নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস/ইউরোপীয় অভিযাত্রী
নিউজিল্যান্ড আবিষ্কারকারী প্রথম ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা
সম্পাদনাআবেল তাসমান
সম্পাদনাআবেল তাসমান একজন ওলন্দাজ নৌ-অভিযাত্রী ছিলেন। তিনিই প্রথম ইউরোপীয়দের মধ্যে একজন যিনি ১৩ ডিসেম্বর ১৬৪২ তারিখে গ্রেট সাউদার্ন কন্টিনেন্টের অনুসন্ধানের সময় নিউজিল্যান্ড আবিষ্কার করেন। তাসমান তার লেখায় উল্লেখ করেছেন যে এটি একটি বৃহৎ ভূমি, উঁচু উঁচু (যে এলাকাটি তিনি দেখেছিলেন সেটি দক্ষিণ আল্পসের কাছে)। তিনি নিউজিল্যান্ডকে 'স্টেটেন ল্যান্ড' বলে উল্লেখ করেন যা ওলন্দাজ স্টেটস-জেনারেলদের ভূমি বা ইংরাজিতে 'ল্যান্ড অফ ডাচ স্টেটস-জেনারেল' কে নির্দেশ করে।
নিউজিল্যান্ড ভূখণ্ডের আদিবাসী মাওরিদের সাথে তাসমান প্রথম মুখোমুখি হয়েছিলেন ১৬৪২ সালের ১৮ই ডিসেম্বর তাইতাপু উপসাগরে বর্তমানে এটি গোল্ডেন বে নামে পরিচিত। তীরে থেকে দুটি হালকা ডিঙি নৌকা যাকে ক্যানো বলে, এই রকম দুটি নৌকা তাসমানের জাহাজের কাছে এসেছিল। ওলন্দাজ এবং মাওরিরা একে অপরের ভাষা বুঝতে পারত না বলে তাদের মধ্যে যোগাযোগ সম্ভব ছিল না।
পরে, তাসমানের জাহাজের কাছে আরও ক্যানো আসে। সেই দেখে ওলন্দাজরা মাওরিদের জাহাজের বোর্ডে আসতে প্রলুব্ধ করার জন্য একটি নৌকা পাঠায়। এদের মধ্যে একটি ক্যানো একটি ছোট ওলন্দাজ নৌকাকে ধাক্কা দেয় ও কিছু জাহাজের নাবিককে হত্যা করে। যখন আরও ক্যানো এগিয়ে আসে তখন ওলন্দাজরা পালা করে মাওরিদের দিকে গুলি চালায়। এর ফলে মাওরিরা দ্রুত তীরে দিকে পিছু হটতে থাকে।
এর পরে, তাসমান নিউজিল্যান্ডের জলসীমা ছাড়ার আগে উত্তর দ্বীপের অগ্রভাগে ভ্রমণ করেন।
জেমস কুক
সম্পাদনাক্যাপ্টেন জেমস কুক ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রধান ইংরেজ অভিযাত্রী, নাবিক ও মানচিত্রবিদ। তিনি এইচএমএস এন্ডেভার নামক জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন। ১৭৬৯ সালের ৬ই অক্টোবর তিনি নিউজিল্যান্ডের জলসীমায় প্রবেশ করেন এবং আজকের পভার্টি বে অর্থাৎ দারিদ্র উপসাগরে নোঙর স্থাপন করেন। এইসময় তীরের দিকে কুক ধোঁয়া দেখতে পেলেন, তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে তীরের জমিটি জনবসতিপূর্ণ। স্থানীয়দের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য তিনি এবং একদল নাবিক তীরে রওনা হলেন জলখাবার গ্রহণের আশায়। তবে মাওরিরা শত্রু ভাবাপন্ন ছিল। তাই ব্রিটিশদের আত্মরক্ষার তাগিদে মাওরিদের উপর গুলি চালাতে হয়েছিল।
কুক আবার একটি ভিন্ন স্থানে মাওরিদের সাথে বাণিজ্য করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু কোন সফলতা পাননি। তিনি তাঁর সমুদ্রযাত্রার ২৪০০ মাইল উপকূলরেখা বরাবর স্কেচ করতে সক্ষম হন। তিনি প্রমাণ করেন যে, নিউজিল্যান্ড একটি প্রধান মহাদেশের অংশ নয়। তিনি ১৮ শতকে আরও দুইবার নিউজিল্যান্ড ভ্রমণ করেন।
জিন-ফ্রাঁসোয়া মারি ডি সুরভিল
সম্পাদনাজিন ফ্রাঁসোয়া মারি ডি সুরভিল ছিলেন ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন বণিক। তিনি ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজ, সেন্ট জিন ব্যাপটিস্ট-এর ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি ১৭৬৯ সালের ১২ ডিসেম্বর হোকিয়াঙ্গা উপকূলে নিউজিল্যান্ডের জলসীমায় প্রবেশ করেন। ১৭৬৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই ফরাসি জাহাজটি উত্তর কেপ দ্বীপের চারপাশ বৃত্তাকারে পরিভ্রমণ করে। সেই সময় ক্যাপ্টেন জেমস কুকও নিউজিল্যান্ড পরিভ্রমনে ছিলেন। ক্যাপ্টেন জেমস কুক এবং ক্যাপ্টেন জিন সম্ভাব্যভাবে একে অপরের থেকে ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছিলেন।
এর একদিন পরে অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন জিন আবিষ্কার করেন যে দ্বীপটি তিনি অজানা মনে করে দ্বীপটির নাম দিয়েছিলেন 'লরিস্টন বে' বলে, ক্যাপ্টেন জেমস কুক ইতিমধ্যেই সেটির নাম 'ডাউটলেস বে' রেখেছেন। ১৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাপ্টেন জিনের জাহাজ ডাউটলেস বে-এর উত্তরে নোঙর করে। সেই মুহুর্তে মাওরি ওয়াকা তাঁর কাছে চলে আসে। ওয়াকা হলো মাওরি জলযান, সাধারণত ছোট, অলঙ্কৃত ক্যানো। এইসময় থেকে নিউজিল্যান্ডে প্রথম ব্যবসা শুরু হয়।