আ.১১শ-১২শ শতকের পাল সাম্রাজ্যকালীন ৩ টি সুচিত্রিত বামাবর্তী শঙ্খ, যেগুলোর সর্ববামেরটির গা জুড়ে বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর প্রতিমূর্তি খোদাই করা হয়েছে রূপালী বর্ণচ্ছটাযোগে ।

শঙ্খ হলো একজাতীয় বড় আকৃতির সামুদ্রিক শামুক।[১]। এর খোল দিয়ে অলঙ্কার, বাদ্যযন্ত্র, ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এদের অন্যান্য নামের মধ্যে রয়েছে শাঁখ, শাখ, কম্বু প্রভৃতি[১]। শঙ্খের বৈশিষ্ট্য হলো অভ্যন্তরমুখী নিয়মিত প্যাঁচ। এটি কম বুঝি বর্গের অন্তর্গত প্রাণী। বাড়িতে যে শাঁখ আমরা ব্যবহার করে থাকি, তা তৈরি করা হয় কম বুঝি প্রাণীটির মাংস দেহ তার ঘর থেকে বের করে পরিষ্কার করে।

শঙ্খ শব্দের উৎপত্তি সম্পাদনা

শঙ্খধ্বনি একটি বিশেষ্য পদ যার অর্থ শঙ্খের শব্দ। শঙ্খ শব্দটি এসেছে দুটি সংস্কৃত শব্দ 'শাম' ও 'খাম' থেকে। 'শাম' শব্দের অর্থ শুভ এবং 'খাম' শব্দের অর্থ জল। এই শব্দের মিলনে সৃষ্টি হয়েছে 'শঙ্খম' শব্দটি।

শঙ্খের ব্যবহার সম্পাদনা

 
ক্যালিফোর্নিয়ায় সি ফুড মার্কেটে শঙ্খের সারি

১) শঙ্খের খোলস বাড়ি অলংকরণের কাজে ব্যবহার করা হয়। ছোট বা অপরিণত আকৃতির সংখ্যা মালার মতো পরপর গেঁথে টাঙিয়ে রাখা যেতে পারে আবার বড় আকৃতির শঙ্খের গায়ে বিভিন্ন কাজ করে বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়।

২) ধ্রুপদী মায়া সভ্যতার শিল্পী সঙ্গে ব্যবহার করা হতো রং বা কালি ধরে রাখার জন্য তবে বিত্তবান পরিবারে এর ব্যবহার দেখার মত ছিল।

৩) কিছু কিছু দেশে আভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য শঙ্খ মুদ্রা ব্যবহার করা হয়।

৪) গ্রিনাডায় মৎস্য বিক্রেতাদের বিশেষ সংকেত প্রদানের জন্য শঙ্খ ব্যবহার করা হয়।

ধরন সম্পাদনা

রং এর উপর ভিত্তি করে সাধারণত তিন প্রকার হয়, সাদা রঙের শঙ্খ, সামান্য লালচে শঙ্খ এবং গাঢ় বর্ণের শঙ্খ। এছাড়াও সংঘের বিভিন্ন আকার রয়েছে। বেশিরভাগ শঙ্খ বাজানো গেলেও কিছু কিছু শঙ্খ বাজানো যায় না। আবর্ত বা প্যাচের উপর ভিত্তি করে শঙ্খ তিন প্রকার হয় যথা বামাবর্তী শঙ্খ, দক্ষিণাবর্তী শঙ্খ এবং মধ্যাবর্তী শঙ্খ।

ধর্মীয় গুরুত্ব সম্পাদনা

 
হিন্দু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে শঙ্খের ব্যবহার

হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে শঙ্খ ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। হিন্দু সধবা রমণীরা হাতে শঙ্খ দিয়ে তৈরী "শাখা" পরেন। বিভিন্ন পূজা-পার্বণ এবং শুভ কাজের শুরুতে বিশেষভাবে কাঁটা শঙ্খের বাঁশি বাজানো হয়। হিন্দু ধর্মে শঙ্খের ধ্বনি পবিত্র বলে ধরা হয়। পূজা অর্চনা, পুত্রসন্তানের জন্ম, অন্নপ্রাশন, শ্মশানযাত্রা ইত্যাদি সময়ে শঙ্খধ্বনি করা হয়। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পঞ্চপান্ডব ও শ্রীকৃষ্ণের ঠোঁটে শঙ্খধ্বনি ধ্বনিত হয়। দেবী দুর্গার হাতেও শঙ্খ দেখা যায়।[২]

হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যুদ্ধ আরম্ভ এবং যুদ্ধের সমাপ্তি বোঝাতে শঙ্খের ব্যবহার দেখা গিয়েছে। এছাড়া যে কোনো শুভ কাজে শঙ্খের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হিন্দুধর্ম ছাড়াও বৌদ্ধ ধর্মে শঙ্খের বিপুল ব্যবহার রয়েছে। বাদ্যযন্ত্র ছাড়াও ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে এটিকে তুলে ধরা হয়। এছাড়াও প্রাচীন পেরু এবং আজটেক সভ্যতায় সংক্ষেপে ব্যবহার প্রমাণিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ১.০ ১.১ http://www.ebangladictionary.com/24070টেমপ্লেট:অকার্যকর সংযোগ
  2. যার যা ধর্ম, প্রথমা প্রকাশিনি, হাবিবুর রহমান পৃষ্ঠা ৩১০