সিলেটি ভাষা শিক্ষা/আধুনিক সিলেটি

আধুনিক শুদ্ধ সিলোটি বা আধুনিক প্রমিত সিলোটি হলো বর্তমান বিশ্বের বাংলাদেশের সিলেট বিভাগ, ভারতের সেভেন সিস্টার্স, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও ওশেনিয়া মহাদেশে বসবাসরত সিলেটি জাতির দৈনন্দিন ব্যবহারিক এবং কথ্য ভাষা, যা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর সদস্য এবং প্রাচীন সিলোটি ভাষা থেকে বিবর্তিত হয়েছে। কানাডা ভিত্তিক একটি জরিপ অনুযায়ী এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষা গুলোর মধ্যে একটি, যা প্রায় ২ কোটির অধিক মানুষের মাতৃভাষা। এছাড়াও এটি পৃথিবীর অন্যতম একটি জনপ্রিয় ভাষা, যা প্রায় অর্ধ কোটি বিদেশি মানুষের দ্বিতীয় ভাষা। এই ভাষা তার স্বতন্ত্র বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যসম্মত রূপ, মাধুর্য এবং সহজতার মাধ্যমে বিজাতিদেরকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করছে। এছাড়াও অধিকাংশ ইন্ডিয়ান ভাষা মহাপ্রাণ সম্পন্ন হলেও এটা মহাপ্রাণের পরিবর্তে টোন বা সুরের উপর নির্ভর করে অর্থ কিংবা ভাবের পরিবর্তন ঘটায়।

সিলোটি ভাষার নিকটবর্তী অন্যান্য ভাষাগুলো হলো বাংলা, অসমীয়া, উর্দু এবং হিন্দি। উক্ত ভাষাগুলোর সাথে এর ব্যাকরণগত এবং অভিধানিক যথেষ্ট পরিমাণ মিল রয়েছে। এছাড়াও আরবি, ফার্সি, ইংরেজি, গ্রিক, ল্যাটিন, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ এবং চাইনিজ ভাষার সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ শব্দের আদান-প্রদান রয়েছে উক্ত ভাষাটির। আধুনিক শুদ্ধ সিলোটি সাধারণত লাতিন বর্ণমালায় লিখিত হয়, যেখানে ক্লাসিক্যাল সিলোটি সিলোটি নাগরি অথবা পূর্বী নাগরী বর্ণমালাতে লিখা হতো।[১][২]

সিলোটি ভাষা একটি টোনাল এবং ধ্বনিমূলক ভাষা, যা তার বর্ণের ধ্বনি অনুযায়ী উচ্চারণ প্রদান করে থাকে এবং তার নিজস্ব টোনের দ্বারা অর্থের পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। আধুনিক শুদ্ধ সিলোটিতে ৫ টি স্বরবর্ণ এবং ২১ টি ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে। পাঁচটি স্বরবর্ণের প্রত্যেকটিতে চারটি করে মোট ২০ টি টোন রয়েছে। আর ভাষাটিতে সর্বমোট ২৯ টি ধ্বনি রয়েছে। আধুনিক সিলোটিতে স্বরবর্ণকে ভাওয়েল (Bfaoel) এবং ব্যঞ্জনবর্ণকে কন্সেন্ট (Konsent) বলা হয়।

আধুনিক শুদ্ধ সিলোটি আন্তর্জাতিক সিলোটি ভাষা একাডেমী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে ভাষাটির বিভিন্ন উপভাষা রয়েছে এবং উপভাষাগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাকরণ, শব্দভাণ্ডার, উচ্চারণ, সুর ও চাপের ভিন্নতাও রয়েছে, কিন্তু লেখার ক্ষেত্রে কোনো ভিন্নতা নেই। আধুনিক শুদ্ধ সিলোটি ভাষাকে আধুনিক আন্তর্জাতিক সিলোটি নামেও অভিহিত করা হয়।[৩]

আধুনিক আদর্শ সিলোটি তথা আধুনিক আন্তর্জাতিক সিলোটি মূলতপক্ষে সিলোটি ভাষার একটি প্রমিত মান। যেখানে পূর্বে সিলোটি ভাষার কোনো প্রমিত মান ছিল না এবং জটিল অথবা বাংলা অনুসৃত নিয়মে পূর্বী নাগরী কিংবা সিলোটি নাগরি দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে চর্চা করা হতো ঐতিহ্যবাহী সিলোটি ভাষা, সেখানে স্যার মাহবুবুল আলম সিলোটি ভাষা সর্বজনীনভাবে চর্চা ও ব্যবহারের জন্য সিলোটি ভাষার জন্য স্বতন্ত্র নিয়মে ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক শুদ্ধ সিলোটি তথা আধুনিক আন্তর্জাতিক সিলোটি প্রবর্তন কিংবা প্রচলন করেন।

