গণমাধ্যমের পরিচিতি/মিডিয়া আইন ও নীতিশাস্ত্র

ভূমিকা

সম্পাদনা

সৃষ্টির কোন একক সংস্থাই কোন না কোন ধরনের প্রবিধান বা পরিচালনা পর্ষদের ব্যবহার ব্যতিরেকে নিয়মতান্ত্রিক করা হয়নি। খাদ্য শিল্পের জন্য খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন রয়েছে। আমেরিকান পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়দের জন্য ন্যাশনাল ফুটবল লিগের কর্মকর্তারা আছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রয়েছে। মুদ্রণ এবং ডিজিটাল উভয় মাধ্যমের ক্ষেত্রেও একই কথা। ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন (এফসিসি) মিডিয়ার প্রতিটি বিভাগের পদ্ধতিগত কাজ পরিচালনা করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।[১] সবচেয়ে বেশি সরকারি নিয়ন্ত্রিত সংস্থা হল সম্প্রচার মাধ্যম। টেলিভিশন এবং রেডিও মাধ্যমের পেশাদাররা অনেক নিয়ম ও প্রবিধানের অধীন, যেগুলি লঙ্ঘন করলে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়। মুদ্রণ মাধ্যম, যেমন সংবাদপত্র এবং পত্রিকা, অনেকাংশে অনিয়ন্ত্রিত থাকলেও, অপবাদের মতো অপরাধের সাথে জড়িত সংবাদ প্রকাশিত হলে তার বিরুদ্ধে কেউ যদি মামলা করেন তাহলে বড় অর্থের খেসারৎ দিতে হতে পারে। প্রাথমিকভাবে ইন্টারনেটও মূলত অনিয়ন্ত্রিত, কিন্তু তথ্যের নির্দিষ্ট সম্প্রচারকারীদের ক্ষেত্রেও এই একই নিয়মের অনেকগুলি প্রযোজ্য।

নীতি ও আইন

সম্পাদনা

১৯৩৪ সালের যোগাযোগ আইনের মাধ্যমে এফসিসি গঠিত হয়েছিল, যোগাযোগের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি একটি সর্বাঙ্গীণ কাঠামো। যে কোন সংস্থার দ্বারা গৃহীত পদক্ষেপের ক্ষেত্রে সুবিধার জন্য একটি নীতি নেওয়া হয়।[২] ১৯৩৪ সালের যোগাযোগ আইন ছাড়া গণমাধ্যম জগতের কাজে নীতি হিসাবে পরিবেশন করার জন্য, মাধ্যম পেশাদারদের তাদের নিয়ন্ত্রক সীমানা বোঝার জন্য, কোনও স্পষ্ট এবং লিখিত নির্দেশিকা ছিল না। মুদ্রণযোগ্য নয় বা প্রচারের জন্য বেআইনি এমন কয়েকটি ধারণা বাদ দিয়ে, সম্প্রচার এবং মুদ্রণ সাংবাদিকরা তাদের খুশি মত লেখা এবং বলার ক্ষেত্রে স্বাধীন। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে পেশাদারদের যে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ পেশাদারেরা তার জন্য গর্ব অনুভব করে, বিশেষ করে "প্রেসের স্বাধীনতা" বিভাগের জন্য। তবে একটা সময় ছিল যখন কিছু সাংবাদিকদের জন্য এই স্বাধীনতা ছিলনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, এবং রাষ্ট্রপতি জন অ্যাডামস নোংরা রাজনীতি ব্যবহার করেছিলেন যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে উঠে আসে।

রাষ্ট্রপতি জন অ্যাডামস ১৭৯৮ সালের বৈদেশিক এবং রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে স্বাক্ষর করেন। ১৭৯৮ সালের বৈদেশিক এবং রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে চারটি ধারা ছিল যার মাধ্যমে সরকার "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক" বলে বিবেচিত বিদেশীকে কারারুদ্ধ ও নির্বাসিত করার ক্ষমতা পেয়েছিল এবং মার্কিন নাগরিকদের পক্ষে সরকার সম্পর্কে মিথ্যা, কলঙ্কজনক ও বিদ্বেষপূর্ণ লেখা মুদ্রণ, উচ্চারণ বা প্রকাশ করা অবৈধ হয়ে গিয়েছিল।[৩] এই আইনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সীমা পরীক্ষা করা হয়েছিল। রাষ্ট্রদ্রোহ আইনটি গণতান্ত্রিক-রিপাবলিকান সংবাদপত্রের সাংবাদিক এবং সম্পাদকদের লক্ষ্য করে তৈরি হয়েছিল কারণ তাদের ফেডারেলবাদী (যুক্তরাষ্ট্রীয়) নীতির সমালোচনাকে রাজদ্রোহ বলে মনে করা হয়েছিল। সেই সময়ে কংগ্রেস ফেডারেল-নিয়ন্ত্রিত ছিল, তাই চারটি আইন সহজেই পাস করা গিয়েছিল। আইন পাশ হওয়ার পর গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে সমালোচনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। ১৮০০ সালের নির্বাচনে এটি ফেডারেলবাদীদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিল। তাদের পরাজয়ের পরে, আইনগুলি প্রত্যাহার করা হয়েছিল বা তামাদি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

সাধারণত, পরিচালক সংস্থাগুলি সময়কাল, অঞ্চল, জনসাধারণ ইত্যাদি মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে আইন তৈরি, খসড়া এবং পাস করে। ১৭৯৮ সালে, জনসাধারণ এই বিশ্বাস করেছিল যে একটি নির্দিষ্ট আচরণ (পরিচালক সংস্থার সমালোচনা করে এমন বিষয়বস্তু প্রকাশ করা) আইন দ্বারা শাস্তিযোগ্য। অতএব, বৈদেশিক এবং রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পাস মেনে নেওয়া হয়েছিল। আজকের দিনে এই আইন পাস করা অসম্ভব না হলেও অনেক বেশি কঠিন হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা গর্ব করে যে যতক্ষণ না তারা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত যুক্তিসঙ্গত আইনের সীমানা লঙ্ঘন করছে, তারা স্বাধীনভাবে যা খুশি বলতে এবং করতে পারে। অনেক দেশেই এই একই অধিকার দেওয়া হয়না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাকস্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন আলোতে দেখেছে, এটি আজ আদর্শের একটি উদাহরণ।

