কোয়েল পালন/কোয়েলের রোগ ও প্রতিকার

কোয়েল পালনের অন্যতম সুবিধা হলো— এদের রোগ ব্যাধি কম। এদের রোগ ব্যাধি কম হওয়ায় টিকা দিতে হয় না। অন্যদিকে কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হয় না। তবে নিয়মিত ও অধিক হারে মাংস ও ডিম উৎপাদন পেতে হলে খামার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের সংগে সংগে কোয়েলের রোগ ব্যাধি সম্পর্কে খামারীদের যথাযথ জ্ঞান থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ পর্যন্ত কোয়েলের যে সমস্ত রোগ ব্যাধি সম্পর্কে জানা গেছে তার মধ্যে নিম্ন লিখিত রোগগুলি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

ক্ষতসৃষ্টিকারী তন্ত্র প্রদাহ সম্পাদনা

কোয়েলের রোগ ব্যাধির মধ্যে এটি সবচেয়ে মারাত্মক। কারণ এ রোগে আক্রান্ত হলে ১০০% ও মারা যেতে পারে। সাধারণত দুষিত খাদ্য দ্রব্য খাওয়ার মাধ্যমে বাচ্চা কোয়েল এ রোগে আক্রান্ত হয়। সাধারণত এটি লিটারে পালিত কোয়েলের বেশি দেখা যায়। এটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত অস্ত্রের রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে স্থানীয় যে কোনো পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।

কোয়েলের ক্লোমনালী প্রদাহ সম্পাদনা

এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে কোয়েলের এ রোগ হয়। এতে ক্লোমনালী আক্রান্ত হয়ে তীব্র প্রকৃতির প্রদাহের সৃষ্টি করে। ৩ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত এ রোগটি স্থায়ী হতে পারে এবং বাচ্চা কোয়েলে ৮০% পর্যন্ত মৃত্যু হার হতে পারে। আক্রান্ত কোয়েলে হাঁচি, কাশি ও অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যায়। তবে নাক দিয়ে কোনো তরল পদার্থ নিঃসৃত হতে দেখা যায় না। কোনো কোনো সময় চোখ দিয়ে পানি পড়তে দেখা যায়। যেহেতু এটি ভাইরাসজনিত রোগ- তাই এর কোনো চিকিৎসা নেই। ব্যাকটেরিয়াজনিত মাধ্যমিক সংক্রমণ এড়াতে স্থানীয় পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন ।

ব্রুডার নিউমোনিয়া সম্পাদনা

বাচ্চা মুরগিতে ব্রুডার নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ছত্রাক অ্যাসপারজিলাস ফিউমিগেটাস বাচ্চা কোয়েলকে আক্রান্ত করতে পারে। দূষিত খাদ্য বা লিটার সামগ্রীর সংস্পর্শে অথবা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে দূষিত বস্তু গ্রহণে কোয়েল এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তীব্র প্রকৃতির রোগে ক্ষুধামন্দা, পিপাসা বৃদ্ধি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বাচ্চা শুকিয়ে যায় ও দুর্বল হয়ে পড়ে। শ্বাসকষ্টের কারণে বাচ্চা মুখ হা করে ঘাড় মাথা উপরের দিকে টান করে শ্বাস গ্রহণ করে।

কলিসেপটিসিমিয়া সম্পাদনা

ইসকেরিশিয়া কোলাই নামক ব্যাকটেরিয়া এ রোগ সৃষ্টি করে। বাচ্চা এবং বয়স্ক সব বয়সের কোয়েলই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এতে সচরাচর শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত হলেও অন্যান্য তন্ত্রও আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত রোগ লক্ষণ প্রাকাশের পূর্বেই পাখির মৃত্যু ঘটে। হঠাৎ পাখির মৃত্যু হার বেড়ে যায় এবং শ্বাসতন্ত্রের উপসর্গ, মুখ হা করে থাকা, নাকে মুখে ফেনা ওঠা, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি রোগ দেখা যায়।

রক্ত আমাশয় সম্পাদনা

মুরগির রক্ত আমাশয় সৃষ্টিকারী এককোষী পরজীবিগুলো কোয়েলকে আক্রান্ত করে না। তবে আইমেরিয়া উজুরা ও আইমেরিয়া সুনোডাই নামক এককোষী পরজীবি বাচ্চা কোয়েলকে আক্রান্ত করে। এতে রক্ত আমাশয় দেখা দেয়। বাচ্চা ঝিমাতে থাকে, দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রক্ত শূন্যতার কারণে পাখি মারা যায়।

স্পর্শজনিত চর্ম প্রদাহ সম্পাদনা

লিটার ও খাঁচা পদ্ধতিতে পালিত কোয়েলে প্রায় সময়ই এ রোগটি দেখা যায়। সাধারণত ৩/৪ মাস বা ততোধিক বয়সের কোয়েল আক্রান্ত হয়। এতে মর্দা কোয়েলের প্রজনন ক্ষমতা ও মাদী কোয়েলের ডিম উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। কাজেই কোয়েল খামারিদের এ রোগ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা অত্যন্ত জরুরি। কয়েকটি চর্মরোগ যেমন- হক বার্ন, ব্রেস্ট বিস্টার, স্কেবি হিপ সিন্ড্রোম প্রভৃতি রোগ সম্পর্কে খামারিদের ভালোভাবে জানতে হবে।