বর্ণমালা সম্পাদনা

আধুনিক শুদ্ধ সিলোটি বর্ণমালা, বর্ণ গুলোর নাম এবং বর্ণগুলো দ্বারা প্রদানকৃত ধ্বনি:

ক্রমিক নম্বর হরফাইন (বড় ও ছোট) সিলোটি নাম (পূর্বী নাগরী লিপিতে) সিলোটি নাম (ফোনেটিক লিপিতে) IPA ধ্বনি[৪]
০১ A a য়া ɐ ɐ
০২ Β b বে be b
০৩ C c চি t͡ʃi t͡ʃ
০৪ D d ডা ɖɐ ɖ
০৫ Ε e য়ে e e
০৬ F f ফে fe f
০৭ G g গি ɡi ɡ
০৮ H h হা h
০৯ Ι i য়ি i i
১০ J j জে d͡ʒe d͡ʒ
১১ K k কো k
১২ L l লি li l
১৩ M m মু mu m
১৪ N n নি ni n
১৫ Ο o য়ো ɔ ɔ
১৬ P p পি pi p
১৭ Q q ড়াই ɽai ɽ
১৮ R r রে ɾe ɾ
১৯ S s ছি si s
২০ T t টা ʈɐ ʈ
২১ U u য়ু u u
২২ V v তি ti t
২৩ W w দু du d
২৪ X x খা x
২৫ Y y শি ʃi ʃ
২৬ Z z আং ɐŋ ŋ

নিম্নে সিলোটি ভাষার অতিরিক্ত এবং ব্যতিক্রমী ধ্বনিসমূহ উল্লেখ করা হলো:

ক্রমিক নম্বর হরফাইন ব্যতিক্রমের কারণ IPA ধ্বনি[৫] উদাহরণ
০১ Q q শব্দের শুরুতে থাকলে q Quran, Qibla
০২ Bf এই দুটি হরফ একত্রিত থাকলে v Bfidio, Bfeli
০৩ Js এই দুটি হরফ একত্রিত থাকলে z Gajsa, Jsebra

টোন সম্পাদনা

নিম্নে সিলোটি ভাষার টোনসমূহ (শুরাইন) উল্লেখ করা হলো:

ক্রমিক নম্বর ভাওয়েলাইন (বড় ও ছোট) নরমাল টোন আপার টোন ডাউন টোন আপার-ডাউন টোন
০১ A a Ā ā Á á À à Â â
০২ E e Ē ē É é È è Ê ê
০৩ I i Ī ī Í í Ì ì Î î
০৪ O o Ō ō Ó ó Ò ò Ô ô
০৫ U u Ū ū Ú ú Ù ù Û û

বানান ও উচ্চারণ সম্পাদনা

আধুনিক সিলোটি ভাষা বর্ণের ধ্বনি অনুযায়ী উচ্চারণ প্রদান করে থাকে। শুধুমাত্র তিনটি ব্যতিক্রমী ধ্বনি এবং উচ্চারণ রয়েছে, যা বর্ণমালার পাঠে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও আরো একটি ব্যতিক্রম রয়েছে ‘Z’ (আং) হরফের ক্ষেত্রে। যদি কোনো শব্দের প্রথমে ‘আং’ উচ্চারণ থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে বানান ‘Az’ না হয়ে শুধুমাত্র ‘Z’ দিয়ে শুরু করে শব্দের বাকি অংশ লিখতে হবে, এক্ষেত্রে ‘Z’ হরফের পূর্বে কোনো স্বরবর্ণ বা ভাওয়েলের প্রয়োজন পড়বে না। যেমনঃ Zgur (আংগুর), Zti (আংটি) এবং Zra (আংরা) ইত্যাদি। অন্য সকল ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যঞ্জনবর্ণ তথা কন্সেন্টের মত ‘Z’ হরফের জন্যও স্বরবর্ণ তথা ভাওয়েলের প্রয়োজন পড়তে পারে।

এখানে কিছু শব্দের বানান এবং উচ্চারণ দেওয়া হল:

সিলোটি শব্দ বাংলা উচ্চারণ বাংলা অর্থ
Zra আংরা আঙ্গার
Xowom খদম কদম
Xolom খলম কলম
Zgur আংগুর আঙ্গুর
Apel আপেল আপেল
Coxlet চখলেট চকলেট
Kismis কিছমিছ কিসমিস
Dim ডিম ডিম
Weqey দেড়েশ বোম্বে মরিচ
Anwair আন্দাইর অন্ধকার
Baiju বাইজু পার্শ্ব
Kutum কুটুম মেহমান
Vone তনে থেকে
Avvi আত্তি হাতি
Quran ক্বুরান কুরআন
Isa ইছা চিংড়ি
Jozgol জংগল জঙ্গল
Lezta লেংটা উলঙ্গ
Xazgal খাংগাল কাঙ্গাল
Mosoir মছইর মশারি
Yizho শিংহ সিংহ
Bfidio ভিডিও ভিডিও
Jsebra যেব্রা জেব্রা
Unwur উন্দুর ইঁদুর
Mekur মেকুর বিড়াল
Woria দরিয়া সমুদ্র
Gazg গাংগ নদী
Uri উরি শিম
Laxai লাখাই বরবটি
Haxom হাখম সাঁকু
Coyma চশমা চশমা
Faloz ফালং খাট
Foqa ফড়া পড়া