মানদণ্ড বলতে বোঝায় কর্তৃপক্ষের দ্বারা অথবা তুলনার ভিত্তিতে সাধারণ সম্মতি দ্বারা বিবেচিত নীতি। ১৭৯৮ সালে আমেরিকায় মুদ্রণ মাধ্যমের মানদণ্ড অনুযায়ী সরকার সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক নিবন্ধকে অপজ্ঞান করা হয়েছে এবং লেখক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।[৪] ২০১৩ সালে মুদ্রণ মাধ্যমের জন্য আমেরিকান মানদণ্ড অনুযায়ী, একজন আমেরিকান নাগরিকের ক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকারগুলির মধ্যে একটি বলে বিবেচনা করা হয়। আমেরিকান সরকারের সমালোচনার মধ্যে যতক্ষণ না পর্যন্ত অপবাদের কোন উপাদান না থাকে (এটি পরে অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে) তা আজ সম্পূর্ণরূপে গ্রহণযোগ্য। প্রকৃতপক্ষে, পর্যাপ্ত, বাস্তব সমর্থনকারী যুক্তি সহ উপযুক্ত পদ্ধতিতে সমালোচনা করা হলে তার প্রশংসা করা হয়।

নৈতিক সাংবাদিকতা কি?

সম্পাদনা

কিছু লোকের ধারণা যে, মুদ্রণ মাধ্যম সম্পূর্ণভাবে অনিয়ন্ত্রিত। এখানে লেখকেরা জনসাধারণের সম্বন্ধ কখনো কখনো যেসব অপবাদ দেয় এবং মিথ্যা বানানো গল্প প্রকাশ করে প্রায়শই যেসব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সেইসব নিয়ে তাদের কোন বিবেচনা নেই। যদিও কিছু সাংবাদিককে "রসালো" গল্প (যেমন জ্যানেট কুকের পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী নিবন্ধ, "জিমি'স ওয়ার্ল্ড") তৈরি করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তবুও অনেক লেখক আছেন যাঁরা সাংবাদিকতার সততা বজায় রাখার জন্য সত্য ছাড়া আর কিছুই প্রকাশ করেন না। 'সঠিক' এবং 'অসত্য'র মধ্যে পার্থক্য বোঝার ক্ষেত্রে সদস্যদের সাহায্য করার জন্য সংগঠনগুলির দ্বারা একটি নিয়মাবলী নৈতিকতার সংহিতা গৃহীত হয়েছিল। এটি মেনে চলে এবং নিজেদের সিদ্ধান্তে সেই উপলব্ধি প্রয়োগ করে, সাংবাদিকরা তাদের সততা অক্ষুণ্ণ রাখে। 'দ্য সোসাইটি অফ প্রফেশনাল জার্নালিস্ট'স কোড অফ এথিক্স'-এ দায়বদ্ধ হওয়া, ক্ষতি কম করা এবং স্বাধীনভাবে কাজ করা সংক্রান্ত করণীয় এবং না করণীয়গুলির একটি তালিকা রয়েছে।[৫]

তবে একথা বলতেই হবে, বছরের পর বছর ধরে অনেক প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পর সাংবাদিকতার সততা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। খবরের সূত্রের সাথে যোগাযোগ করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। একটি দ্রুত ইমেল বা ফোন কলের মাধ্যমেই সূত্রের সাথে যোগাযোগ করে নেওয়া যায়, শারীরিকভাবে গিয়ে দেখা করার প্রয়োজন পড়েনা। যোগাযোগের এই সহজলভ্যতা সম্ভবত কিছু সাংবাদিককে অলস করে তুলেছে। ইমেলে বা মোবাইল ফোনে ক্রমাগত উত্তর না পেলে, পরবর্তী কোন পদক্ষেপ না নিয়ে বা "মন্তব্য করতে অস্বীকৃত" বাক্যাংশটি ব্যবহার না করে, কিছু সাংবাদিক তাঁদের গল্পগুলিকে অর্ধ-সত্য এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা দিয়ে সাজিয়ে লেখেন। কেউ কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা ব্যক্তি সম্পর্কে কি অনুভব করে তা প্রকাশ করা তো অনেক দূর, সত্য তথ্য সামনে আনতে সম্পূর্ণরূপে অবহেলা করা হয়। মুদ্রণ মাধ্যমের জগতে, যে লেখার ধরনে পক্ষপাতমূলক টিপ্পনি এবং বিষয়ভিত্তিক মন্তব্য থাকে তাকে মতামত সম্পাদকীয় বলা হয়।

পক্ষপাত হল একটি বিশেষ প্রবণতা বা আগ্রহ, যার দ্বারা একটি স্বাভাবিক প্রশ্নকে নিরপেক্ষ বিবেচনা করা হয় না। সংক্ষেপে, এটি ব্যক্তিগত মতামতের ভিত্তিতে প্রদান করা একটি রায়। পক্ষপাতদুষ্ট লেখার বিপরীতে, সাংবাদিকতার কাজে পক্ষপাতহীন লেখা প্রত্যাশা করা হয়। আশা করা হয়, সাংবাদিকরা বিষয়নিষ্ঠ থাকবেন এবং কোন মতামত না দিয়ে শুধুমাত্র তথ্যের প্রতিবেদন করবেন। পক্ষপাতমূলক লেখায় পাঠকদের জন্য নিজস্ব অনুমান বা বিচার করার কোন সুযোগ থাকে না।[৬] যখন একজন লেখক একটি নিবন্ধে নিজের মতামত অন্তর্ভুক্ত করেন, তখন পাঠকেরা ধরে নেয় যে কাজটি একটি বিষয়নিষ্ঠ দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়েছে। তারা সত্য এবং মতামতের মধ্যে পার্থক্য করে না। এর দ্বারা লেখকের কাজটি সম্ভবত পাঠকদের একই সিদ্ধান্ত নিতে পরিচালিত করতে পারে এবং এটি একই লেখক বা কয়েকজন লেখক দ্বারা পুনরাবৃত্তিমূলকভাবে করা হলে এটি বহুলাংশে একটি একতরফা প্রকাশনা তৈরি করতে পারে।

