয়। এছাড়াও রয়েছে ব্লু রেড এবং ইয়েলো কিং। এই জাতের কবুতর মূলত প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয়।
  • প্রিন্স
  • গিরিবাজ : পাক-ভারতীয় সাদা চোখ ও কালো মণী বিশিষ্ট কবুতর গিরিবাজ নামে পরিচিত। এদের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ। গিরিবাজ কবুতর প্রধানত তিন টাইপের হাই ফ্লাইয়ার/টিপলার,লো ফ্লাইয়ার ও কালারিং টাইপের হয়। হাই ফ্লাইয়ার গিরিবাজ অনেক উচুতে দীর্ঘ সময় সময় উড়তে পারে।পৃথিবীতে এই জাতের কবুতর ফ্লাইং টুর্নামেন্টে ২২ ঘণ্টা উড়ার রেকর্ড আছে। হাই ফ্লাইয়ার কবুতর দিয়ে উড়ানোর খেলা হয়ে থাকে।এই খেলা টুর্নামেন্ট আকারে হয়। টুর্নামেন্ট এ যার কবুতর দীর্ঘ সময় উড়ে সে বিজয়ী হয়। আমেরিকা,লন্ডন,ভারত,পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এসব ফ্লাইং টুর্নামেন্ট হয়।উপমহাদেশে যারা এসব হাই ফ্লাইয়ার কবুতর নিয়ে চর্চা করে তাদের ওস্তাদ বলা হয়। বাংলাদেশের ঢাকা,খুলনা,চট্টগ্রাম,রাজশাহী, ময়মনসিংহ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে গিরিবাজ কবুতরের ফ্লাইং চর্চা হয়। হাই ফ্লাইং জাতের মধ্যে পাকিস্তানি টেডি,শিয়ালকোটি,কাসুরি,গোল্ডেন,কামাগার,থার্টি ফাইভ সহ দেশিও কয়েকটি জাত বিখ্যাত।(তথ্যগুলি কবুতর বিশেষজ্ঞ হিমেল তরফদারের কবুতর পরিচিতি বই এবং ব্লগ থেকে সংগৃহীত) আমাদের দেশে এদের যথেষ্ট কদর রয়েছে। বিভিন্ন গিরিবাজের মধ্যে অন্যতম:
    • বাঘা
    • চুইনা: সমস্ত শরীর সাদা কিন্তু সমস্ত চোখ কালো নয়।
    • কাগজি: সমস্ত শরীর সাদা কিন্তু সমস্ত চোখ কালো।
    • চিলা, সাফ চিলা
    • গোররা (শরীর সাদা কালো মিশ্রণ, যেমন মাথা সাদা, পিঠ কালো, ডানা সাদা), সিলভার গোররা, কালো গোররা।
    • সোয়া চন্দন
    • ঘিয়া-সুল্লি, লাল-সুল্লি
    • জাক/কালো গলা
    • কালদম, লালদম, মুসালদম (সমস্ত শরীর কালো কিন্তু দম বা লেজগুলো সাদা)।
    • খাকি, লাল খাকি
    • খয়রা/লাল গলা/লালপেটি
    • সবজি
    • সবুজ গলা
    • লাল গলা
  • পটার: গলার নিচটা ফুটবলের মতো।
  • মুকি: এ জাতের কবুতরের গলা রাজহাঁসের মত পিছন দিকে বাঁকানো এবং কম্পমান অবস্থায় থাকে। মুকি জাতের কবুতরের উৎপত্তি ভারতে বলে ধারণা করা হয়। এদের উভয় ডানার তিনটি উড়বার উপযোগী পালক সাদা হয় যা অন্য কোনো কবুতরে দেখা যায় না। এ জাতের কবুতরের মাথা সাদা, বুক খুব একটা চওড়া নয় তবে উঁচু ও বেশ কিছুটা সামনের দিকে বাড়ানো থাকে। সাদা, কালো এবং নীল বর্ণের এই কবুতরের পায়ে লোম থাকে। এই কবুতর সব দেশেই পাওয়া যায়।[][]
  • ফ্রিল ব্যাক
  • জ্যাকোবিন: এই কবুতরের মাথার পালক ঘাড় অবধি ছড়ানো থাকে যা বিশেষ ধরনের মস্তকাবরণের মত দেখায়। এদের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে এদের আদি জন্মস্থান ভারত বলেই ধারণা করা হয়। এই কবুতর সাধারণত সাদা, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালি বর্ণের হয়। এদের দেহ বেশ লম্বাটে। চোখ মুক্তার মত সাদা হয়।
  • স্ট্রেসার
  • মডেনা
  • লোটান/নোটন/রোলিং : লোটান/নোটন কবুতরকে রোলিং কবুতরও বলা হয়। গিরিবাজ কবুতর যেমন শূন্যের উপর ডিগবাজি খায়, তেমন লোটন কবুতর মাটির উপর ডিগবাজি খায়। সাদা বর্ণের এই কবুতরের ঘোরানো ঝুঁটি রয়েছে। এদের চোখ গাঢ় পিঙ্গল বর্ণের এবং পা লোমযুক্ত।
  • লান
  • সর্ট ফেস

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. https://web.archive.org/web/20200609112912/https://www.kobutor.net/2020/06/kobutor-khabar-pigeons.html
  2. https://web.archive.org/web/20200609112923/https://www.kobutor.net/2020/06/kobutor-pigeons-jath.html fancy pigeon
  3. [১]
  4. টেমপ্লেট:ওয়েব আর্কাইভ