সংস্কৃত ভাষা/ব্যাকরণ
যে শাস্ত্র পাঠ করলে সংস্কৃত ভাষা বিশুদ্ধভাবে লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা যায়, তাকে সংস্কৃত ব্যাকরণ বলে।
সংস্কৃত ব্যাকরণের পরিভাষা
সম্পাদনা- বস্তবাচক বা বস্তুর বিশেষণবাচক শব্দের মূলরূপকে প্রাতিপদিক (বা নাম) বলে। যেমন: নর, লতা, জল; মধুর, সুন্দর।
- ক্রিয়াবাচক শব্দের মূলরূপকে ধাতু বলে। যেমন: ভূ, স্থা, কৃ।
- প্রাতিপদিক এবং ধাতুর সঙ্গে যেসব বিশেষ চিহ্ন (প্রত্যয়) যুক্ত হয়ে বাক্যে প্রয়োগের উপযোগী শব্দ (পদ) গঠন করে, তাদের বিভক্তি বলে।
- প্রাতিপদিকের সঙ্গে 'সুপ্' বা নাম বিভক্তি যুক্ত হয়ে নামপদ বা সুবন্ত শব্দ তৈরি করে। যেমন: নর (প্রাতিপদিক) + সু (নাম বিভক্তি) = নরঃ (নামপদ)।
- ধাতুর সঙ্গে 'তিঙ্' বা ক্রিয়া বিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ বা তিঙন্ত শব্দ তৈরি করে। যেমন: ভূ (ধাতু) + তি (ক্রিয়া বিভক্তি) = ভবতি (ক্রিয়াপদ)।
- বাক্যে প্রয়োগের সময় নামপদের সঙ্গে বিভক্তি ('সুপ্') ছাড়াও তাঁর বচন (এক, দ্বি, বহু) ও লিঙ্গ (পুং, স্ত্রী, ক্লীব) যোগ করা হয়। [নির্দিষ্ট লিঙ্গ অনুযায়ী বিভক্তি ও বচন যোগে প্রাতিপদিকের পরিবর্তিত রূপগুলিকে শব্দরূপ বলে।]
- ক্রিয়াপদের সঙ্গে বিভক্তি ('তিঙ্') ছাড়াও তাঁর বচন (এক, দ্বি, বহু) ও পুরুষ (উত্তম, মধ্যম, প্রথম) যোগ করা হয়। [নির্দিষ্ট পুরুষ অনুযায়ী বিভক্তি ও বচন যোগে ধাতুর পরিবর্তিত রূপগুলিকে ধাতুরূপ বলে।]
- প্রাতিপদিকের নির্দিষ্ট লিঙ্গের অন্তিম স্বর বা ব্যঞ্জন বর্ণের উপর নির্ভর করে সেই লিঙ্গের সেই স্বর বা ব্যঞ্জন বর্ণান্ত প্রায় যাবতীয় প্রাতিপদিকের শব্দরূপ একই আকৃতির হয়। যেমন: পুংলিঙ্গবাচক 'নর' প্রাতিপদিকের শেষের বর্ণ 'অ' হওয়ার কারণে অ-বর্ণান্ত পুংলিঙ্গবাচক প্রায় যাবতীয় প্রাতিপদিকের (যথা: অংশ, দিবস, কৃষ্ণ, ধূর্ত, কোষ, আচার্য, ইতিহাস প্রভৃতি) শব্দরূপ 'নর' শব্দের মত।
- নামপদ বা সুবন্ত শব্দ তিন ধরনের। যথা: বিশেষ্য, বিশেষণ ও সর্বনাম (— উদা: অস্মদ্, যুষ্মদ, তদ্, কিম্)।
- ক্রিয়াপদ বা তিঙন্ত শব্দ এক ধরনের (— উদা: অস্তি, ভবামি, গচ্ছতু)।
- এছাড়া আরেক ধরনের শব্দ বা পদ আছে, বাক্যে প্রয়োগের সময় যাদের মূলরূপের কোনও ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না, এদের অব্যয় পদ বলে। যেমন: অত্র, কুত্র, তদা, অধুনা, অকস্মাৎ প্রভৃতি।
বিশেষ্যপদের প্রয়োগ
সম্পাদনা- পুংলিঙ্গবাচক:
– রবিঃ কুমারঃ। প্রতাপঃ কুমারঃ। শ্যামলঃ কুমারঃ। (একবচন)
