গরু পালন/গাভীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা
সুষম খাদ্য বলতে ঐ সব খাদ্যকে বুঝায়, যে সব খাদ্যে প্রাণির প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি (শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন ও পানি) আনুপাতিক হারে ও গুণগত অবস্থায় প্রয়োজনীয় মাত্রায় থাকে। গাভীর জীবনধারণ ও উৎপাদনের জন্য পুষ্টির প্রয়োজন। সুষম খাদ্য না খাওয়ালে গাভী দুর্বল হবে, দুধ কম দিবে ও প্রজনন ক্ষমতা কমে যাবে। গাভীর সুষম খাদ্য তৈরি করার জন্য প্রথমে নির্ণয় করতে হবে গাভীর জন্য কী পরিমাণ শুষ্ক পদার্থ, পরিপাকযোগ্য ক্রুড প্রোটিন এবং মোট পরিপাকযোগ্য পুষ্টি প্রয়োজন। গাভীর সুষম খাদ্য তৈরির জন্য বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো- গাভীর দেহের ওজন, গাভী গর্ভবতী কি না, গাভী দুধ দেয় কি না, দুধের পরিমাণ কত, দুধে চর্বির পরিমাণ কত ইত্যাদি।
খাদ্য তৈরিতে বিবেচ্য বিষয়
সম্পাদনাগাভীর খাদ্য সুষম হতে হবে। অর্থাৎ খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমূহ সঠিক মাত্রায় থাকতে হবে। খাদ্য অবশ্যই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক হতে হবে। অর্থাৎ সহজ প্রাপ্য এবং দাম কম এরূপ উপকরণ দিয়ে খাদ্য প্রস্তুত করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে খাদ্য তৈরি করা উচিত যাতে খাদ্য সুস্বাদু ও সহজ প্রাচ্য হয়।
গাভীর পরিপাকতন্ত্রের ধারণ ক্ষমতা অনেক, তাই পশুর পেট না ভরা পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। একটি দেশি গাভীর চেয়ে উন্নত একটি গাভী অনেক বড় হয়। দুধও বেশি দেয়। সেজন্য খায়ও বেশি। তাই খাদ্য দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে পশুর পেট ভরে এবং পুষ্টির অভাবও পূরণ হয়। পশু পেট ভরে না খেতে পারলে অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে ফেলতে পারে।
গাভীর খাদ্যদ্রব্য টাটকা এবং পরিষ্কার হতে হবে। পশুর খাদ্য ভেজা স্যাঁতসেঁতে হলে ছত্রাক জন্মাতে পারে। এতে বিষক্রিয়া হয়ে গাভীর ক্ষতি করতে পারে। ময়লা, কাঁকর, পাথর, বালু, মাটি, ছত্রাকযুক্ত, ও দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য পশুকে খেতে দেয়া উচিত নয়।
গাভীর জন্য কাঁচা ঘাস অত্যাবশ্যকীয়। কাঁচা ঘাসে প্রচুর খনিজ উপাদান ও ভিটামিন থাকে যা সহজে হজম হয়। তাই গাভীকে দৈনিক প্রয়োজনীয় কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে। গাভীর দেহ গঠনে, দুধ উৎপাদনে, গর্ভধারণে, বাচ্চা উৎপাদনে ও কাঁচা ঘাস অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্যে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ ও খাদ্য উপাদান সরবরাহ করতে হবে। দানাদার খাদ্যের সাথে নিয়মিত ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। পশুর দানাদার খাদ্য অবশ্যই সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। দানাদার খাদ্য উপাদানগুলো মিশানোর পূর্বে ভেঙে নিতে হবে। তাতে উপাদানগুলো ভালোভাবে মেশানো যাবে এবং সহজে হজম হবে।
আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্য যেমন- খড়, কাঁচা ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি আস্ত না দিয়ে ছোট ছোট করে কেটে পশুকে খাওয়াতে হবে। এতে খাদ্য দ্রব্যের অপচয় হবে না। পশুর খেতে সুবিধা হবে এবং হজমেও সহায়ক হবে। খড় কুচিকুচি করে কেটে পানি বা ফেনে ভিজিয়ে অন্যান্য দানাদার মিশ্রণ ও চিটাগুড় মিশিয়ে দিলে গাভী খেতে অধিক পছন্দ করবে এবং সহজপাচ্যও হবে।
খাদ্য উপকরণ হঠাৎ করে পরিবর্তন করা উচিত নয়। খাদ্য উপকরণের পরিবর্তন প্রয়োজন হলে আস্তে আস্তে দিনে দিনে করতে হবে।