আজকের সবচেয়ে সফল মুদ্রণ এবং সম্প্রচার মাধ্যমের সাংবাদিকদের একটি বড় অংশ সম্পাদকীয় এবং ব্লগ ও ভ্লগের মত অন্যান্য মতামতযুক্ত বিষয়বস্তু প্রকাশ করে প্রচারের আলোয় এসেছে। আধুনিক আমেরিকান সংস্কৃতি এবং সরকার দ্বারা নির্ধারিত মানদণ্ডগুলি সংমিশ্রিত হওয়ার ফলে- সরকার, মাধ্যমের অন্যান্য সদস্য এবং অন্যান্য অনেক বিষয় ও জনগণ সম্পর্কে তাদের অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট বিবৃতি ও অনুমান সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। যদিও কিছু মুদ্রণ এবং সম্প্রচার মাধ্যমের পেশাদাররা আমেরিকান সংস্কৃতির মানদণ্ড অনুসারে নৈতিক থাকার ক্ষমতা নিয়ে গর্ব অনুভব করে, কেউ কেউ কিন্তু প্রতিটি সম্প্রচার এবং প্রতিটি মুদ্রিত নিবন্ধ তৈরি করে নৈতিকতার প্রতিবন্ধকতা ভঙ্গ করার অভিপ্রায় নিয়ে। নৈতিকতার বিচার গণমাধ্যমের জগতে একটি ঘনিষ্ঠ আহ্বান কারণ বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থার ক্ষেত্রে নানারকম ধারণা এবং বিশ্বাস নৈতিকতার মাপকাঠিতে বিভিন্ন সারিতে চলে আসে।

নৈতিকতা হল একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষের কর্ম বা একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে স্বীকৃত আচরণের নিয়ম। যখন ব্যক্তিরা গণমাধ্যম জগতের একটি অংশ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তাদের অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট মাত্রার ন্যায়পরায়ণতা এবং নৈতিকতার সাথে কাজ করতে হবে।[৭] এই কাজের মধ্যে মন্তব্যের আখ্যা দেওয়া এবং বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রতিবেদকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট স্বীকৃতি না পাওয়া গেলে প্রসঙ্গের বাইরে করা যে কোনও তথ্যের দায়িত্ব প্রতিবেদকের কাঁধেই এসে পড়ে এবং একে পাঠকের বোঝার ভুল হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক নয়। সংবাদ প্রতিবেদন এবং প্রচার বা পক্ষসমর্থনের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য থাকা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে, লেখকেরা একটি কোম্পানি, ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থার পক্ষে স্পষ্টভাবে তাদের সমর্থনে তথ্য প্রকাশ করে, যা পাঠকদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে বিষয়টি আসলে যা আছে তার চেয়ে অনেক বেশি।

গণমাধ্যম জগতের স্বীকৃত আচার-আচরণ বিধি মেনে চললে, সেই মাধ্যমের সদস্য হিসেবে, কোন ব্যক্তির নিজের কাজ বিশ্বাসযোগ্যভাবে সম্পন্ন করতে কোন সমস্যা হওয়া উচিত নয়। বিশ্বাসযোগ্যতা মানে শালীনতা এবং সততার মানদণ্ড মেনে চলা। একটি কাজের ফলাফল নির্বিশেষে, একজন লেখক, প্রযোজক, চিত্রগ্রাহক ইত্যাদির সবসময় এই ধারণা নিয়ে কাজ করা উচিত যে সে যেন তার কাজের বিশ্বাসযোগ্যতার পেছনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে পারে।[৮] গণমাধ্যমের একজন পেশাদারের সম্বন্ধে শ্রোতা, দর্শক বা পাঠকবর্গের সাধারণ বিশ্বাস এই থাকে যে মানুষটি সঠিক নৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষয়টিকে এমনভাবে মোকাবিলা করবে যা সৎ ও ন্যায্য হবে এবং এতে কোনও সংশ্লিষ্ট পক্ষের অধিকার পদদলিত হবেনা। কিছু বিষয়ে নৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম বড় ভূমিকা পালন করে। তাই দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিরপেক্ষতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা।

গণমাধ্যমে নিরপেক্ষতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা

সম্পাদনা

গণমাধ্যমের ভোক্তা হিসাবে, জনসাধারণের এটা ধরে নেওয়ার অধিকার রয়েছে যে, যদি না অন্যথায় উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যমের উৎস দ্বারা উৎপাদিত সবকিছু সত্য এবং তাকে নিরপেক্ষ ও বিষয়মুখী দৃষ্টিকোণ থেকে প্রচার করা হচ্ছে।[৯] নিরপেক্ষ হওয়ার অর্থ সমদর্শী, ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গত হওয়া। আসলে নিরপেক্ষ থাকা হল সমদর্শী থাকার একটি প্রতিশব্দ। অনেক সময়, গণমাধ্যমের পেশাদাররা শুধুমাত্র একটি সত্য যাচাই করে বা শুধুমাত্র একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে কাজ প্রকাশ করে। এটি নিরপেক্ষ কাজ নয়। যদি একটি ঘটনায় দুটি পক্ষ জড়িত থাকে, তবে প্রতিবেদকের নৈতিকতা হল সেই ঘটনার উভয় পক্ষের প্রতিবেদন প্রকাশ করা। কোন ক্ষেত্রে একটি পক্ষ সাড়া না দিলে, প্রতিবেদককে অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে যে সে একাধিকবার উৎসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করেছে কিন্তু কোনও উত্তর পায়নি। প্রতিবেদকের যে সাংবাদিকতার প্রতি সততা রয়েছে এবং সে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে লেখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে, এটি তারই প্রমাণ হিসাবে কাজ করবে।

