মস্তিষ্ক হল সেই অঙ্গ যেটি আমাদের মস্তক বা মাথার ভেতরে থাকে। এটি আমাদের নিজেদের এবং আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, ব্যক্তিত্ব এবং চেতনাকে তৈরি করে। কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ দেখে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। কিন্তু মস্তিষ্ক কি করে ওপরে বলা কাজগুলি এত বিস্তারিতভাবে করে তা আজকের মত এত উন্নত দিনেও একটি বড় রহস্য হয়ে আছে, এখনো পরিষ্কার করে বোঝা যায়নি।

মস্তিষ্ক দেখতে কেমন? সম্পাদনা

 
খালি চোখে দেখতে পাওয়া: একটি মানুষের মস্তিষ্ক।
 
আণুবীক্ষণিক দৃশ্য: একটি স্নায়ু কোষ বা নিউরন।

মস্তিষ্ক আমাদের মাথায় হাড় দিয়ে তৈরি খুলির ভেতরে থাকে এবং বেশ কয়েকটি খণ্ড (গোলাকার আকৃতির অংশ যা পরস্পর সংযুক্ত) দ্বারা গঠিত। একটি মস্তিষ্কের প্রস্থচ্ছেদ করে দেখা গেছে তাতে একটি বহিস্থ অংশ আছে, যেটি হল ধূসর অংশ (ধূসর মস্তিষ্ক) এবং একটি অভ্যন্তরীণ অংশ আছে যেটি হল শ্বেত অংশ (শ্বেত মস্তিষ্ক)।

মস্তিষ্ক মূলত স্নায়ু কোষ বা নিউরন (এমন কোষ যে বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণ করতে পারে) এবং সহায়ক কোষ (গ্লিয়া) দ্বারা গঠিত। অন্যান্য সমস্ত অঙ্গের মতই, এখানে রক্তবাহী নালী এবং সংক্রমণ-মুক্তকারী (ইমিউন) কোষও রয়েছে। স্নায়ু কোষের একটি প্রধান অংশ আছে এবং তার থেকে অনেকগুলি সম্প্রসারণ রয়েছে।

একটি স্নায়ু কোষের সম্প্রসারিত অংশগুলিকে বলা হয় ডেনড্রাইট। এরা বৈদ্যুতিক সংকেত গ্রহণ করে। প্রতিটি স্নায়ুকোষের একটি সরু বর্ধিত অংশ থাকে, তাকে বলে অ্যাক্সন। এই অ্যাক্সন বৈদ্যুতিক সংকেতটি পরবর্তী স্নায়ু কোষে প্রেরণ করে। স্নায়ু কোষের প্রধান অংশটি ডেনড্রাইট বা অ্যাক্সনের চেয়ে একটু গাঢ় হয় এবং সেটি প্রধানত ধূসর মস্তিষ্কে অবস্থিত, সেইজন্যই এর রঙ একটু গাঢ় থাকে। অ্যাক্সনগুলি সাদা স্নেহ পদার্থ বা ফ্যাট (লিপিড দিয়ে তৈরি মাইলিন কোষ) দ্বারা আবৃত থাকে এবং আমাদের মস্তিষ্কের শ্বেত অংশটি তৈরি করে।

মস্তিষ্কের কাজ কি? সম্পাদনা

মস্তিষ্ক করোটিক স্নায়ু (ক্রেনিয়াল নার্ভ) এবং মেডুলা থেকে সংকেত গ্রহণ করে। এই সংকেতগুলি আমাদের মস্তিষ্কে আসার পর মস্তিষ্ক সেগুলির শ্রেণীবিভাগ করে প্রয়োজনীয় অঙ্গে নির্দেশ পাঠায়। তুমি এখনই এটি অনুভব করতে পারো, কারণ তুমি সচেতনভাবেই জানো যে তুমি এই পাতাটি পড়ছো - এটি একটি সচেতন চাক্ষুষ প্রক্রিয়া।

