উইকিশৈশব:মজার বৈজ্ঞানিক গবেষণা/রঙ্গিন ফুল তৈরি

"অন্যান্য প্রাণীদের মতোই, উদ্ভিদের প্রাণ আছে"

এই কথাটির প্রথম প্রমাণ করে গেছেন একজন ভারতীয় বিশিষ্ট বাঙালি বিজ্ঞানী 'জগদীশ চন্দ্র বসু'

দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে আন্তঃপ্রজননের ফলে উদ্ভূত নতুন প্রজন্মকে ওই দুটি ভিন্ন প্রজাতির সংকর (হাইব্রিড বা ক্রসব্রিড) বলে। সংকর করার প্রক্রিয়াটিকে সংকরায়ন বলে।

উদ্ভিদেরা দিনের বেলায় তার মুল রোম দিয়ে মাটির নিচে থেকে জল এবং খনিজ পদার্থ শোষণ করে, বাতাসের কার্বনডাই অক্সাইড গ্যাসকে(Co2) শোষণ করে অক্সিজেন(O2) বাতাসে ত্যাগ করে প্রয়োজনীয় খাদ্য তৈরি করে জালিকার মাধ্যমে পাতায়, অগ্রমূলে এবং কাণ্ডে পৌঁছায়, তাদের জীবনের বৃদ্ধি ঘটায়। আর পরিমাণ মত পত্ররন্ধ দ্বাড়া বাষ্পোমোচন ঘটায়। কিছু উদ্ভিদ আছে যারা কম আলোক সক্রিয় এবং কিছু উদ্ভিদ আছে যারা বেশি আলোক সক্রিয়। উষ্ণতার ভিত্তিতেও উদ্ভিদের প্রকারভেদ করা হয়। কম আলোয় বা অন্ধকারে এবং কম উষ্ণতায় থাকা উদ্ভিদের অধিকমাত্রায় ক্লোরোফিল থাকে, সাদা ফুল দেখা যায়।


ফুলের পরাগধানী থেকে পরাগরেণুর একই ফুলে অথবা একই প্রজাতির অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়াকে পরাগায়ন বলে

পরাগায়ন ঘটার ফলে তৈরি হয় নতুন ধরনের ফুলের। যেমন: সাদা সন্ধ্যামালতি ফুল এবং লাল সন্ধ্যমালতি ফুলের সংকরায়ণের ফলে সৃষ্ট হয় গোলাপী সন্ধ্যামালতি ফুল (অসম্পূর্ণ প্রকটতার লক্ষণ)

ঠিক একই ভাবে পরাগায়ন ঘটে থাকে। দুই প্রকারের হয় পরাগাযোগ। যথা: ইতরপরাগযোগ এবং স্বপরাগযোগ।

একই উদ্ভিদের একটি ফুল থেকে অন্য ফুলে পরাগরেণু স্থানান্তর হওয়া ঘটনাকে স্বপরাগযোগ বলা হয়।

একটি প্রজাতির উদ্ভিদের ফুল থেকে অন্য প্রজাতির একটি ফুলের পরাগ যোগ হওয়ার ঘটনা কি ইতরপরাগযোগ বলা হয়।

ইতর পরাগযোগ: ১) বায়ুপরাগী ফুল, ২) জলপরাগী ফুল, ৩) পতঙ্গপরাগী ফুল এবং মানুষ দ্বারা পরাগ যোগ হয়ে থাকে।

১) বায়ুর মাধ্যমে একটি প্রজাতির উদ্ভিদের ফুল থেকে অন্য প্রজাতির একটি ফুলের পরাগযোগ হওয়া ফুলটিকে বলে বায়ুপরাগী ফুল। যেমন: শিমুল, ধান, কদম ইত্যাদি।

২) জলের মাধ্যমে পরাগরেণুর পরাগযোগ হওয়া ফুলটিকে বলে জলপরাগী ফুল । যেমন: পতাশ্যাওলা, পাতাঝাঝি ইত্যাদি।

৩) পতঙ্গের পায়ের মাধ্যমে পরাগরেণু স্থানান্তর হওয়া বা মানুষের মাধ্যমে পরাগরেণুর এক ফুল থেকে অন্য প্রজাতির একটি ফুলে স্থানান্তরিত হয়ে যে ফুল সৃষ্টি হয় তাকে পতঙ্গপরাগী ফুল বলে। যেমন: জবা ফুল, সন্ধ্যামালতি ফুল ইত্যাদি।

