উইকিশৈশব:রাসায়নিক মৌল/নিওডিমিয়াম

পর্যায় সারণীতে নিওডিমিয়ামের অবস্থান
পর্যায় সারণীতে নিওডিমিয়ামের প্রতীক

ধাতুটি দেখতে, স্পর্শে, স্বাদে, অথবা গন্ধে কেমন লাগে? সম্পাদনা

 
অতি বিশুদ্ধ ৫ গ্রাম নিওডিমিয়াম। এটি আর্গন গ্যাসের মধ্যে রাখা হয়েছে।

নিওডিমিয়াম একটি শক্ত, সামান্য নমনীয়, রূপালী রঙের ধাতু। বাতাস এবং আর্দ্রতায় সংস্পর্শে এটি দ্রুত বিবর্ণ হয়ে যায়। নিওডিমিয়াম ধাতু দ্রুত অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে গোলাপী, বেগুনি-নীল এবং হলুদ রঙের যৌগ তৈরি করে।

ধাতুটি কিভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল? সম্পাদনা

১৮৮৫ সালে অস্ট্রিয়ান রসায়নবিদ কার্ল আউয়ার ফন ওয়েলসবাক নিওডিমিয়াম আবিষ্কার করেন।

ধাতুটির নাম কোথা থেকে এসেছে? সম্পাদনা

"নিওডিমিয়াম" নামটি এসেছে গ্রীক শব্দ "নিওস" (“neos”) মানে নতুন এবং "ডিডাইমোস" (“didymos”) এর যার অর্থ যমজ। শব্দ দুটি একসাথে মিলিত করলে হয় "নতুন যমজ"। ডাইডেনিয়ামের পর এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল বলে এই নাম।

ধাতুটি কোথায় পাওয়া যায়? সম্পাদনা

যদিও নিওডিমিয়াম ধাতুকে বিরল মৃত্তিকা মৌলের শ্রেণীতে রাখা হয় কিন্তু প্রকৃত অর্থে নিওডিমিয়াম মোটেও বিরল নয়। পৃথিবীর ভূত্বকে প্রাচুর্যের দিক থেকে এটি ২৭তম মৌল। আমাদের সৌরমণ্ডলও নিওডিমিয়াম ধাতুর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। প্রকৃতিতে নিওডিমিয়াম মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। বিভিন্ন খনিজে পাওয়া যায়। নিওডিমিয়ামের প্রধান খনিজ হলো মোনাজাইট।

এর ব্যবহার কোথায়? সম্পাদনা

 
নিওডিমিয়াম চুম্বক

তুমি কি জান?

  • নিওডিমিয়াম বিরল মৃত্তিকা মৌল। প্রকৃতিতে এই ধাতুকে বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় না। এতে ৬০টি প্রোটন এবং ৮৪টি নিউট্রন রয়েছে।
  • নিওডিমিয়ামের গলনাঙ্ক হলো ১০২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং স্ফুটনাঙ্ক হলো ৩০৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • পৃথিবীর ভূত্বকে নিওডিমিয়ামের পরিমাণ প্রতি কেজিতে প্রায় ৩৮ মিলিগ্রাম।

নিওডিমিয়ামের বেশ কয়েকটি ব্যবহার রয়েছে। চুম্বক তৈরির কাজে এর ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুব শক্তিশালী চুম্বক তৈরি করতে নিওডিমিয়াম ধাতু ব্যবহার করা হয়। এই রকম শক্তিশালী চুম্বক নিওডিমিয়াম-লোহা-বোরন (এনআইবি) দিয়ে তৈরি হয়। এই চুম্বক মাইক্রোফোন, লাউড স্পিকার, হেডফোন, গিটার, কম্পিউটার হার্ড ডিস্ক প্রভৃতিতে ব্যবহার করা হয়। এই চুম্বকগুলি হালকা হয় এবং জায়গা কম লাগে। তাই বেশ জনপ্রিয়। নিওডিমিয়াম চুম্বক পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী চুম্বক। নিওডিমিয়াম-ইট্রিয়াম-অ্যালুমিনিয়াম গার্নেট লেজার (Nd:YAG) নামে এক ধরনের রশ্মি তৈরি করতে নিওডিমিয়াম ব্যবহার করা হয়। এই লেজার ফুসফুসের ক্যান্সার, চোখের রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।

নিওডিমিয়াম হালকা বাল্ব তৈরিতে কাজে লাগে। বাল্বের কাচে অল্প পরিমাণে নিওডিমিয়াম দিলে তাতে হলুদ এবং সবুজ রং তৈরি হয়। এই সব বাল্বের আলো অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়।

নিওডিমিয়ামের আরও একটি ব্যবহার হল রঙিন কাচ তৈরিতে। অল্প পরিমাণে নিওডিমিয়াম যোগ করলে এটি কাচে সবুজ রঙ দেয়। কিছু ল্যাম্পশেডেও নিওডিমিয়াম ব্যবহার করা হয়। গলিত কাচের ভিতর নিওডিমিয়াম অক্সাইড যোগ করে 'নিওডিমিয়াম কাচ' তৈরি করা হয়। দিনের আলোয় এই কাচকে রঙিন দেখায়। প্রতিপ্রভ আলোতে এর রঙ নীলাভ দেখায়।

ধাতুটি কি বিপজ্জনক? সম্পাদনা

মিহি গুঁড়ো অবস্থায় এই ধাতু দাহ্য ও বিষ্ফোরক পদার্থের মতো আচরণ করে। এই অবস্থায় এটি বিপজ্জনক।