উইকিশৈশব:রাসায়নিক মৌল/ইউরেনিয়াম
ধাতুটি দেখতে, স্পর্শে, স্বাদে, অথবা গন্ধে কেমন লাগে?
সম্পাদনাইউরেনিয়াম দেখতে রূপালী-সাদা রঙের। তবে ইউরেনিয়াম কখনো কখনো দেখতে সামান্য নীল রঙেরও হতে পারে। এটি একটি ভারী ধাতব পদার্থ।
ধাতুটি কিভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল?
সম্পাদনা১৭৮৯ সালে জার্মান রসায়নবিদ মার্টিন হাইনরিখ ক্ল্যাপরথ ইউরেনিয়াম আবিষ্কার করেছিলেন। বোহেমিয়া রাজ্যের জোয়াচিমসাল রৌপ্য খনি থেকে (বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্রে অবস্থিত) পাওয়া পিচব্লেন্ড খনিজের একটি নমুনা বিশ্লেষণ করার সময় বিজ্ঞানী ক্ল্যাপরথ ইউরেনিয়াম ধাতুর সন্ধান পান। ১৮৯৬ সালে হেনরি বেকারেল ইউরেনিয়াম ধাতুর তেজস্ক্রিয়তা আবিস্কার করেন। এর দু'বছর পর অর্থাৎ ১৮৯৮ সালে থোরিয়াম ধাতু আবিষ্কৃত হয়। থোরিয়াম ধাতুর আবিষ্কার আগে ইউরেনিয়ামই একমাত্র তেজস্ক্রিয় ধাতু ছিল।
ধাতুটির নাম কোথা থেকে এসেছে?
সম্পাদনাইউরেনিয়ামের ধাতুটির নামকরণ করা হয়েছিলো ইউরেনাস গ্রহের নামানুসারে। এই গ্রহটি ১৭৮১ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্শেল আবিষ্কার করেছিলেন।
তুমি কি জান?
- ইউরেনিয়াম হল পর্যায় সারণীর ৯২তম মৌল। যা প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পাওয়া পর্যায় সারণীর শেষ মৌল।
- এক টন প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম ৪ কোটি কিলোওয়াট ঘন্টা বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। এই একই পরিমাণ শক্তি ১৬,০০০ টন কয়লা বা ৮০,০০০ ব্যারেল তেলের সামগ্রী পোড়ালে পাওয়া যায়।
- কলোরাডো মালভূমিতে বসবাসকারী আদি আমেরিকানরা উজ্জ্বল হলুদ রং তৈরি করতে ইউরেনিয়ামের খনিজ কার্নোটাইট ব্যবহার করত।
- ইউরেনিয়াম কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বয়স মাপতে পারেন।
ধাতুটি কোথায় পাওয়া যায়?
সম্পাদনাসারা বিশ্বে মাটি এবং পাথরে ইউরেনিয়ামের খনিজ পাওয়া যায়। সারা বিশ্বে যে পরিমাণ রুপো আছে, ইউরেনিয়ামের পরিমাণ তার চেয়ে চল্লিশগুণ বেশি। অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে বেশি ইউরেনিয়ামের খনিজ মজুত রয়েছে। তবে কাজাখস্তান থেকে ইউরেনিয়ামের খনিজ সবচেয়ে বেশি খনন করা হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রায় ২৩,৪০০ টন ইউরেনিয়াম উৎপাদন করা হয়েছিল।
সমুদ্রের জলে ইউরেনিয়ামের ভান্ডার প্রচুর। বিজ্ঞানীরা হিসাব কষে দেখেছেন এর পরিমাণ প্রায় ৪৬ লক্ষ টন।
এর ব্যবহার কোথায়?
সম্পাদনাইউরেনিয়াম সাধারণত পারমাণবিক চুল্লিতে বিদ্যুৎ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। পারমাণবিক অস্ত্রেও ইউরেনিয়াম কাজে লাগে। খুব পুরানো পাথরের বয়স পরীক্ষা করতেও ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। আগে ইউরেনিয়াম যৌগ কাচে হলুদ রঙ করার জন্য ব্যবহৃত হত, যদিও এই ধরনের ব্যবহার আজকাল বিরল। ১৯১২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক রোমান আমলের ইউরেনিয়াম প্রলেপ লাগানো উপকরণ খুঁজে পেয়েছেন।
যেখানে অতিবেগুনী রশ্মির উপস্থিতিতে সবুজ আলোর দরকার পড়ে সেখানে ইউরেনিয়ামের যৌগ ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন "ভ্যাসলিন গ্লাস" এর ক্ষেত্রে এর ব্যবহার দেখা যায়।
ইউরেনিয়াম খুব ভারী পদার্থ। এটি এতই ভারী যে বর্ম-ভেদকারী আর্টিলারি বুলেটে ইউরেনিয়ামের ব্যবহার দেখা যায়।
ধাতুটি কি বিপজ্জনক?
সম্পাদনাবিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম আগুনে ফেটে যেতে পারে। যেসব যৌগে ইউরেনিয়াম থাকে সেইসব যৌগগুলি সবই বিষাক্ত।
ইউরেনিয়াম একটি তেজস্ক্রিয় ধাতু, তাই এর সংস্পর্শে ক্যান্সার হতে পারে।