৩) দিনের বেলায় পতঙ্গপরাগী ফুলগুলিতে পতঙ্গরা আকৃষ্ট হয়ে ফুলে বসে এবং ফুলের পরাগরেণু তাদের পায়ে থেকে গিয়ে অন্য ফুলের মধ্যে পড়ে।


১) বায়ুপরাগী ফুলের উদ্ভিদের পরাগরেণু বায়ুর মাধ্যমে অন্য প্রজাতির কোন ফুলের মধ্যে গিয়ে পড়ে।


২) জলপরাগী ফুলের পরাগযোগ জলের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

৩) দিনের বেলায় পতঙ্গপরাগী ফুলগুলিতে পতঙ্গরা আকৃষ্ট হয়ে ফুলে বসে এবং ফুলের পরাগরেণু তাদের পায়ে থেকে গিয়ে অন্য ফুলের মধ্যে পড়ে।

দিনের বেলা ফুলের উজ্জ্বলতা, রং, গন্ধ কীটপতঙ্গদের আকৃষ্ট করে। কিন্তু রাতের বেলায় ফুলের রং, উজ্জ্বলতার প্রোয়োজন হয় না । রাতের বেলায় অধিক ক্লোরোফিল যুক্ত ফুল গাছের অধিক গন্ধ যুক্ত সাদা ফুল হয়। যেমন: সাদা শিউলি, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, বেলি, জুঁই, ইত্যাদি। এই ফুলের গন্ধ রাতের বেলায় পতঙ্গদের আকৃষ্ট করে,ফলে পরাগরেণুর স্থানান্তর ঘটে পরাগযোগ ঘটে।

মনুষ্য পদ্ধতিতে নতুন ফুলের সৃষ্টি:

প্রথমত, একটি প্রজাতির সুস্থ-সবল, রোগমুক্ত ফুল গাছের একটি স্ত্রী ফুলের ফুল ফোটার পূবে ফুলের পাপড়ি কেটে ফেলতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ফুলের গর্ভ মূণ্ড চিহ্নিত করে বাকি পুংদন্ডগুলি কেটে বাদ দিতে হবে।

তৃতীয়ত, অন্য একটি প্রজাতির সুস্থ সবল রোগ মুক্ত ফুল গাছের পুং ফুল চিহ্নিত করতে হবে এবং ফুলটি ফোটার পরে পরাগরেণু সরু স্বচ্ছ তুলির সাহায্য আগের প্রজাতির ফুলের গর্ভ মুন্ডে স্থাপন করতে হবে।

চতুর্থত, পরাগরেণু স্থাপন করার পর ওই ফুলের গর্বমুন্ডু সহ ফুলের কান্ড পর্যন্ত একটি কাপড়ের থলির মধ্যে বন্ধ করতে হবে। যাতে কোন পতঙ্গ দ্বারা বা বাহ্যিক পদ্ধতিতে কোন সংকরায়ন না ঘটে।

পঞ্চমত, সংকরায়ন করা ফুলটিকে চিহ্নিত করে রাখতে হবে। কিছু সপ্তাহ পর ফুলটির বীজ পূর্ণ প্রাপ্ত হলে তা সংগ্রহ করতে হবে।

ষষ্ঠমত, পূর্ণ প্রাপ্ত বীজটি আবার মাটিতে স্থাপন করতে হবে এবং চর্চা করে যেতে হবে অঙ্কুরোদগম থেকে গাছ হওয়া পর্যন্ত।

সপ্তমত, গাছটির একসংকরায়নের মাধ্যমে অসম্পূর্ণ প্রকটতা অর্থাৎ মিশ্র রঙের ফুলের সৃষ্টি হবে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সাদা সন্ধ্যামালতি এবং লাল সন্ধ্যামালতি ফুলের সংকরায়নের ফলে সৃষ্ট ফুল গোলাপি সন্ধ্যামালতি ফুলের সৃষ্টি হয় যা অসম্পূর্ণ প্রকটতার উদাহরণ।

১) ক্লোরোফিল ও ২) ক্রোমোফিল

১) ক্রোরোফিল সবুজ বর্নের জন্য দায়ী। ২) অন্যান্য বর্নের জন্য দায়ী হল ক্রোমোফিল।


"অন্যান্য প্রাণীদের মতোই, উদ্ভিদের প্রাণ আছে"

উক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে আম গাছ, টগর ফুলের গাছ, জবা ফুলের গাছ এবং আরো বিভিন্ন গাছের সংকরায়ন করা হয়েছে। এই সংকরায়ন পদ্ধতিকে হাইবিডাইজেশন বলা হয়।