উইকিশৈশব:রাসায়নিক মৌল/গ্যালিয়াম

পর্যায় সারণীতে গ্যালিয়ামের অবস্থান।
পর্যায় সারণীতে গ্যালিয়াম-এর প্রতীক

ধাতুটি দেখতে, স্পর্শে, স্বাদে, অথবা গন্ধে কেমন লাগে? সম্পাদনা

গ্যালিয়ামের কোনো গন্ধ নেই। এটি নরম এবং দেখতে রূপালী রঙের। এর গলনাঙ্ক কম। মাত্র ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই তুমি এটি ধরে রাখলে আপনাআপনি এটি গলে যেতে পারে। গ্যালিয়াম খুবই নরম পদার্থ যে এটি একটি সাধারণ ছুরি ব্যবহার করে সহজেই কাটা যায়। তুমি চাইলে হাত দিয়ে এর বিভিন্ন আকার বা আকৃতি দিতে পারো। তুমি যখন এটিকে এসিড এবং ক্ষারে রাখবে তাহলে তখন এটি বিক্রিয়া করবে। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৩১ এবং এর প্রতীক হচ্ছে Ga

ধাতুটি কিভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল? সম্পাদনা

১৮৭৫ সালে পল ই. লেকোক নামের একজন ফরাসি রসায়নবিজ্ঞানী ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে স্পেকট্রোস্কোপের মাধ্যমে গ্যালিয়াম খুঁজে পান। তবে মজার বা বিস্ময়কর ব্যাপার হলো যে এটি আবিষ্কারের ৪ বছর আগে অর্থাৎ ১৮৭১ সালে রুশ রসায়নবিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলিফ সর্বপ্রথম গ্যালিয়ামের অস্তিত্বের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন একা-অ্যালুমিনিয়াম। তিনি একই সাথে এর ঘনত্ব, গলনাঙ্ক, অক্সিজেন এবং ক্লোরিনের সাথে বিক্রিয়া সহ বিভিন্ন ধর্মের ভবিষ্যদ্বাণীও করেন। যা গ্যালিয়ামের প্রকৃত বৈশিষ্ট্যের সাথে প্রায় মিলে যায়।

ধাতুটির নাম কোথা থেকে এসেছে? সম্পাদনা

১৮৭১ সালে দিমিত্রি মেন্ডেলিফ এই পদার্থটির আবিষ্কারের আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করে এই পদার্থটির সমস্ত বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা ও নাম করেছিলেন। তিনি এটির নাম দিয়েছিলেন একা-অ্যালুমিনিয়াম। তবে ১৯৭৫ সালে এটি আবিষ্কারের পর এর আবিষ্কারক ফরাসি রসায়নবিজ্ঞানী পল ই. লেকোক ডি বোইসবউড্রান এই উপাদানটির ভিন্ন নাম দিয়েছেন। সেটি হলো "গ্যালিয়াম"। গ্যালিয়াম একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ হচ্ছে "ফ্রান্স"।

তুমি কি জানো?

  • গ্যালিয়ামের অবস্থা পরিবর্তন করা সহজ। তবে এটি তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।
  • তুমি যখন এটি তোমার হাতে ধরবে তখন গ্যালিয়াম গলে যাবে। অর্থাৎ তোমার শরীরের তাপমাত্রায় গ্যালিয়াম গলে যাবে।
  • এই গ্যালিয়াম অক্সিজেন এবং বায়ু কিংবা পানির সাথে বিক্রিয়া করে না কারণ এটি অক্সাইড স্তর।
  • গ্যালিয়ামের আগের নাম ছিল একা-অ্যালুমিনিয়াম। এটি আবিষ্কার হওয়ার অনেক আগেই মেণ্ডেলিফ এই মৌল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং এই নামটি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি স্ক্যান্ডিয়াম ও জার্মেনিয়ামের আবিষ্কারের আগে এগুলোর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি স্ক্যান্ডিয়াম, জার্মেনিয়ামের নাম যথাক্রমে একা-বোরন ও একা-সিলিকন দিয়েছিলেন। মজার ব্যাপার হলো তিনি এগুলো সম্পর্কে যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা প্রায় উক্ত মৌলের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়।

এটি কোথায় পাওয়া যায়? সম্পাদনা

গ্যালিয়ামের মৌলিক রূপ পৃথিবীতে পাওয়া যায় না। তবে এটি পৃথিবীতে খনিজ পদার্থ এবং আকরিকে পাওয়া যায়।

এর ব্যবহার কোথায়? সম্পাদনা

গ্যালিয়াম সিলিকনের মতো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স শিল্পে ব্যবহার করা হয়। ইলেকট্রনিক্স শিল্পে গ্যালিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদার্থ। এটি থার্মোমিটার তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়। কারণ এতে পারদের মতো কম গলনাঙ্ক রয়েছে। কিন্তু এটি পারদের মতো বিষাক্ত নয়।

ধাতুটি কি বিপজ্জনক? সম্পাদনা

গ্যালিয়াম বিষাক্ত পদার্থ নয়। তবে যখন গ্যালিয়াম অ্যালুমিনিয়ামে দ্রবীভূত হবে তখন এটি একটি প্রতিরক্ষামূলক অক্সাইড স্তর তৈরি করার ক্ষমতা প্রকাশ করবে। এটা ঘটলে কোনো ধাতব মেশিন ধসে পড়বে এবং তখন অসংখ্য মানুষ আহত বা নিহত হবে। এই ধাতু বিমানের কোনো ধাতব জিনিসের ক্ষতি করতে পারে। সেজন্য এটি নিয়ে বিমানে উড্ডয়ন করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা