সুখ, মাংস ও পশম উৎপাদনে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ছাগল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ছাগলের মুখ সুস্বাদু ও সহজপাচ্য পানীয়। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি, আমিষ, চর্বি, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন প্রভৃতি পুষ্টিকর উপাদান ছাগলের দুধের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। গাভীর দুধের চর্বি কণার তুলনায় আকারে ছোট হওয়ায় ছাগলের দুধের পরিপাচ্যতা বেশি। বাড়ন্ত শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীর জন্য ছাগলের দুধ উৎকৃষ্ট মানের খাদ্য। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শিশু ও প্রসূতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খনিজ যা গাভীর দুধের তুলনায় ছাগলের দুধে বেশি থাকে। সামান্য ক্ষারীয় হওয়ায় গ্যাস্ট্রিক আলসার বা এসিডিটিতে আক্রান্ত রোগীর জন্য সহজপাচ্য পানীয় হিসেবে ছাগলের দুধ পান করা হয়। হাঁপানি রোগের ঔষধ হিসেবে কোথাও কোথাও ছাগলের দুধ বিবেচিত।

ছাগলের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু ও উপাদেয় প্রাণিজ আমিষ। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ বিশ্বের অনেক দেশে ছাগলের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের মাংস পৃথিবীর অন্যান্য যে কোনো জাতের ছাগলের মাংসের চেয়ে সুস্বাদু বলে দাবি করা হয়ে থাকে । ধর্ম বিশ্বাসের কারণে প্রাণিজ আমিষের উৎস হিসেবে পৃথিবীর অনেক দেশে গরুর মাংসের তুলনায় ছাগলের মাংসের ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন- বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, আকিকা প্রভৃতি অনুষ্ঠানে ছাগল জবাই করে ভুড়িভোজের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

দুধ ও মাংস উৎপাদন ছাড়াও পশম, চামড়া ও জৈব সার উৎপাদনে ছাগল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের চামড়া হতে উন্নতমানের চামড়াজাত পণ্য তৈরি হয়। বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের চামড়ার কদর বিশ্বজোড়া। শীত প্রধান দেশের ছাগলের লম্বা লোম পশমিনা, শাল, সোয়েটার, হ্যাট, কার্পেট, স্যুট ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অ্যাংগোরা জাতের ছাগলের লোম হতে তৈরি হয় সাদা ও সোনালী মোহেয়ার।

ছাগলের দুধ, মাংস, চামড়া, পশম ও মলমূত্রের বহুমুখী ব্যবহার একে একটি গুরুত্বপূর্ণ পশুসম্পদে পরিণত করেছে। ছাগল পালনে স্বল্প পুঁজি, স্বল্প জায়গা এবং কম খাদ্য খরচের প্রয়োজন হয়। আত্নকর্মসংস্থান, বেকার সমস্যা হ্রাস, দারিদ্র বিমোচন, পুষ্টি সরবরাহ সর্বোপরি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ছাগল হতে পারে একটি অন্যতম হাতিয়ার।

ছাগল পালনের সুবিধা-অসুবিধা সম্পাদনা

ছাগল পালনের সুবিধাসমূহ সম্পাদনা

  • বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল স্বল্প ব্যয়ে ছাগল পালনের জন্য উপযুক্ত। গ্রামের বসতবাড়িতে ২-৪ টি ছাগল পালন করা লাভজনক। বাংলাদেশের মোট ভূমির প্রায় ৭৬% এলাকা ছাগল পালনের উপযোগী।
  • ছাগল অপ্রচলিত খাদ্য যেমন- কাঁঠাল পাতা, বাঁশ পাতা, কলা পাতা, হিজল পাতা এমনকি বসতবাড়ির আশেপাশের লতাপাতা ও সামান্য ঘাস খেয়ে জীবনধারণ ও বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম। ফলে ছাগলের খাবার জোগাড় করা তেমন কষ্টসাধ্য নয়।
  • যেসব খামারীর গাভী পালন করার সামর্থ নেই তারা অনায়াসে ২-৪ টি ছাগল পালন করতে পারে। স্বল্প আয়ের মানুষ যেমন ভূমিহীন, ক্ষুদ্র ও মাঝারী চাষি, গ্রামের দুস্থ মহিলা বা ছোট ছোট বালক বালিকারাও বাড়ির আশেপাশে, ক্ষেতের ধারে, রাস্তার পাশে ছাগল চরিয়ে পালন করতে পারে।
  • ছাগলের রোগ বালাই অন্যান্য গবাদিপশুর তুলনায় কম হওয়ায় ছাগল পালন লাভজনক।
  • বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বছরে ২ বার বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবারে ২-৪ টি করে বাচ্চা দেয় বলে এ জাতের ছাগল পালন লাভজনক।
  • দেশে ও দেশের বাইরে ছাগলের মাংস, দুধ ও চামড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এগুলো বাজারজাতকরণ সহজসাধ্য।
  • ছাগল খামার খাতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ঝুঁকি অন্যান্য গবাদি পশুর তুলনায় কম।

ছাগল পালনের সমস্যাবলী সম্পাদনা

  • ছাগলের পুষ্টি, প্রজনন, স্বাস্থ্য ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে খামারীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব।
  • ছাগলের বিভিন্ন রোগ দমনে প্রস্তুতিমূলক ও কৌশলগত ব্যবস্থার অভাব যেমন- কৃমি নাশক না খাওয়ানো, যথাসময়ে টিকা প্রদান না করা ইত্যাদি।
  • স্ক্যাভেঞ্জিং, সেমি-ইন্টেনসিভ এবং ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে ছাগল উৎপাদনের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব।
  • নীতিমালাহীন অবাধ সংকরায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের কৌলিক মানের বিনাশ।
  • ছাগল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কার্যকর সমন্বিত জাতীয় পরিকল্পনার অভাব।