অনেকটা নিরপেক্ষতার মতোই, বস্তুনিষ্ঠতা হল লেখার একটি উপাদান, যার অর্থ এটি ব্যক্তিগত অনুভূতি, ব্যাখ্যা বা কুসংস্কার দ্বারা প্রভাবিত হয় না। লেখাটি বস্তুনিষ্ঠ হলে সেটি সত্য নির্ভর হবে। বস্তুনিষ্ঠতা না থাকলে, পাঠক বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় যে, লেখক অসত্য তথ্য, যেমন সহজ একটি সাধারণ মতামত, দিয়েছে। একজন বস্তুনিষ্ঠ লেখকের উচিত মতামতের প্রকাশ্য আদান-প্রদানকে সমর্থন করা, এমনকি সেগুলি তার কাছে বিরক্তিকর বা বিদ্বেষপূর্ণ মনে হলেও। উপরন্তু, তার উচিত গতানুগতিকতাকে এড়িয়ে যাওয়া।[১০] যদি লেখার মধ্যে সামাজিক মর্যাদা, শারীরিক প্রতিবন্ধী গোষ্ঠী, যৌন অভিমুখীতা, ভূগোল, জাতিসত্তা, ধর্ম, বয়স, লিঙ্গ বা বর্ণ সম্বন্ধে অপমানজনক বা অবমাননাকর কিছু থাকে, তবে সে লেখা কোনভাবেই বস্তুনিষ্ঠ হবেনা। লেখকের একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সাথে কোনও সমস্যা থাকুক বা না থাকুক, প্রকাশনার পাঠকদের উপর নিজের মূল্যবোধ চাপিয়ে দেওয়া তার পক্ষে কখনই ঠিক নয়। সংবাদ এবং বিজ্ঞাপনের সংকর মিলন এড়িয়ে কিছুটা বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখাও বুদ্ধিমানের কাজ। সংবাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বিজ্ঞাপন পাঠক এবং দর্শকদের বিভ্রান্ত করতে পারে এবং সংবাদের উৎসের সাথে নীতিগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

পেশাদার মাধ্যম জগতে অনেক নৈতিকতার সমস্যা দেখা দিতে পারে, কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মানহানি, ব্যঙ্গ এবং অপবাদ। এই তিনটি শব্দ নিয়ে প্রায়ই একে অপরের সাথে বিভ্রান্তি দেখা যায়। ব্যঙ্গ ও অপবাদ মানহানির আওতায় পড়ে। মানহানি হল ব্যঙ্গ বা মানহানির মাধ্যমে অন্যের সুনামকে মিথ্যা বা অন্যায়ভাবে আঘাত করা। গণমাধ্যমের জগতে, সুনাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু মানুষের জন্য, সুনামই তাদের সব। যখন একজন ব্যক্তির সুনাম ক্ষুন্ন করা হয়, তখন যে দায়ী (যদি সে নিজেই দায়ী না হয়) তাকে অবশ্যই আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। মানহানি এমন একটি বিষয়, যেটি নিয়ে প্রায়ই আদালতে মামলা হয়।[১১] যদি এমন হয়, ভোক্তা যা ভেবেছে ব্যক্তি তা বলতে চায়নি, তবুও সে ভোক্তার মানহানির জন্য দায়ী। একজন সাধারণ পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে, সেটিই আদালতে গ্রাহ্য হবে। কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা বা সংস্কৃতি সম্বন্ধে অবিশ্বস্ত, অলস, দুর্নীতিগ্রস্ত, আর্থিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত, অপরাধী, অসৎ বা অযোগ্য বলে করা এমন যেকোন মন্তব্যই মানহানির মামলার ভিত্তি হতে পারে।

ব্যঙ্গ এবং অপবাদ উভয়ই মানহানির আওতায় পড়ে। যদিও উভয় পদই একজন ব্যক্তির খ্যাতি নষ্ট করার মতো মিথ্যা বিবৃতিকে নির্দেশ করে, তবুও উভয়ের মধ্যে পার্থক্য খুবই সহজ। ব্যঙ্গ হল লিখিত বা মুদ্রিত আকারে কারও সম্পর্কে মিথ্যা, মানহানিকর দাবির ব্যবহার। অপবাদ হল কারো সম্বন্ধে মিথ্যা, মানহানিকর দাবির ব্যবহার মৌখিকভাবে বা অন্য কোন ক্ষণস্থায়ী আকারে করা।[১২] প্রায়শই মানহানির প্রতিশব্দ হিসাবে অপবাদ অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহৃত হয়, এটি বেশি ব্যবহার হয় কারণ লোকেরা তাদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা জিনিসগুলির চেয়ে তাদের নামের সাথে সংযুক্ত লিখিত শব্দগুলি নিয়ে বেশি চিন্তা করে।

যখন ব্যক্তিরা অন্যদের সম্পর্কে অসত্য বিবৃতি বলে বা লেখে, তখন তারা সাধারণত ব্যক্তি সম্পর্কে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে থাকে বা তথ্য পাওয়ার জন্য তার গোপনীয়তাকে আক্রমণ করে এবং ভুল তথ্য পায়। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিশ্ব যে বিশাল অগ্রগতি করেছে, সেখানে কোন তথ্য সত্য হোক বা অসত্য, কার্যত আলোর গতিতে ভ্রমণ করে। আগে সংবাদপত্রে ব্যঙ্গাত্মক, মানহানিকর মন্তব্য একটি সাধারণ প্রত্যাহার দ্বারা ফিরিয়ে নেওয়া হত। আজ, পত্রিকা, সংবাদপত্র, বই, ওয়েবসাইট, ব্লগ, ভ্লগ এবং আরও অনেক কিছুতে তথ্য প্রকাশিত হয়। তথ্য অধিগত করার এই আধিক্যের ফলে একজন ব্যক্তির এমন কাউকে থাকা প্রয়োজন যে তার প্রতিনিধিত্ব করবে।

