উইকিশৈশব:রাসায়নিক মৌল/পারদ
ধাতুটি দেখতে, স্পর্শে, স্বাদে, অথবা গন্ধে কেমন লাগে?
সম্পাদনাপারদ সাধারণ তাপমাত্রায় একটি তরল ধাতু। এটি দেখতে রূপালী বর্ণের। এটি খুব ঘন, যার মানে অল্প আয়তনে এটি খুব ভারী। এক টেবিল চামচের এক চামচ পারদের ওজন প্রায় ২৩০ গ্রামের কাছাকাছি হয়। পারদের ঘনত্ব খুব বেশি বলে মুদ্রার মতো ধাতব বস্তুও এতে ভাসতে পারে।
ধাতুটি কিভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল?
সম্পাদনাপ্রাচীন কাল থেকেই মানুষ পারদ ধাতুটির সঙ্গে পরিচিত ছিল। বিশেষ করে এটি চীনা এবং হিন্দুদের কাছে পরিচিত ছিল। মজার ব্যাপার হলো, একজন চীনা সম্রাটের সমাধির ভিতরে চীনের একটি মানচিত্র পাওয়া গিয়েছিল, যেখানে সমুদ্র পারদ দিয়ে তৈরি।
ধাতুটির নাম কোথা থেকে এসেছে?
সম্পাদনারোমান দেবতা মারকিউরিয়াসের নামানুসারে পারদের ইংরাজি নাম মারকারি রাখা হয়েছে। পারদ দেখতে রূপালী বর্ণের এবং তাড়াতাড়ি গড়িয়ে চলে যায় বলে ইংরাজিতে একে 'কুইকসিলভার' ও বলা হয়। এর ল্যাটিন নাম হাইডগারজিরাম, যার অর্থ "তরল রূপো"।
ধাতুটি কোথায় পাওয়া যায়?
সম্পাদনাতুমি কি জানো?
- পারদ একমাত্র ধাতু যা সাধারণ তাপমাত্রায় তরল থাকে।
- বিশ্বের অর্ধেক পারদ আসে স্পেন এবং ইতালি থেকে।
পারদের মজুত ভাণ্ডার খুবই কম। এর প্রধান খনিজের নাম সিনাবার। এই খনিজটিতে মারকিউরিক সালফাইড নামে পারদের একটি যৌগ থাকে। পৃথিবীর বেশিরভাগ পারদের খনিজের মজুত ভাণ্ডার খনন করা হয়ে গিয়েছে। তাই খুব বেশি পারদের খনিজের মজুত অবশিষ্ট নেই।
এর ব্যবহার কোথায়?
সম্পাদনাথার্মোমিটারে পারদ ব্যবহার করা হয়। তবে আজকাল অন্য থার্মোমিটার বাজারে আসাতে এর ব্যবহার ক্রমশ কম আসছে। দাঁতের ক্ষয়ের জন্য যে গর্ত তৈরি হয় সেটি ভরাট করতে পারদ সংকর ব্যবহার করা হয়। এতে মোট উপাদানের সাধারণত অর্ধেক পরিমাণ পারদ থাকে। কিন্তু আজকাল এর ব্যবহারও কম আসছে।
ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব, রাস্তার বাতি এবং বিজ্ঞাপনের আলো তৈরিতে পারদের যৌগ ব্যবহার করা হয়।
মারকিউরিক ক্লোরাইড যৌগটি ক্যালোমেল নামেও পরিচিত। এই পারদ যৌগটি জীবাণুনাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মারকিউরিক সালফাইড (HgS) সিঁদুর তৈরিতে কজে লাগে। কোথাও কোথাও লাল রঙ্গক হিসাবে রং শিল্পে এই যৌগটির ব্যবহার দেখা যায়। মারকিউরিক অক্সাইড (HgO) থেকে মারকিউরিক ব্যাটারি তৈরি হয়।
সোনার গুঁড়ো আকরিক থেকে সোনা আলাদা করার জন্য দক্ষিণ আমেরিকার সোনার খনির শ্রমিকেরা আজও পারদ ব্যবহার করে থাকেন।
ধাতুটি কি বিপজ্জনক?
সম্পাদনাহ্যাঁ, পারদ খুবই বিষাক্ত। পারদ বাষ্প হিসাবে শ্বাসতন্ত্রের মধ্য প্রবেশ করলে শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া পারদ বাষ্প বা সাধারণ অবস্থার পারদ পাচনতন্ত্র বা ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলেও ক্ষতির সম্ভাবনাও থাকে।