উইকিশৈশব:বাদ্যযন্ত্র/বাঁশি
বাঁশি এক ধরনের সুষির অর্থাৎ ফুৎকার দিয়ে বাজানো যায় এমন বাদ্যযন্ত্র। কাঠের তৈরি রিড বিশিষ্ট বায়ুচালিত বাদ্যযন্ত্রের বাইরে গিয়ে বাঁশি একটি এয়ারোফোন বা রিড বিহীন বায়ুচালিত যন্ত্র বলা যেতে পারে।
বাংলায় বাঁশিকে মুরালি, মোহন বাঁশি, বংশী অথবা বাঁশরিও বলা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাঁশি তৈরিতে তরলা বাঁশ ব্যবহার করা হয়। বাঁশি নামটিও এসেছে বাঁশ থেকে। এছাড়াও ষ্টিলের, তামার, পিতলের, রূপার এমনকি সোনার পাইপ দিয়েও বাঁশি তৈরী করা যেতে পারে। এই প্রাচীন এবং মনহরানো বাদ্যযন্ত্রের গায়ে সাতটি ছিদ্র থাকে, অবশ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাঁচ বা আটটির উপস্থিতিও দেখা যায়। যে নল বা পাইপটি দিয়ে বাঁশি তৈরী করা হয় তার একপাশ সম্পূর্ণ আটকে বায়ুরোধী করে দেওয়া হয়। বাঁশের তৈরী বাঁশিতে গিট বা গিরা একপাশকে বায়ুরোধী করার কাজে ব্যবহার করা হয়। বন্ধ এবং খোলা প্রান্তের মাঝামাঝিতে ছিদ্রগুলো করা হয়। যে ছিদ্রটি বন্ধ প্রান্তের ঠিক কাছাকাছি থাকে সেটা দিয়ে কৌশলে ফু দিতে হয় এবং বাকি ছ'টি ছিদ্র ডান হাতের মধ্যবর্তী তিনটি এবং বাম হাতের মধ্যবর্তী তিনটি আঙ্গুল দিয়ে কখনো আটকে কখনো ছেড়ে দিয়ে সুর তুলতে হয়। বেশকিছু বাঁশিতে দুই প্রান্ত খোলা থাকে, একপ্রান্তে ফুৎকার করতে হয় এবং উপর দিকে থাকা ফুটো গুলির মাধ্যমে ওঠে।
বাঁশির কত প্রকার?
সম্পাদনাবাংলাদেশে সহ ভারত নেপালে বিভিন্ন রকম বাঁশীর দেখা যায়।
তার মাঝে বহুল পরিচিত বাঁশিগুলো হলো [১]
১- সরল বাঁশি
২-আড় বাঁশি
৩- টিপরাই বাঁশি
৪- সানাই বাঁশি
৫- ভিন বাঁশি
৬- মহন বাঁশি
বাঁশির ইতিহাস
সম্পাদনাঐতিহাসিক কার্ট স্যাচের মতে ক্রস ফ্লুট বা সংস্কৃত বংশী ছিল প্রাচীন ভারতের বায়ু চালিত বাদ্যযন্ত্রের অভূতপূর্ব উদাহরণ।[২]
এখন অবধি প্রাপ্ত বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো বাঁশীটি অপ্রাপ্তবয়স্ক গুহাবাসী ভাল্লুকের ফিমার অস্থির দ্বারা নির্মিত। স্লোভেনিয়ার প্রাপ্ত এই ৪৩,০০০ বছর পুরনো বাঁশিটিতে ছিল চারটি গর্ত। যদিও এই তথ্য নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।[৩][৪] ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে আরেকটি বাঁশি উদ্ধার হয় যা ছিল ৩৫,০০০ বছর পুরনো।[৫] পাঁচটি ফুটো বিশিষ্ট এই বাঁশিটির মুখের দিকের অংশ ছিল ইংরেজি V- আকৃতি শকুনের ডানার হাড় দ্বারা নির্মিত।[৬] এর পরবর্তী আবিষ্কারটি বিশ্বে কোন বাদ্যযন্ত্রের অস্তিত্বের সর্বপ্রথম উদাহরণ,[৭] দক্ষিণ জার্মানিতে একটি গুহায় ৪৩,০০০ বছরের পুরনো বাঁশি পাওয়া গিয়েছে।
বাঁশির স্বরগ্রাম
সম্পাদনাবাঁশিতে সংগীতের সাতটি স্বর (সা রে গা মা পা ধা নি) এবং পাঁচটি বিকৃত স্বর (ঋ জ্ঞ ক্ষ দ ণ), সর্বমোট ১২ টি স্বরই পাওয়া যায়।
বাঁশিতে সুর পরিবর্তন (টিউনিং) করা যায় না, তাই একজন বংশীবাদক কে ১২ টি স্কেলের ১২টি বাঁশিই সাথে রাখতে হয়।
বাঁশিতে
- উদারা সপ্তক এর পা ধা নি
- মুদারা সপ্তক এর সবগুলো স্বর
- তারা সপ্তক এর সা রা গা মা পা পাওয়া যায়
পা্ ধা্ নি্ সা রে গা মা পা ধা নি র্সা র্রে র্গা র্মা র্পা
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ মৃণাল দাশ গুপ্ত (১ জানুয়ারি ২০১৩)। সহজ পদ্ধতির বাঁশী শিক্ষা। অশোক ধর, গণেশ এন্ড কোং; ৯৮, হাজারী লেইন, চট্টগ্রাম।
- ↑ Sachs, Kurt (১৯৪০)। The History of Musical Instruments। New York: W. W. Norton & Company। পৃষ্ঠা 158–159, 180।
- ↑ Tenenbaum, David (জুন ২০০০)। "Neanderthal jam"। The Why Files। University of Wisconsin, Board of Regents। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০০৬।
- ↑ Flute History, UCLA. Retrieved June 2007.
- ↑ Ghosh, Pallab. (25 June 2009) BBC: 'Oldest musical instrument' found. BBC News. Retrieved on 2013-08-10.
- ↑ Nicholas J. Conard; Maria Malina; Susanne C. Münzel (আগস্ট ২০০৯)। "New Flutes Document the Earliest Musical Tradition in Southwestern Germany"। Nature। 460 (7256): 737–40। doi:10.1038/nature08169। PMID 19553935। আইএসএসএন 0028-0836। বিবকোড:2009Natur.460..737C। অজানা প্যারামিটার
|s2cid=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "'Oldest musical instrument' found"। BBC news। ২৫ জুন ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০০৯।