উইকিশৈশব:রাসায়নিক মৌল/হাইড্রোজেন

পর্যায়ক্রমিক চার্টে হাইড্রোজেনের অবস্থান।
পর্যায় সারণীতে হাইড্রো-জেনের প্রতীক

হাইড্রোজেন হলো একটি পরমাণু যাতে একটি ইলেকট্রন এবং একটি প্রোটন থাকে। এই মৌলটিকে পর্যায়ক্রমিক চার্টের একেবারে উপরে বামপার্শ্বে পাওয়া যায়। হাইড্রোজেনের প্রতীক হলো ইংরাজির H অক্ষর। হাইড্রোজেন মৌলটি মহাবিশ্বের সবচেয়ে হালকা এবং নানাভাবে সর্বত্র পাওয়া যায়। এখানে হাইড্রোজেন নিয়ে কিছু তথ্য দেওয়া হলো:

  • নাম: হাইড্রোজেন
  • প্রতীক: H
  • পারমাণবিক সংখ্যা: ১
  • পারমাণবিক ভর: ১.০০৭৯৪ amu
  • গলনাঙ্ক: -২৫৯.১৪ °সে
  • স্ফুটনাঙ্ক: -২৫২.৮৭ °সে
  • প্রোটন এবং ইলেকট্রনের সংখ্যা (একই সংখ্যা): ১
  • নিউট্রনের সংখ্যা: ০
  • শ্রেণীবিভাগ: অধাতু
  • রঙ: বর্ণহীন

মৌলটি দেখতে, স্পর্শে, স্বাদে, অথবা গন্ধে কেমন লাগে? সম্পাদনা

 
রোসেট নেবুলার খুব কাছ থেকে তোলা চিত্র। মহাকাশের এই অঞ্চলে তারা তৈরি হচ্ছে। হাইড্রোজেনের মেঘ থেকে লাল রঙের উৎপত্তি।

হাইড্রোজেন সমস্ত মৌলের মধ্যে ক্ষুদ্রতম, এত ছোট যে চারশো কোটি পরমাণু এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত একটি পিনের মাথায় থেকে যেতে পারে! সাধারণ তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন একটি গ্যাসীয় পদার্থ। হাইড্রোজেন গ্যাস (H2) হলো দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু দিয়ে তৈরি একটি অণু। এই গ্যাসটির কোন স্বাদ বা গন্ধ নেই এবং এটি বিষাক্তও নয়। খুব কম তাপমাত্রা এবং উচ্চ চাপে হাইড্রোজেন গ্যাসকে তরল বা কঠিন পদার্থে পরিণত করা যায়। হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত একটি সাধারণ অণু হলো জল। বৈজ্ঞানিকদের কাছে H2O নামে পরিচিত। এতে দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং একটি অক্সিজেন পরমাণু রয়েছে। সাধারণ তাপমাত্রায় জল একটি স্বচ্ছ তরল।

মৌলটি কিভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল? সম্পাদনা

হেনরি ক্যাভেন্ডিশই প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন যে হাইড্রোজেন একটি অনন্য পদার্থ। ১৭৭৬ সালে তিনি একটি অ্যাসিডের সাথে পারদ মিশিয়ে হাইড্রোজেন তৈরি করেন। যদিও সুইস আলকেমিস্ট প্যারাসেলসাস এর অনেক আগেই হাইড্রোজেন তৈরি করেছিলেন। তিনি এতে জলের নমুনা মিশিয়েও জল তৈরি করেন!

মৌলটির নাম কোথা থেকে এসেছে? সম্পাদনা

হাইড্রোজেন নামটি এসেছে প্রাচীন গ্রীক শব্দ Hydrogenes থেকে যার অর্থ "জল-গঠনকারী"। ১৭৮৩ সালে অ্যান্তনি ল্যাভয়সিয়ের এই মৌলটির নামকরণ করেছিলেন। যখন হাইড্রোজেন জ্বলে তখন এটি জল উৎপন্ন করে।

তুমি কি জান?

  • হাইড্রোজেন হলো ক্ষুদ্রতম মৌল।
  • হাইড্রোজেন হলো মহাবিশ্বের সবচেয়ে প্রাচুর্যপূর্ণ মৌল।
  • পৃথিবীতে বিশুদ্ধ অবস্থায় হাইড্রোজেন সহজে পাওয়া যায় না, তবে বেশিরভাগই জলের অংশ হিসাবে পাওয়া যায়।
  • নক্ষত্রদের প্রধান জ্বালানী হলো হাইড্রোজেন এবং লাল দানব তারাদের একমাত্র জ্বালানী।
  • হাইড্রোজেন গ্যাসে আগুন লাগার সময় চিঁ-চিঁ শব্দ হয়।

মৌলটি কোথায় পাওয়া যায়? সম্পাদনা

হাইড্রোজেন পারমাণু অবস্থায় সাধারণত মহাকাশ এবং নক্ষত্রে পাওয়া যায়। মহাকাশে হাইড্রোজেনের বিশাল মেঘ রয়েছে। তবে মহাকাশে যে হাইড্রোজেন আছে তার বেশির ভাগই একটি ইলেকট্রন অনুপস্থিত, যার মানে এটি একটি আয়ন। পৃথিবীতে হাইড্রোজেন সাধারণত জলের অণুর অংশ হিসেবে পাওয়া যায়। অন্যান্য অনেক অণুতেও হাইড্রোজেন থাকে। কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া বর্জ্য হিসাবে বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করে।

 
সূর্য অস্ত যাচ্ছে সমুদ্রে। সূর্যের বেশিরভাগই হাইড্রোজেন। অন্যদিকে পৃথিবীতে বেশিরভাগ হাইড্রোজেন জলের আকারে রয়েছে।

এর ব্যবহার কোথায়? সম্পাদনা

জীবাশ্ম জ্বালানি প্রক্রিয়াকরণে ("আপগ্রেডিং") হাইড্রোজেনের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার রয়েছে। অ্যামোনিয়া উৎপাদনেও হাইড্রোজেনের বেশি ব্যবহার দেখা যায়। ভবিষ্যতে দূষণমুক্ত গাড়ির জ্বালানী হিসাবে হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হতে পারে।

এটা কি বিপজ্জনক? সম্পাদনা

হাইড্রোজেন অত্যন্ত দাহ্য, এবং যখন এটি অক্সিজেন গ্যাস বা বাতাসের সাথে মেশে তখন এতে বিস্ফোরণ হতে পারে।