উইকিশৈশব:বিখ্যাত ভারতীয়/রামকৃষ্ণ পরমহংস
রামকৃষ্ণ পরমহংস ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার এক বিশিষ্ট ধর্মগুরু। তার শিষ্যেরা তাঁকে মনে করতেন ঈশ্বরের অবতার। এমনকি আজও তার ভক্তেরা তাঁকে তা-ই মনে করেন।
রামকৃষ্ণ পরমহংসের পূর্বাশ্রমের নাম ছিল গদাধর চট্টোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কামারপুকুর গ্রামের এক ধর্মপ্রাণ দরিদ্র ব্রাহ্মণের ঘরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়েছিলেন গদাধর। আর তারপর তাঁদের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে, ভাগ্যান্বেষণে গদাধরকে সঙ্গে নিয়ে তার এক দাদা চলে আসেন কলকাতায়। এই সময় কলকাতার অদূরে দক্ষিণেশ্বরে রানি রাসমণি তার বিখ্যাত কালীমন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মন্দিরেই পুরোহিতের দায়িত্ব পান গদাধরের দাদা। তার মৃত্যু হলে গদাধরই মন্দিরের পুরোহিত হন। এই সময় ঈশ্বর দর্শনের বাসনা তার মনে তীব্র হয়ে ওঠে। ১৮৫৯ সালে সারদা দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়। কিন্তু সংসার ধর্ম পালনে তার মনে তীব্র অনীহা জন্মে। কেবলমাত্র একটি মতে সাধনা করেও তৃপ্তি পান না তিনি। ইচ্ছে জাগে, অন্যান্য মতগুলি কেমন, তা জানতেও। দক্ষিণেশ্বরে বসেই তন্ত্র, বৈষ্ণব ও অদ্বৈত বেদান্ত মতে সাধনা করেন। সন্ন্যাস জীবনে তার নাম হয় রামকৃষ্ণ পরমহংস। এমনকী নিজের স্ত্রীকে দেবী রূপেও পূজা করেন রামকৃষ্ণ। তার স্ত্রী সারদা দেবী তার থেকে ধর্মপথে চলার শিক্ষা পান। পরে ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্মের মূল নীতিগুলিও শিক্ষা করেন রামকৃষ্ণ। ১৮৭০-এর দশকে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার এক অগ্রণী ধর্মগুরু। কলকাতার শিক্ষিত ভদ্রলোক সমাজের বহু মানুষ তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পনেরো বছর একটানা ধর্মশিক্ষা দেওয়ার পর ১৮৮৫ সালের এপ্রিল মাসে তার গলায় ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ে। এই রোগে আক্রান্ত হয়েই পরের বছর প্রয়াণ ঘটে তার।
মহাপ্রয়াণের পর রামকৃষ্ণ পরমহংসের ষোলোজন শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দের নেতৃত্বে একটি সন্ন্যাসী সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সংঘই বর্তমানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন নামে পরিচিত। এই মিশনের অসংখ্য শাখা দেশে ও বিদেশে বর্তমান। রামকৃষ্ণ পরমহংস তার জীবন সমর্পণ করেছিলেন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে। তার ঈশ্বর-প্রেম দেশে দেশে যুগে যুগে মানুষকে ঈশ্বরপথে চলার অনুপ্রেরণা জোগায়।