একজনের গোপনীয়তার ওপর আক্রমণ বেআইনি হলেও দুর্ভাগ্যবশত খুবই সাধারণ অভ্যাস, এবং এগুলি কিছু প্রকাশনার তথ্য অর্জনে ব্যবহৃত হয়। গোপনীয়তা হল একজনের ব্যক্তিগত জীবন বা বিষয়ে অনুপ্রবেশ বা উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকার অবস্থা। একজন গণমাধ্যম পেশাদার তথ্য পাওয়ার জন্য কতদূর যেতে পারে সে সম্পর্কে কয়েকটি আশ্চর্যজনক ঘটনা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সমাজের একটি গণ জমায়েতে মাধ্যম থেকে গোপনীয়তার সামান্য বা কোনই অধিকার নেই।[১৩] অনেক সময়, যখন টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে দেখা যায় মানুষজনে ভরা ব্যস্ত রাস্তা, দর্শকরা ধরে নেয় যে এদের সবাইকে বলা হয়েছিল যে তাদের বিজ্ঞাপনে দেখা যাবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, তাদের বলা হতেও পারে। তবে ক্যামেরার উপস্থিতি সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকা বেআইনি নয়। যদি একটি গণ জমায়েতে সবাই তোমাকে দেখতে পায়, তাহলে ব্যক্তি সম্পর্কে লেখার, ব্যক্তিরা কি করেছে এবং সেইসাথে ব্যক্তিদের ছবি তোলার অধিকার মাধ্যমের আছে।

গণমাধ্যমের পেশাদাররা যে জনসমক্ষে লোকেদের ছবি তুলতে এবং তাদের সম্পর্কে লিখতে পারে তা হল মাধ্যম রাজনীতির একটি অংশ। রাজনীতি হল প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলী পরিচালনার অনুশীলন বা পেশা।[১৪] কিন্তু কখনো কখনো মাধ্যমের কিছু পেশাদার কর্মী সরকার এবং মাধ্যমের নৈতিক বিধি দ্বারা নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করে। যখন একজন ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে তার গোপনীয়তাকে আক্রমণ করা হয়েছে বা তার সম্পর্কে মানহানিকর বিবৃতি প্রকাশ বা প্রচার করা হয়েছে, তখন সে প্রায়ই নিজেকে রক্ষা করার জন্য একজন জনসংযোগ কর্মকর্তাকে সাহায্যের আহ্বান জানায়।

মাধ্যম প্রবিধান এবং সেন্সরশিপ

সম্পাদনা

প্রথম সংশোধনী হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের একটি সংশোধনী, যা স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়; এর মধ্যে সমাবেশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং ধর্মের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত। শব্দার্থ অনুযায়ী, এতে লেখা আছে, “কংগ্রেস এমন কোন আইন প্রণয়ন করবে না, যা ধর্মের প্রতিষ্ঠাকে সম্মান করে বা এর অবাধ অনুশীলনকে নিষিদ্ধ করে অথবা বাক স্বাধীনতা, বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সংক্ষিপ্ত করে; অথবা জনগণের শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়ার এবং অভিযোগের প্রতিকারের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করার অধিকারকে নিষিদ্ধ করে।[১৫] অনেকেই মনে করে যে প্রথম সংশোধনীটি কপিরাইট দ্বারা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে আছে এটির অনুলিপি, লাইসেন্স করার একচেটিয়া অধিকার। অন্যথায় সাহিত্যিক, সাঙ্গীতিক, বা শৈল্পিক কাজের মুদ্রণ, অডিও, ভিডিও, ইত্যাদি ব্যবহার করার সুযোগ আছে।[১৬] যদিও কপিরাইট এবং প্রথম সংশোধনী উভয়ের মাধ্যমেই নানাবিধ কাজের সৃষ্টি ও প্রচারকে উৎসাহিত করার সুযোগ আছে, কিন্তু সেই লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য দুই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন উপায় ব্যবহার করা হয়।

গণমাধ্যমের পেশাদারদের অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে তাদের যে সামাজিক অবস্থান, সেই অনুযায়ী তাদের ন্যায়পরায়ন হয়ে কাজ করতে হবে। এই কারণে, ন্যায্যতা মতবাদ তৈরি করা হয়েছিল। কোন সম্প্রচারককে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ন্যায্যতা মতবাদ পর্যাপ্ত ইতিবাচক দায়িত্ব আরোপ করে এবং এটি বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে মোটামুটিভাবে প্রতিফলিত করে। ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়ই বিতর্ককে উত্তপ্ত করে তোলে। সেই ক্ষেত্রে, বিবাদে জড়িত পক্ষগুলি নিজেদের পক্ষের কথা বলার জন্য কোন একটি গণমাধ্যম কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ক্ষেত্রে, একজন রাজনৈতিক প্রার্থী বক্তৃতা দেওয়ার জন্য একদিন সকালে একটি রেডিও স্টেশনে আসতে পারেন। ন্যায্যতা মতবাদ অনুযায়ী বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি সহ যেকোনো প্রার্থীকেও সেই অনুষ্ঠানে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে।

ন্যায্যতা মতবাদের পাশাপাশি, সম্প্রচারকারীরা পূর্ব-সংযমের মতবাদের নিয়ম ও প্রবিধানের অধীন। পূর্ব-সংযমের মতবাদ বলে যে প্রথম সংশোধনী ফেডারেল সরকারকে সেই সংশোধনীর সীমানার মধ্যে থাকা মত প্রকাশের যেকোন ক্ষেত্রে, পূর্ব-সংযমের কোনো ব্যবস্থা আরোপ করতে নিষেধ করে, তবে এর কিছু কিছু সীমিত ব্যতিক্রম আছে।[১৭]

