বিশ্বজুড়ে ইসলাম/মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ভুমিকা
সম্পাদনামার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় জনগোষ্ঠী হিসাবে মুসলিমরা তৃতীয় বৃহত্তম। দেশটির ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে মুসলমানদের সুদীর্ঘ ইতিহাস। ইতিহাস বলছে, আড়াই শ’ বছর আগেই মার্কিন ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ইসলাম। মার্কিন সংবিধানের আর্টিকেল ৬-এ স্পষ্টভাবে লেখা আছে, ‘ধর্ম কোনো ধরনের সরকারি রাষ্ট্রীয় বা জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে না।’ তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনসহ আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতারা ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছিলেন বলেই সংবিধানে এমন ধারা স্থান পেয়েছে। মার্কিনিরা প্রায় সময় ইসলাম ও মুসলমানের বিরোধিতা করে। তারা কুরআনের বিধানকে মানবতা বিরোধি মনে করে।
কুরআনের সাথে সরাসরি বিরোধিতা
সম্পাদনা- নৈতিকতা সম্পর্কে আইন শিথিল। একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় যৌন ক্রিয়াকলাপ প্রকাশের অনুমতি দেয়৷
- নির্যাতনের অনুমতি দেয়। [১]
- অ্যালকোহল নিষিদ্ধ করে না (যদিও এর সেবনের বয়সসীমা রয়েছে)।
- অর্থনীতি কুরআন অনুযায়ী নয়। এখানে সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চলমান।
- কুরআনে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আইন মানে না।
- পর্দা প্রথাকে উপেক্ষা করে।
মুসলমানদের বিষয়ে মতামত
সম্পাদনা- অনেক মুসলমান যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্যকে এক নম্বর শত্রু মনে করে।
- কিছু আরব বা মুসলিম দেশের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের বেশি স্বাধীনতা রয়েছে।
- ইসলাম বিষয়ে মার্কিনিদের মতামত দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক আমেরিকান বলে থাকেন, ইসলাম সহিংসতাকে উৎসাহিত করে। যাদের সংখ্যা ২০০২ সাল থেকে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। টুইন টাওয়ার পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম বিদ্বেষ বাড়লেও এ পর্যন্ত মার্কিন মুসলিম সম্প্রদায়ের আকার বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, যা প্রায় সাড়ে ৩ মিলিয়ন। এটা মুসলমানদের জন্য ভালো।
রাজনীতিতে মুসলমান
সম্পাদনা- রাজনীতে মুসলমানরা সক্রিয় ভুমিকা রাখছে। নারী-পুরুষ সবাই কৃতিত্ব রাখছে।
- বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাইডেন প্রশাসনে ভোটে নির্বাচিত পাঁচ নারী ও চার পুরুষ সদস্য হলেন- রাশিদা তালিব, ইলহান ওমর, আইমান জাদেহ, মৌরি তার্নার, মাদিনা উইলসন অন্তন, সামবা বালদেহ, ক্রিস্টোফার বেনজামিন, আবুল বি খান ও শেখ রহমান।[২]
- বাইডেনের প্রশাসনে নিযুক্ত আমেরিকান মুসলিমরা হলেন- ১. আয়েশা শাহ, হোয়াইট হাউসের ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজি অফিসের অংশীদার বিষয়ক পরিচালক। ২. সামিরা ফাজিলি, মার্কিন জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের (এনইসি) উপ-পরিচালক। ৩. উজরা জিয়া, নাগরিক সুরক্ষা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি। ৪. তিপার্টমেন্টের নীতি পরিকল্পনা পরিচালক। ১১. ফারুক মিঠা, উপ-সহকারী প্রতিরক্ষা সচিব। ১২. ডানা শানাত, হোয়াইট হাউসের আইন বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা। ১৩. ব্রেন্ডা আবদেলাল, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের উপদেষ্টা। ১৪. ইসরা ভাটি, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সিনিয়র উপদেষ্টা ও ১৫. সায়মা মহসিন, পূর্বঞ্চলীয় জেলায় নিযুক্ত মার্কিন অ্যাটর্নি।
ইসলাম সম্পর্কে মতামত
সম্পাদনাআমেরিকানদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে মত হলো যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে মুসলমানদের মত। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১-এর সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের পর মুসলমানদের প্রতি বৈরী মনোভাব লক্ষণীয় হয়ে ওঠে ও ঘৃণা-অপরাধ বেড়ে যায়। মুসলিম সম্প্রদায় ও সরকার জনসংখ্যাকে শিক্ষিত করার জন্য দ্রুত হস্তক্ষেপ করে। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় প্রথম লক্ষণীয় কিছু "ক্রুসেড" বক্তৃতা কম হয়। এটির উল্লেখযোগ্য ফল বহন করে এবং শুধুমাত্র একটি সংখ্যালঘু ইসলামকে সহজাতভাবে হিংসাত্মক হিসাবে দেখে। বেশিরভাগই এটিকে খ্রিস্টধর্মের "ভুল ব্যাখ্যার" জন্য দুর্বল হিসাবে দেখে। এমনও মত রয়েছে যে ইসলাম মন্দ হতে পারে না। তবে এর বর্তমান প্রকাশ অসহিষ্ণু ও সহিংসতার প্রচার করে। যদিও তারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তি থাকে। শরিয়া আইনকে অন্যায্য আইন হিসেবে দেখে। তারা এটিকে নিম্নতর সামাজিক পদমর্যাদার, বিশেষ করে নারীদের বিরুদ্ধে মনে করে। এটি মূলত এই কারণে কলঙ্কিত যে, শরিয়া রায়ের বেশিরভাগ সংবাদ প্রতিবেদনই পশ্চিমারা সাধারণভাবে হতবাক হয়। যেমন ১ ব্যভিচারীদের পাথর ছুঁড়ে মারা, ২ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে বসবাস করা (যেমন দু'জন অবিবাহিত ব্যক্তি যৌনমিলন করা) ; আমেরিকানরা এটিকে পাপ বলে মনে করে তারা যুক্তি দেয় যে এটি এখনও অপরাধ না। ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে পাথর ছুড়ে হত্যা করা যাবে না এবং অপরাধীরা মুক্ত থাকবে।
উপসংহার
সম্পাদনাপরিশেষে বলা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দিন দিন ইসলামের প্রভাব বাড়ছে। প্রশাসনে মুসলমানের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচছে। সবমিলিয়ে ধীরে ধীরে এটা স্পষ্ট হচ্ছে, মার্কিন মুলুকে মুসলিমরা শুধু উপার্জন কিংবা উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় যায়নি এবং এ জন্যই ব্যতিব্যস্ত থাকে না। তারাও মানবতা, রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারণী কাজে দক্ষ এবং কাজ করার অধিকার রাখে।