উইকিশৈশব:মানবদেহ/রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা

হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস এবং তাদের চারপাশের ধমনী ও শিরা।

রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থার কাজ হল শরীরের সব অংশে অক্সিজেন এবং পোষক পদার্থ সরবরাহ করা। এই রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র কার্বন ডাই অক্সাইডের মত বর্জ্য পদার্থ বয়ে এনে ফুসফুসের মাধ্যমে শরীর থেকে বার করে দেয়।

সংবহনতন্ত্র কেমন দেখতে?

সম্পাদনা

হৃৎপিণ্ডের মাপ প্রায় একটি মুষ্টির মত। রক্তনালীগুলি দীর্ঘ, পাতলা নালিকা যার মধ্যে দিয়ে রক্ত ​​সংবাহিত হয়। মানুষের দেহে হাজার হাজার রক্তনালী আছে। তুমি যদি তাদের সব কটিকে প্রসারিত কর, একজন ব্যক্তির রক্তনালী ৬০,০০০ মাইল (৯৬,৫৬০ কিলোমিটার) জুড়ে বিস্তৃত থাকবে!

রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থার অংশগুলি কী কী?

সম্পাদনা

রক্তসঞ্চালন তন্ত্রের মধ্যে আছে হৃৎপিণ্ড, রক্ত ​​এবং রক্তনালী। রক্তনালীর মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত ​​বাহিত হয়। ধমনী, শিরা, এবং কৈশিকনালী বা রক্ত জালিকা এগুলি সবই বিভিন্ন ধরনের রক্তনালী। এই ব্যবস্থার মধ্যে লসিকা তন্ত্রও আছে। এটি লসিকা নালী নামে নালিকার একটি অন্তর্জাল (নেটওয়ার্ক) নিয়ে গঠিত। এর কাজ হল লসিকা নামক একটি স্বচ্ছ তরলকে একমুখীভাবে হৃৎপিণ্ডের দিকে নিয়ে যাওয়া।

সংবহনতন্ত্রের কাজ কি?

সম্পাদনা

সংবহনতন্ত্রের চারটি প্রধান কাজ রয়েছে:

  1. সারা শরীরের সমস্ত কোষে পুষ্টি, অক্সিজেন এবং হরমোন পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া এবং বিপাকীয় বর্জ্য (কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন বর্জ্য) শরীর থেকে অপসারণ করা।
  2. শ্বেত রক্তকণিকা, অ্যান্টিবডি এবং পরিপূরক প্রোটিন দ্বারা শরীরের সুরক্ষা করা। এগুলি রক্তের মধ্যে দিয়ে সঞ্চালিত হয় এবং শরীরকে বাইরের জীবাণু ও বিষাক্ত পদার্থ থেকে রক্ষা করে।
  3. রক্ত তঞ্চন বা রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াও এই ব্যবস্থার অন্তর্গত, যা আঘাতের পরে শরীরকে রক্তের ক্ষয় থেকে রক্ষা করে।
  4. শরীরের তাপমাত্রা, শরীর স্থিত তরলের পিএইচ, এবং কোষের মধ্যেকার জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা।

সংবহনতন্ত্র কিভাবে শরীরের অন্যান্য অংশের সাথে যোগাযোগ রাখে?

সম্পাদনা

তোমার শরীরের সমস্ত অংশে রক্ত ​​সরবরাহের প্রয়োজন আছে। এই লাল চটচটে তরল পদার্থটি তোমার শরীরের প্রতিটি অংশে খাদ্য এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে। হৃৎপিণ্ড এবং এর রক্তনালীর অন্তর্জালকে বলা হয় রক্তসঞ্চালন তন্ত্র। যে ধমনী তোমার হৃৎপিণ্ড থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তকণিকা বহন করে নিয়ে যায় তাকে মহাধমনী বা অ্যাওর্টা বলা হয় এবং যে শিরাটি আবার একে নিয়ে আসে তাকে বলা হয় ভেনা কেভা।

তোমার হৃৎপিণ্ড দুটি পাম্প দিয়ে তৈরি। বামদিকের পাম্প বা বাম নিলয় (ভেন্ট্রিকেল) তোমার ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত ​​গ্রহণ করে এবং তাকে তোমার শরীরের চারপাশে পাঠিয়ে দেয়। ডানদিকের পাম্প বা দক্ষিণ নিলয় শরীরের কার্বন ডাই অক্সাইড মিশ্রিত দূষিত রক্ত ​​পায় এবং তাকে ফুসফুসে পাঠায় অক্সিজেন দিয়ে বিশুদ্ধ করার জন্য। তোমার হৃৎপিণ্ডের ভিতরের দেওয়াল তোমার শরীরের চারপাশে রক্ত ​​পাম্প করার জন্য পর্যায়ক্রমে সংকুচিত ও প্রসারিত হতে থাকে। একে হৃৎস্পন্দন বা হার্ট বিট বলা হয়।

তোমার শরীরে প্রধান শিরা এবং তোমার হৃদয়ে একমুখী কপাটিকা (ভালভ) আছে। তারা তোমার রক্তকে তোমার শরীরের চারপাশে সঠিকভাবে প্রবাহিত করে। যদি তোমার রক্ত ​​অন্য পথে যাওয়ার চেষ্টা করে তাহলে কপাটিকা বন্ধ হয়ে যাবে যাতে তোমার রক্ত অন্য পথে ​​প্রবেশ করতে না পারে।

হৃৎপিণ্ড থেকে রক্তের উচ্চ চাপ যাতে সহ্য করতে পারে সেই জন্য ধমনীর দেওয়াল পুরু হয়। ধমনীগুলি শাখা বের করে খুব ছোট রক্তনালীর একটি অন্তর্জাল তৈরি করে যাদের নাম কৈশিক নালী। এদের নালিকা দেওয়ালের মধ্য দিয়ে অনেক পদার্থ কোষে পৌঁছে যেতে পারে। কৈশিক নালীর মাধ্যমে শুধু অক্সিজেনই রক্ত ​​থেকে কোষের মধ্যে যায় তা নয়, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থও কোষ থেকে এই কৈশিক নালীগুলির মধ্যে চলে আসে।

তোমার রক্ত ​​চারটি পদার্থ দিয়ে গঠিত। তোমার রক্তের প্রায় অর্ধেক অংশ রক্তরস বা প্লাজমা দিয়ে গঠিত। প্রায় ৪০% থাকে লোহিত রক্তকণিকা যেগুলি অক্সিজেন বহন করে নিয়ে যায়, এবং বাকি অংশ হল শ্বেত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট। রক্তরস হল হালকা হলুদ রঙের তরল। এটি শর্করা, লবণ এবং শরীরের অন্যান্য রাসায়নিক দিয়ে তৈরি।

লোহিত রক্তকণিকাগুলি চ্যাপ্টা এবং গোল ডোনাট আকৃতির হয়, যারা সারা শরীরে অক্সিজেন বহন করে নিয়ে যায়। এই কোষগুলি থাকার জন্য রক্তের রঙ হয় লাল। হিমোগ্লোবিন থাকার ফলে লোহিত কণিকাগুলি লাল দেখায়। লোহিত রক্তকণিকায় অক্সিজেনের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে কণিকা কতটা লাল হবে। শ্বেত রক্তকণিকা শরীরের চারপাশে ঘুরে জীবাণু ধ্বংস করে।

এগুলি জেলি ভর্তি থলির মত এবং শরীরের অন্যান্য অংশে যেতে রক্তের প্রবাহ থেকে বের হয়ে তাদের আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে। তোমার শরীরে আঘাত লেগে রক্তপাত হলে রক্ত পড়া বন্ধ করার জন্য অনুচক্রিকাগুলি তোমার ক্ষত স্থানে রক্ত ​​জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এগুলি অস্থি মজ্জায় তৈরি হয় এবং গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির হয়।

কোন মডেল বা রেখাচিত্রে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত ​​লাল রঙের দেখানো হয় এবং পুরনো রক্ত ​​বহনকারী শিরাগুলিকে নীল রঙের দেখানো হয়। আসলে শিরা দিয়ে প্রবাহিত রক্তের রঙ থাকে গাঢ় লাল।

কিভাবে তুমি তোমার রক্ত ​​সঞ্চালন ব্যবস্থাকে সুস্থ রাখতে পারো?

সম্পাদনা

নিয়মিত ব্যায়াম করলে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে তা হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কখনও কখনও, সংবহনতন্ত্রের উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ কোলেস্টেরলের মত সমস্যা থাকে। সুষম আহার, ব্যায়াম, এবং কখনও কখনও ডাক্তারি ঔষধ এই সমস্যাগুলি সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে।