গরু পালন/গাভীর বন্ধ্যাত্বের কারণ ও লক্ষণ

একজন গাভী পালনকারীর নিকট সময় মতো গাভীর গর্ভধারণ করানো অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় খামারীর খরচ বেড়ে যায়। সন্তান উৎপাদনে অক্ষমতাকে বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা বলে। বিভিন্ন কারণে একটি গাভীতে বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা দেখা যেতে পারে। যেমন-

গঠন জনিত: শরীরের অনেক জন্মগত বা বংশগত ত্রুটিজনিত কারণে বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা হয়। যেমন- ডিম্বাশয়, সার্ভিক্স ইত্যাদির অস্বাভাবিকতা। গাভীর জমজ বাচ্চা জন্মের ফলে একটি এঁড়ে অন্যটি বকনা হলে সাধারনত ৯১% ভাগ ক্ষেত্রে বকনা বাছুরটিকে বন্ধ্যা হতে দেখা যায়, একে ইংরেজিতে ফ্রিমার্টিন বলে। অনেক পশুতে আবার অঙ্গের কোনো একটি অংশ থাকে না বা ঠিক মতো বিকাশ লাভ করে না, এসব ক্ষেত্রেও পশু বন্ধ্যা হয়। ক্রোমোজম সংখ্যার তারতম্য হলেও পশু বন্ধ্যা হয়।

দুর্ঘটনা জনিত: প্রজনন তন্ত্রে যে কোনো ধরনের আঘাতের ফলে অথবা জরায়ুর বহির্গমন, যোনির বহির্গমন ইত্যাদির কারণে গাভী বন্ধ্যা বা অনুর্বর হতে পারে।

শরীর বৃত্তীয়: বিভিন্ন হরমোনের অভাব ও অনিয়মিত ক্ষরণের ফলে গাভীর বন্ধ্যা বা অনুরবরতা দেখা দেয় । যেমন- ফলিকুলার স্টিমুলেটিং হরমোন, লিউটিনাইজিং হরমোন, প্রোজেস্টেরন হরমোন ইত্যাদি। এছাড়াও ডিম্বাশয়ের বিভিন্ন রোগ। যেমন- স্থায়ী করপাস লুটিয়াম, সিস্ট, ফলিকুলার এট্রফি ইত্যাদি।

পুষ্টিগত: সুষম খাদ্যের অভাবে গাভীর বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা দেখা যায়। যেমন- ভিটামিন এ ডি ই ও খনিজ পদার্থের মধ্যে ফসফরাস, কপার, কোবাল্ট ইত্যাদির অভাবে বন্ধ্যা বা অনুরর্বরতা দেখা যায়। ক্যালসিয়ামের অভাবে বন্ধ্যাত্বের কোনো প্রমাণ নেই তবে ফসফরাস শরীরে কাজে লাগার জন্য খাদ্যে ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। পশুর খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত ২ঃ১ হওয়া বাঞ্ছনীয়।

মনস্তাত্বিক: ভয় বা স্নায়ুবিক উত্তেজনার ফলে পশুর গর্ভধারণ বিঘ্নিত হতে পারে। বিশেষত বকনার ক্ষেত্রে প্রজনন ভীতি বা অস্থিরতা অথবা মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজনার বশে এ ধরনের অনুর্বরতা দেখা যায়।

রোগজনিত: বিভিন্ন সংক্রামক যৌন রোগ যেমন- ব্রুসেলোসিস, ট্রাইকোমোনিয়াসিস, ভিব্রিওসিস, লেপটোসপাইরোসিস ইত্যাদি রোগ অথবা জনন তন্ত্রের অন্যান্য যেমন- মেট্রাইটিস, সার্ভিসাইটিস, পায়োট্রো, সালফিনজাইটিস ইত্যাদি রোগে গাভী বন্ধ্যা বা অনুর্বর হয়।

বংশগত: অনেক সময় বংশগত কারণে পশু বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা দেখা যায়। যেমন- ফ্রি মার্টিন বা হোয়াইট হেইফার ডিজিজ হলে পশু বন্ধ্যা হয়।

ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা: লালন-পালন ও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা দেখা যায়। যেমন অযত্ন, অবহেলা, অপর্যাপ্ত খাদ্য, অনিয়মিত দুধ দোহন, প্রসবকালীন অবহেলা, ইত্যাদি।

অন্যান্য: বিভিন্ন বিষয় যেমন- পশুর বয়স, ঋতু, তাপমাত্রা, আলো ইত্যাদি পশুর উর্বরতার উপর প্রভাব বিস্তার করে। সাধারণত ৪ বছর বয়স পর্যন্ত গাভীর উর্বরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে ও ৬ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। কিন্তু ৬ বছর পর থেকে উর্বরতা হ্রাস পেতে থাকে। গাভী সাধারণত বসন্তকালে অধিক উর্বর থাকে।

বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ

সম্পাদনা
  • গাভী বাচ্চা প্রসবের ৯০-১০০ দিনের মধ্যেও গরম হয় না।
  • সব সময় গরম থাকে বা অনিয়মিতভাবে গরম হয়।
  • ১৫ দিনের কম সময় বা ২৮ দিনের বেশি সময় পর পর গরম হয়।
  • দীর্ঘ দিন অর্থাৎ গাভী এক বছর বা অধিক সময় গরম না হওয়া।
  • স্ত্রী প্রজনন তন্ত্র থেকে ঘোলা, পুঁজ বা রক্ত মিশ্রিত মিউকাস নির্গত হওয়া।
  • গর্ভপাত হওয়া।
  • তিন বারের অধিক প্রজননের পরও গর্ভধারণ না করা।
  • গর্ভফুল না পড়া, জরায়ুর বহির্গমন ইত্যাদি।

বন্ধ্যাত্বের প্রতিকার

সম্পাদনা
  • স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনায় গাভী পালন করতে হবে।
  • সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে।
  • সঠিকভাবে গাভীর গরমকাল নির্ধারণ করে সময়মতো প্রজননের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • প্রজনন তন্ত্রে কোনো অসুখ থাকলে সময়মতো তার চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • প্রসবের সময় সঠিক যত্ন নিতে হবে।
  • প্রসবের পর কমপক্ষে ৬০-৯০ দিনের মধ্যে পুনরায় প্রজনন করাতে হবে।