গণমাধ্যম নীতিশাস্ত্রের মধ্যে নৈতিকতা এবং তার ব্যবহার করা রয়েছে। সম্প্রচার এবং মুদ্রণ উভয় সাংবাদিকতাতেই নৈতিকতার মধ্যে আছে সঠিক এবং সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা। এর মধ্যে সততাও রয়েছে, যা আগের অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছিল এবং তাকে সরল বিশ্বাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সাংবাদিকতায় নৈতিকতার একটি অভাব হল উৎকোচ, যেটি হল কোন পণ্য, পরিষেবা ইত্যাদির প্রচারের বিনিময়ে নিজের অবস্থান, প্রভাব বা সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে একটি গোপন বা ব্যক্তিগত অর্থ প্রদান।[১৮] উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন রেডিও ব্যক্তিত্ব ক্রমাগত বলে যে একটি নির্দিষ্ট রেস্তোরাঁ তার পছন্দের জায়গা এবং শ্রোতাদের সুবিধাটি পরীক্ষা করতে বলে, তবে এটি আইনী। যাইহোক, যদি জানা যায় যে ব্যক্তিটি রেডিওতে এটি প্রচারের বিনিময়ে ম্যানেজারের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেছে, তাহলে সেটি উৎকোচ বলে বিবেচিত হবে, যা খুবই বেআইনি।

একটি দ্বিতীয় অনৈতিক কাজ যা কখনও কখনও পেশাদার মাধ্যম জগতে সংঘটিত হয় তা হল উৎস সম্পর্কে মিথ্যা বলা। কখনও এমন হতে পারে যে কোন ঘটনার সূত্র বৈধ, কিন্তু মাধ্যমের সাথে কথা বলার সময় তারা বেনামী থাকতে চায়, সেই ঘটনার প্রকাশ আইনী।[১৯] এই ক্ষেত্রে, রক্ষণ আইন (শিল্ড ল) লেখক এবং উৎস উভয়কে রক্ষা করে। রক্ষণ আইন হল এমন একটি আইন যা সাংবাদিকদের তাদের পেশাগত ক্ষমতায় প্রাপ্ত গোপনীয় তথ্য বা তথ্যের উৎসগুলিকে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রকাশ না করার অনুমতি দেয়। কর্মক্ষেত্রে এই আইনের সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণগুলির মধ্যে একটি হল জুডিথ মিলারের গল্প। জুডিথ মিলার একজন আমেরিকান সাংবাদিক যিনি প্লেম অ্যাফেয়ারে জড়িত ছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসের একজন সাংবাদিক হিসাবে, জুডিথ মিলার ভ্যালেরি প্লেম এবং তার স্বামী জোসেফ উইলসন সম্পর্কে একটি গল্পের বিষয়ে তাঁর উৎস প্রকাশ করতে অস্বীকার করেছিলেন।

ফটো সাংবাদিকতায় নৈতিকতা

সম্পাদনা

গণমাধ্যমে কথ্য এবং লিখিত শব্দের সাথে নৈতিকতার যতটা সম্পর্ক রয়েছে ততটাই আছে আলোকচিত্রের সঙ্গে। "একটি ছবি হাজার কথা বলতে পারে" এই প্রাচীন প্রবাদটি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সত্য। পাঠকদের জানানোর জন্য একটি নিবন্ধ বলা বা লেখা সহজ, কিন্তু নিবন্ধটি জীবন্ত হয়ে ওঠে যখন এর সঙ্গে ছবি থাকে। যাইহোক, সাংবাদিকতার অন্য যেকোন দিকের মতো, আলোকচিত্রকেও অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

কখনও কখনও, দর্শকদের নিপুনভাবে পরিচালনা করার জন্য ছবি ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ও জে সিম্পসনের বিচারের সময় নিউজউইক এবং টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ব্যবহৃত তাঁর ছবির কথা বিবেচনা করা যাক। তাঁর মুখাবয়বের ছবি নিউজউইক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে সাধারণভাবে এবং অপরিবর্তিতভাবে মুদ্রিত হয়েছিল। কিন্তু, বিতর্কিত প্রছদের জন্য পরিচিত টাইম ম্যাগাজিন ছবিটির একটি কম রেজোলিউশনের মুদ্রণ ব্যবহার করেছিল এবং ছবির চারপাশ বিবর্ণ অন্ধকার করে রেখেছিল। ছবিটিতে ও জে সিম্পসনকে বিদ্বেষপূর্ণ দেখাচ্ছিল এবং তার ফলে নিবন্ধটি পড়ার আগেই পাঠকেরা এই অ্যাথলিট এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে মতামত তৈরি করে ফেলেছিল।[২০]

ছবি নিয়ে চতুর নিয়ন্ত্রণ অনৈতিক আলোকচিত্র সাংবাদিকতার একমাত্র উদাহরণ নয়। কিছু ক্ষেত্রে, ছবিগুলি এমন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হতে পারে যেখানে তাদের প্রয়োজন নেই বা অনুপযুক্তভাবে স্পষ্টীকৃত।[২১] উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ওসামা বিন লাদেনকে ধরা এবং হত্যা করা, আফগানিস্তানের যুদ্ধ এবং বোস্টন বোমা হামলার শিকারদের ছবি। কিছু সাংবাদিকের কাছে, পাঠকদের মনে যুদ্ধের বাস্তবতা তাজা রাখার জন্য ভয়ঙ্কর আঘাতের চিত্রিত যুদ্ধের ছবি প্রকাশ করা প্রয়োজন। অন্য কথায়, যারা যুদ্ধের সাথে জড়িত নয় বা যে দেশে যুদ্ধ সংঘটিত হচ্ছে সেখানে বাস করে না, এই ধরনের মানুষের ওপর যুদ্ধের প্রভাব অনেকটা "দৃষ্টির বাইরে, মনের বাইরে"র মতো।[২২] বিন্যস্ত সৈন্যদল বা উর্দিধারী সৈনিকের ছবি দেখলেও লোকেরা তাদের প্রতি নিস্পৃহ হয়েই থাকে। কিছু সাংবাদিক যুক্তি দেখান যে অঙ্গহীন বা রক্তাক্ত শরীর সহ সৈন্য এবং বেসামরিক লোকদের ছবি ব্যবহার করলে একটি "রসালো" গল্প তৈরি হয় বা পাঠকদের হৃদয়তন্ত্রীতে আঘাত করে। যাইহোক এটি সত্য যে ছবিতে থাকা ব্যক্তিদের পরিবার এবং বন্ধুদের কাছে তাদের প্রিয়জনদের এই ধরনের ভয়ঙ্কর চিত্র সহ্য হবে না।