– রবিঃ প্রতাপঃ চ কুমারৌ। প্রতাপঃ শ্যামলঃ চ কুমারৌ। রবিঃ শ্যামলঃ চ কুমারৌ। (দ্বিবচন, ['চ' অর্থ এবং])
– রবিঃ প্রতাপঃ শ্যামলঃ চ কুমারাঃ। (বহুবচন)
- স্ত্রীলিঙ্গবাচক:
– রমা কন্যা। মাধুরী কন্যা। বসুধা কন্যা। (একবচন)
– রমা মাধুরী চ কন্যে। রমা বসুধা চ কন্যে। মাধুরী বসুধা চ কন্যে। (দ্বিবচন, ['চ' অর্থ এবং])
– রমা মাধুরী বসুধা চ কন্যাঃ। (বহুবচন)
বিশেষ্য-বিশেষণ প্রয়োগ
সম্পাদনা- পুংলিঙ্গবাচক:
– সুন্দরঃ কুমারঃ। স্নেহময়ঃ পিতা। বিশালঃ বৃক্ষঃ। প্রখরঃ অগ্নিঃ। (একবচন)
– সুন্দরৌ কুমারৌ। স্নেহময়ৌ পিতরৌ। বিশালৌ বৃক্ষৌ। প্রখরৌ অগ্নী। (দ্বিবচন)
– সুন্দরাঃ কুমারাঃ। স্নেহময়াঃ পিতরঃ। বিশালাঃ বৃক্ষাঃ। প্রখরাঃ অগ্নয়ঃ। (বহুবচন)
- স্ত্রীলিঙ্গবাচক:
– চঞ্চলা কন্যা। পূজনীয়া মাতা। বিশালা নগরী। বেগবতী নদী। কৃষ্ণা নিশি। (একবচন)
– চঞ্চলে কন্যে। পূজনীয়ে মাতরৌ। বিশালে নগর্য়ৌ। বেগবত্যৌ নদ্যৌ। কৃষ্ণে নিশে। (দ্বিবচন)
– চঞ্চলাঃ কন্যাঃ। পূজনীয়াঃ মাতরঃ। বিশালাঃ নগর্য়ঃ। বেগবত্যঃ নদ্যঃ। কৃষ্ণাঃ নিশয়ঃ। (বহুবচন)
- ক্লীবলিঙ্গবাচক:
– শীতলং জলম্। মধুরং পয়ঃ। শুষ্কম্ পত্রম্। (একবচন)
– শীতলে জলে। মধুরে পয়সী। শুষ্কে পত্রে। (দ্বিবচন)
– শীতলানি জলানি। মধুরাণি পয়াংসি। শুষ্কানি পত্রাণি। (বহুবচন)
সর্বনামপদের প্রয়োগ
সম্পাদনা- পুংলিঙ্গবাচক:
– অহম্ কুমারঃ। ত্বম্ পিতা। সঃ অগ্নিঃ। (একবচন)
– আবাম্ কুমারৌ। যুবাম্ পিতরৌ। তৌ অগ্নী। (দ্বিবচন)
– বয়ম্ কুমারাঃ। যূয়ম্ পিতরঃ। তে অগ্নয়ঃ। (বহুবচন)
- স্ত্রীলিঙ্গবাচক:
– অহম্ কন্যা। ত্বম্ মাতা। সা নগরী। (একবচন)
– আবাম্ কন্যে। যুবাম্ মাতরৌ। তে নগর্য়ৌ। (দ্বিবচন)
– বয়ম্ কন্যাঃ। যূয়ম্ মাতরঃ। তা নগর্য়ঃ। (বহুবচন)
- ক্লীবলিঙ্গবাচক:
– অহম্ জলম্। ত্বম্ পয়ঃ। তৎ পত্রম্। (একবচন)
– আবাম্ জলে। যুবাম্ পয়সী। তে পত্রে। (দ্বিবচন)
– বয়ম্ জলানি। যূয়ম্ পয়াংসি। তানি পত্রাণি। (বহুবচন)
ক্রিয়াপদ-সর্বনামপদের প্রয়োগ (বর্তমান কাল)
সম্পাদনা- পুংলিঙ্গবাচক:
– অহম্ বদামি। ত্বম্ বদসি। সঃ বদতি। (একবচন)
– আবাম্ বদাবঃ। যুবাম্ বদথঃ। তৌ বদতঃ। (দ্বিবচন)
– বয়ম্ বদামঃ। যূয়ম্ বদথ। তে বদন্তি। (বহুবচন)
- স্ত্রীলিঙ্গবাচক:
– অহম্ বদামি। ত্বম্ বদসি। সা বদতি। (একবচন)
– আবাম্ বদাবঃ। যুবাম্ বদথঃ। তে বদতঃ। (দ্বিবচন)
– বয়ম্ বদামঃ। যূয়ম্ বদথ। তা বদন্তি। (বহুবচন)
- ক্লীবলিঙ্গবাচক:
– অহম্ জায়ে। ত্বম্ জায়সে। তৎ জায়তে। (একবচন)
– আবাম্ জায়াবহে। যুবাম্ জায়থে। তে জায়েতে। (দ্বিবচন)
– বয়ম্ জায়ামহে। যূয়ম্ জায়ধ্বে। তানি জায়ন্তে। (বহুবচন)