এছাড়াও তুমি শব্দ শুনতে পাও, তুমি আবেগ অনুভব করো, কেউ স্পর্শ করলে বা সুড়সুড়ি ইত্যাদি দিলে তুমি অনুভব করতে পারো, এ সমস্তই মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে। তুমি যা দেখতে পাচ্ছো বা তোমার সাথে যা ঘটছে তাকে যদি ইনপুট বলি, তাহলে এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে তুমি যা করছো তা হল আউটপুট। আমরা আমাদের মেজাজ, অবস্থান বা চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করে আমাদের সাথে যা ঘটছে তার প্রতিক্রিয়া জানাই। মস্তিষ্ক তার মধ্যস্থিত স্নায়ু কোষ এবং মেডুলা দিয়ে শরীরের নড়াচড়াও পরিচালনা করে। করোটিক স্নায়ু এবং মেডুলা তোমার ওপর যা করা হচ্ছে তাই নিয়ে কাজ করে এবং আরও অন্যরা আছে যারা তোমার মাধ্যমে এর প্রতিক্রিয়া দেওয়া (আউটপুট) নিয়ে কাজ করে। মস্তিষ্কের আরও অনেক কাজ রয়েছে যেগুলি অবচেতন ভাবে হয়ে যেতে থাকে, যেমন নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস। এর জন্য আমাদের সচেতনভাবে চিন্তা করার দরকার পড়েনা। মস্তিষ্ক শরীরের অন্যান্য সমস্ত অঙ্গ -প্রত্যঙ্গ এবং তাদের কাজ যেমন পাচন, শ্বাস -প্রশ্বাস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে।

মস্তিষ্ক কোন অঙ্গ প্রণালীর সাথে যুক্ত থাকে? সম্পাদনা

মস্তিষ্ক আসলে শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের সঙ্গে স্নায়ুর মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। আমরা আমাদের মাথার উপরের অংশ, আমাদের পায়ের আঙুলের ডগা অনুভব করতে পারি এবং আমরা হাঁটার সাথে সাথেই ভ্রূকুটিও করতে পারি। এছাড়াও পাকস্থলী, থাইমাস বা প্লীহার মত অঙ্গগুলি মস্তিষ্কের সাথে সংযুক্ত থাকে। আমরা এই অঙ্গগুলির কার্যকলাপ অনুভব করতে পারি না, এটি মস্তিষ্কের ইনপুট এবং আউটপুটের অবচেতন প্রক্রিয়াকরণের একটি উদাহরণ।

মস্তিষ্ক কিভাবে শরীরের অন্যান্য অংশের সাথে যোগাযোগ করে? সম্পাদনা

মস্তিষ্ক স্নায়ু কোষের সমন্বয়ে গঠিত দীর্ঘ স্নায়ুর মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা সংযুক্ত অঙ্গগুলিতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং সংবেদনশীল স্নায়ু কোষের শেষ প্রান্ত (ডেনড্রাইট বা অন্যান্য বিশেষ কাঠামো) ইনপুট সংগ্রহ করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, পেশীগুলিতে বৈদ্যুতিক সংকেত রাসায়নিক সংকেতে রূপান্তরিত হয়। তখন স্লাইডিং ফিলামেন্ট তত্ত্বের (একটি পেশী আর একটি পেশীর ওপর দিয়ে পিছলে চলে যায়) মাধ্যমে পেশীর সংকোচন ঘটে।

কিভাবে তুমি তোমার মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে পারো? সম্পাদনা

মস্তিষ্কের ব্যায়াম তোমার মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করবে এবং তোমাকে নতুন জিনিস শিখতে, বুঝতে এবং দ্রুততর হতে সহায়তা করবে। মস্তিষ্কের ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে পড়া, ধাঁধার সমাধান করা বা কেবল সক্রিয় থাকা: বাইরের প্রকৃতি অন্বেষণ করা, বাড়ির অভ্যন্তরে খেলাধুলা করা। টিভি দেখা অবশ্য একটি নিষ্ক্রিয় কর্ম এবং এটি তোমার মস্তিষ্কের দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করবে না। নিজেকে কর্মক্ষম এবং তীক্ষ্ণ রাখতে তোমার বিভিন্ন কার্যকলাপের মধ্যে একটি সুস্থ ভারসাম্য থাকা উচিত। কিছু খেলাধুলা যেমন বক্সিং বা বাঙ্গি জাম্পিং মস্তিষ্কের ক্ষতি করে বলে জানা যায় এবং তোমার এগুলি এড়িয়ে চলা উচিত।

স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া মস্তিষ্ক সুস্থ রাখার আরেকটি উপায়।