গণমাধ্যম আইন এবং নীতিশাস্ত্রের ভবিষ্যত

সম্পাদনা

পঞ্চম এস্টেট (সমসাময়িক সমাজে কিছু অন্য দৃষ্টিভঙ্গির গোষ্ঠীর একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গ এবং এটি ব্লগার, অ-মূলধারার মাধ্যম সম্প্রচারগুলিতে প্রকাশকারী সাংবাদিক এবং সামাজিক মাধ্যমের সাথে সবচেয়ে বেশি যুক্ত) বৃদ্ধি পেতে থাকায়, চতুর্থ এস্টেটের (প্রেস, সাংবাদিকতা) আরও বেশি সংখ্যক সদস্য বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন এবং সরাসরি মিথ্যা সম্প্রচার সংবাদ মাধ্যমকে অখ্যাতি এনে দিয়েছে। গণমাধ্যম আইন এবং নীতিশাস্ত্রের ভবিষ্যত নড়বড়ে বলে মনে হচ্ছে কারণ সেখানে আরও ফাঁক তৈরি হয়েছে; যাইহোক, কার্যত অনিয়ন্ত্রিত এই শিল্প এখনও অলিখিত নৈতিকতার কোডের কাছে দায়বদ্ধ, এমনকি অনেক গণমাধ্যমের প্রচারের ডিজিটাইজেশনের ফলে পেশাদার মাধ্যমের সদস্য সংখ্যা কম হয়ে গেছে।

ডিজিটাইজেশন, যার অর্থ কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য তথ্যকে ডিজিটাল আকারে রূপান্তরিত করা, সেটি অনেক অপেশাদার মিডিয়া কর্মীকে পেশাদার হিসেবে ধারণা দিয়েছে।[২৩] তারা ইন্টারনেটে যে কাজগুলি উপস্থাপন করে, যেগুলি পেশাদার বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সেগুলি কখনও কখনও বিব্রতকরভাবে ভুল এবং অবৈধ। এর ফলে, সমাজ সমস্ত মাধ্যমের সম্প্রচারগুলিকেই একসাথে প্রতারণামূলক, অনাস্থাভাজন এবং অবিশ্বাস্যের মতো শব্দ দিয়ে বর্ণনা করে।

মাধ্যমের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি যেমন ব্লগ ও মাইক্রোব্লগ, ফটো শেয়ারিং সাইট, ডিজিটাল গল্প বলা, মেশিনিমা (চলচ্চিত্রের বৈশিষ্ট্যযুক্ত একটি উৎপাদন তৈরি করতে রিয়েল-টাইম কম্পিউটার গ্রাফিক্স ইঞ্জিন, মেশিন+সিনেমা), ক্লাউড কম্পিউটিং, পডকাস্ট, রাইটিং কমিউনিটি এবং গুগল টুলসের সাহায্য নির্মাতাদের জন্য কল্পনার সীমারেখা উন্মুক্ত করে তুলেছে। ব্যবহারকারী এবং ডেভেলপাররা কিছু মিডিয়া সৃষ্টির উপর কাজ করা এবং সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে যেখানে মাধ্যম আইন ও নৈতিকতার ভবিষ্যত পরিমার্জিত করতে হবে এবং সম্পূর্ণ নতুন মাধ্যম প্রযুক্তি মাধ্যম জগতে তাৎপর্যপূর্ণ গুরুত্বের বিষয় হবে।

মূল শব্দাবলী

সম্পাদনা

১৭৯৮ সালের বৈদেশিক এবং রাষ্ট্রদ্রোহ আইন - চারটি আইন যা সরকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক বলে বিবেচিত বিদেশীদের বন্দী ও নির্বাসনের ক্ষমতা দিয়েছে এবং আমেরিকান নাগরিকদের জন্য সরকার সম্পর্কে মিথ্যা, কলঙ্কজনক এবং বিদ্বেষপূর্ণ লেখা ছাপানো, উচ্চারণ করা বা প্রকাশ করা বেআইনি করে দিয়েছে।
পক্ষপাত - একটি নির্দিষ্ট প্রবণতা বা ঝোঁক, বিশেষত এমন একটি, যা একটি প্রশ্নের পক্ষপাতশূন্য বিবেচনাকে বাধা দেয়
নৈতিকতার সংহিতা - "সঠিক" এবং "অসত্য"র মধ্যে পার্থক্য বুঝতে এবং তাদের সিদ্ধান্তে সেই বোঝাপড়াকে প্রয়োগ করতে সদস্যদের সহায়তা করার জন্য সংস্থাগুলির দ্বারা গৃহীত একটি কোড
কপিরাইট - অনুলিপি, লাইসেন্স করার একচেটিয়া অধিকার, অন্যথায় সাহিত্যিক, সাঙ্গীতিক, বা শৈল্পিক কাজের মুদ্রণ, অডিও, ভিডিও, ইত্যাদি ব্যবহার করার সুযোগ
মানহানি - অন্যের সুনামের ওপর মিথ্যা বা অন্যায় আঘাত, যেমন অপবাদ বা মানহানি দ্বারা
ডিজিটাইজেশন - একটি কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য তথ্য ডিজিটাল ফর্মে রূপান্তর করা
পূর্ব সংযমের মতবাদ - একটি মতবাদ যা মনে করে যে প্রথম সংশোধনী ফেডারেল সরকারকে সেই সংশোধনীর সীমানার মধ্যে থাকা অভিব্যক্তির যেকোন ক্ষেত্রে, কিছু সীমিত ব্যতিক্রম সহ, পূর্ববর্তী সংযমের কোন ব্যবস্থা আরোপ করতে নিষেধ করে
নৈতিকতা - মানুষের কর্মের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর বা একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে স্বীকৃত আচরণের নিয়ম
ন্যায্যতা মতবাদ - একটি মতবাদ যা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি সম্প্রচারকারীর উপর ইতিবাচক দায়িত্ব আরোপ করে যা পর্যাপ্ত এবং ন্যায্যভাবে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে
ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন - মিডিয়ার প্রতিটি বিভাগের পদ্ধতিগত কার্য পরিচালনার জন্য তৈরি করা কমিশন
পঞ্চম এস্টেট - যারা মূলধারার মিডিয়া আউটলেট নয়, যেমন ব্লগার
প্রথম সংশোধনী - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের একটি সংশোধনী যা স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়; সমাবেশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা এর অন্তর্ভুক্ত
চতুর্থ এস্টেট - মানুষ এবং সংস্থা যারা খবরের প্রতিবেদন করে
সরল বিশ্বাস - শালীনতা এবং সততার মান মেনে চলা
মানহানি - লিখিত বা মুদ্রিত আকারে কারও সম্পর্কে মিথ্যা, মানহানিকর দাবির ব্যবহার
উৎকোচ - একজনের অবস্থান, প্রভাব বা সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে একটি পণ্য, পরিষেবা, ইত্যাদির প্রচারের বিনিময়ে একটি গোপন বা ব্যক্তিগত অর্থ প্রদান
নীতি - সুবিধার জন্য একটি সংস্থা দ্বারা গৃহীত কর্মের একটি কোর্স
রাজনীতি - প্রতিষ্ঠানে কার্যাবলী পরিচালনার অনুশীলন বা পেশা
গোপনীয়তা - নিজের ব্যক্তিগত জীবন বা বিষয়ে অনুপ্রবেশ বা ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকার অবস্থা
রক্ষণ আইন - আইনী প্রক্রিয়ায় সাংবাদিকদের গোপনীয় তথ্য বা তাদের পেশাগত ক্ষমতায় প্রাপ্ত তথ্যের উৎস প্রকাশ না করার বিশেষাধিকার প্রদান
অপবাদ - মৌখিকভাবে বা অন্য কোনো ক্ষণস্থায়ী আকারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কারো সম্পর্কে মিথ্যা, মানহানিকর দাবির ব্যবহার
মানদণ্ড - একটি কর্তৃপক্ষ দ্বারা বা তুলনার ভিত্তি হিসাবে সাধারণ সম্মতি দ্বারা বিবেচিত নীতি



তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. What We Do | FCC.gov. (n.d.). Federal Communications Commission. Retrieved November 29, 2013, from http://www.fcc.gov/what-we-do
  2. Dictionary.com. (n.d.). Dictionary.com. Retrieved November 29, 2013, from http://dictionary.reference.com/browse/policy?s=t
  3. Stone, G. (2004). Perilous Times: Free Speech in Wartime from the Sedition act of 1798 to the War on Terrorism. New York City: W.W. Norton & Company, Inc..
  4. Brown, F. (2011). Journalism Ethics: A Casebook of Professional Conduct for News Media. Portland: Marion Street Press.
  5. SPJ Code of Ethics | Society of Professional Journalists | Improving and protecting journalism since 1909. (n.d.). SPJ Code of Ethics | Society of Professional Journalists | Improving and protecting journalism since 1909. Retrieved November 29, 2013, from http://www.spj.org/ethicscode.asp
  6. Kennedy, G., & Moen, D. (2007). What Good is Journalism? How Reporters and Editors are Saving America's Way of Life. Columbia: University of Missouri Press.
  7. Sanders, K. (2003). Ethics & Journalism. Thousand Oaks: Sage Publications Ltd.
  8. Harcup, T. (2009). Journalism: Principles & Practice. Thousand Oaks: Sage Publications Ltd. (Original work published 2004)
  9. Brewer, D. (n.d.). Impartiality in journalism | IJNet. Impartiality in journalism | IJNet. Retrieved December 1, 2013, from http://ijnet.org/blog/impartiality-journalism
  10. Jones, A. (n.d.). An Argument Why Journalists Should Not Abandon Objectivity. Nieman Reports. Retrieved December 1, 2013, from http://www.nieman.harvard.edu/reportsitem.aspx?id=101911
  11. Sloan, W., & Parcell, L. (2002). American Journalism: History, Principles, Practices. Jefferson: McFarland & Company, Inc..
  12. Jones, W. (2003). Insult to Injury: Libel, Slander, and Invasions of Privacy. Boulder: Univ. Press of Colorado.
  13. Jones, C. (n.d.). Privacy. Invasion of Privacy. Retrieved December 1, 2013, from http://www.winning-newsmedia.com/privacy.htm
  14. Politics. (n.d.). Dictionary.com. Retrieved December 1, 2013, from http://dictionary.reference.com/browse/politics?s=t
  15. Bill of Rights Transcript Text. (n.d.). Bill of Rights Transcript Text. Retrieved December 1, 2013, from http://www.archives.gov/exhibits/charters
  16. Nimmer, M. (n.d.). 17 UCLA Law Review 1969-1970. 17 UCLA Law Review 1969-1970. Retrieved December 1, 2013, from http://heinonline.org/HOL/LandingPage?handle=hein.journals/uclalr17&div=65&id=
  17. Annotation 9 - First Amendment. (n.d.). FindLaw. Retrieved December 12, 2013, from http://constitution.findlaw.com/amendment
  18. Richter, W. (2006). Radio: A Complete Guide to the Industry. Broadway: Peter Lang Publsihing, Inc..
  19. Newton, E. (2013, September 24). Behind the News. Columbia Journalism Review. Retrieved December 1, 2013, from http://cjr.org/behind_the_news/paying_more_attention_to_the_s.php
  20. Header Menu. (2005, August 31). Blogcritics. Retrieved December 1, 2013, from http://blogcritics.org/ojs-last-run-a-tale-of/
  21. Whyld, L. (2013, April 15). Thatcher Protest 360, Part 4 of 4 - Ethics in Photojournalism. Ethics in Photojournalism: How Not to Manipulate the Audience. Retrieved December 1, 2013, from http://www.lewiswhyld.com/ethics-in-photojournalism/
  22. Are Journalists Obligated to Publish the Violent Images of War? Ctd.. (n.d.). Quora. Retrieved December 1, 2013, from http://foreignpolicy.quora.com/Are-Journalists-Obligated-to-Publish-the-Violent-Images-of-War-Ctd
  23. Boczkowski, P. (2005). Digitizing the News: Innovation in Online Newspapers. New Baskerville: The MIT Press.