কম্পিউটারের ইতিহাস/গণনার সাধনা
যান্ত্রিক যুগ
সম্পাদনাকম্পিউটার ইতিহাসের আদি যুগ থেকে, নানারকম উদ্ভাবন হয়ে এসেছে যার হাত ধরে এসেছে প্রযুক্তির অগ্রগতি। প্রথমদিকের কম্পিউটারগুলি ছিল যান্ত্রিক, এবং কখনও কখনও সেগুলিতে ত্রুটির প্রবণতা থাকত। সেগুলি শুধুমাত্র গণনার মেশিন ছিল।
ব্লেজ পাস্কাল (১৯শে জুন ১৯২৩, ক্লারমন্ট-ফেরান্ড - ১৯শে আগস্ট, ১৬৬২, প্যারিস) ১৬৪২ সালে একটি সংখ্যাসূচক চাকা যোগ করার মেশিন তৈরি করেছিলেন, তাঁর পিতাকে সাহায্য করার জন্য, পিতা ছিলেন একজন কর আদায়কারী। হাত দিয়ে অনেক সংখ্যা যোগ করা বেশ কঠিন কাজ ছিল, এবং পাস্কাল এটাকে সেই কঠিন কাজ থেকে মুক্তি দেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখেছিলেন। তিনি এইরকম কুড়িটি মেশিন তৈরি করেছিলেন (যেগুলিকে পাস্কালাইন বলা হয়)।
১৬৭৩ সালে একজন জার্মান গণিতবিদ গটফ্রিড ভিলহেল্ম ভন লাইবনিৎস একটি ক্যালকুলেটর যন্ত্র তৈরি করেন যেটি দিয়ে যোগ, বিয়োগ, গুণ এবং ভাগ করা যেত। এটি দিয়ে পাস্কালের মেশিনের চেয়ে বেশি কাজ করা যেত এবং এর ব্যবহারকারীরা অঙ্কের সমাধান করতে পারত। তবুও পাস্কালের এবং লাইবনিৎসের উভয়ের যন্ত্রই সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য ছিল না এবং ত্রুটিযুক্ত ছিল।
যান্ত্রিক উদ্ভাবন
সম্পাদনাএকজন ফরাসি তাঁতি, জোসেফ জ্যাকার্ড, ১৮০৫ সালে একটি পাঞ্চ কার্ড যুক্ত তাঁত ডিজাইন করেছিলেন। এর মাধ্যমে তাঁতের বুনন নকশার জন্য একটি নির্দিষ্ট ক্রমে পরপর পাঞ্চ কার্ডের শৃঙ্খল নির্দেশনা প্রদান করা যেত। বিভিন্ন ক্রমে বিভিন্ন কার্ড ব্যবহার করে নকশার পরিবর্তন করা যেত। এই পদ্ধতিতে, পরে এই কার্ডগুলি দিয়ে কম্পিউটার নির্দেশাবলী সংরক্ষণের উপায় পাওয়া গিয়েছিল।
আরেক ফরাসী, চার্লস জেভিয়ার থমাস, একটি নতুন যান্ত্রিক কম্পিউটার নিয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি এটিকে ফোর-ফাংশন মেশিন বলে অভিহিত করেছিলেন এবং এটি পাস্কাল বা লাইবনিৎসের মেশিনের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য ছিল। থমাস কাজ করেছিলেন ১৮২০ সালে, যখন প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছিল। তিনি পাস্কাল এবং লাইবনিৎসের কাজ ও সেগুলির ত্রুটি থেকে শিখেছিলেন।
বড় মাপের যান্ত্রিক কম্পিউটার ও লজিক
সম্পাদনাচার্লস ব্যাবেজ এবং অ্যাডা লাভলেস ১৮৪২ সাল থেকে অবদান রাখা শুরু করেছিলেন। বিশ্লেষণাত্মক ইঞ্জিনের মাপনদণ্ডের নিয়ামক হয়ে ওঠা ডিফারেন্স (পার্থক্য) ইঞ্জিনটি ছিল একটি স্বয়ংক্রিয় লগারিদম ট্যাবুলেটর এবং প্রিন্টার। এটিতে একটি মেমরি ইউনিট, স্বয়ংক্রিয় প্রিন্টআউট, অনুক্রমিক প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ এবং পাঞ্চ-কার্ড ইনপুট ছিল। পাঞ্চ কার্ডের ধারণাটি জ্যাকার্ডের তাঁত থেকে পাওয়া গিয়েছিল।
ব্যাবেজ ২০ বছর ধরে কম্পিউটার নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সাথে কাজ করেছিলেন। এরপর সরকার আর্থিক সাহায্য বন্ধ করার হুমকি দেয় কারণ তারা বিনিয়োগের ফলে দেখার মত কিছুই পায়নি। প্রকল্পটি এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য নতুন কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয়ে পড়ল। সেই সময় এগিয়ে এসেছিলেন লর্ড বায়রন এবং লেডি অ্যানাবেলা মিলব্যাঙ্কের কন্যা অ্যাডা লাভলেসে। লাভলেস ব্যাবেজের তৈরি নির্দেশাবলীতে কিছু ভুল সংশোধন করেছিলেন এবং এইভাবে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের প্রথম ডিবাগার (ভুল বের করার জন্য ব্যবহৃত এক ধরনের প্রোগ্রাম)। কম্পিউটারের ইতিহাসে এটি মহিলাদের জন্য একটি মাইলফলক। লাভলেস সংখ্যার বাইনারি পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেটি ভবিষ্যতের কম্পিউটারে ব্যবহার করার মান নির্ধারণ করে।
দুঃখজনকভাবে ডিফারেন্স ইঞ্জিন সঠিকভাবে কাজ করেনি। সঠিক গিয়ার এবং শ্যাফ্ট তৈরি করার মত সঠিক প্রযুক্তি সেই সময় ছিল না। তবুও এটি ভবিষ্যতের কম্পিউটারের জন্য পথ প্রশস্ত করতে সাহায্য করেছিল। পরবর্তীতে আইবিএম কর্পোরেশন আধুনিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে ডিফারেন্স ইঞ্জিনের একটি কার্যকরী মডেল তৈরি করতে সক্ষম হয়।