সিলোটি নাম্বার সম্পাদনা

সিলোটি সংখ্যা বা সিলোটি নাম্বার সিলোটি ভাষায় ব্যবহৃত সংখ্যা সমূহের নাম। আধুনিক সিলোটি ভাষায় এই সংখ্যা সাধারণভাবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। এটা আরবি সংখ্যা পদ্ধতির ল্যাটিন রূপ। আরবি সংখ্যা পদ্ধতি (দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি) বিভিন্ন বর্ণমালায় ভিন্ন ভিন্ন প্রতীকে সমগ্র বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সংখ্যা পদ্ধতি, যা সিলোটি ভাষায়ও গৃহীত হয়েছে। আর আধুনিক শুদ্ধ সিলোটি উক্ত সংখ্যা পদ্ধতির ল্যাটিন রূপ গ্রহণ করে থাকে।

আধুনিক সিলোটি নাম্বার আধুনিক সিলোটি নাম ও বানান সিলোটি নাগরি লিপিতে পূর্বী নাগরী লিপিতে বাংলা
0 Yuinno ꠡꠥꠁꠘ꠆ꠘꠧ শুইন্নো শূন্য
1 Ex ꠄꠈ এখ এক
2 Wui ꠖꠥꠁ দুই দুই
3 Vin ꠔꠤꠘ তিন তিন
4 Sair ꠍꠣꠁꠞ ছাইর চার
5 Fas ꠚꠣꠍ ফাছ পাঁচ
6 Soe ꠍꠄ ছয় ছয়
7 Yav ꠡꠣꠔ সাত সাত
8 At ꠀꠐ আট আট
9 Noe ꠘꠄ নয় নয়

শব্দ বিশ্লেষণ সম্পাদনা

  • সিলেট:

‘সিলেট’ হলো প্রাচীন বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল, যা বর্তমানে ভারত এবং বাংলাদেশে বিভক্ত। সিলেট অঞ্চল বিশ্বের অন্যতম একটি সুন্দর এবং সমৃদ্ধ অঞ্চল।

  • সিলেটি:

‘সিলেটি’ একটি জাতির নাম, যারা বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা অথবা যারা মাতৃভাষা তথা প্রথম ভাষা হিসেবে সিলোটি ভাষায় কথা বলে থাকে। বাংলাদেশ এবং ভারত ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সিলেটি জাতি রয়েছে। সিলেটি জাতি পৃথিবীর অন্যতম একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতিধারী এবং বহুভাষী জাতি। এছাড়াও ‘সিলেটি’ শব্দটি ‘সিলেটের’ অথবা ‘সিলেট থেকে উদ্ভূত’ হিসেবে বুঝিয়ে থাকে।

  • সিলোটি:

‘সিলোটি’ একটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার নাম, যেটি ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে (বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল) উদ্ভব হয়েছে। বিশ্বের সমস্ত সিলেটি জাতি মাতৃভাষা তথা প্রথম ভাষা হিসেবে এই ভাষায় কথা বলে থাকে। সিলোটি ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সিলেটি ভাষা সমূহ সম্পাদনা

অনেকে সিলেটি ভাষা বলতে শুধুমাত্র সিলেট অঞ্চলের কথ্য ভাষাকে বুঝে থাকেন। কিন্তু মূলত পক্ষে সিলেটি ভাষা বলতে সেই সমস্ত ভাষাকে বুঝায়, যে ভাষা গুলো দৈনন্দিন প্রয়োজনে প্রথম, দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় ভাষা হিসেবে সিলেটি জাতি ব্যবহার করে থাকে। সিলেটি জাতি তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে পৃথিবীর প্রায় ৫০'টির অধিক ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। এ জাতি পৃথিবীর অন্যতম একটি বহুভাষী জাতি, যারা নিজ মাতৃভাষা সিলোটি ভাষার পাশাপাশি আরও এক বা একাধিক ভাষা আয়ত্ত করে থাকেন।

নিম্নে সিলেটিদের ব্যবহৃত অন্যান্য কয়েকটি ভাষা উল্লেখ করা হলো:

ইংরেজি, আরবি, বাংলা, হিন্দি, উর্দু, অসমীয়া, ফরাসি, স্প্যানিশ, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, রাশিয়ান, তুর্কি, মালয়, ইন্দোনেশিয়ান, চাইনিজ, জাপানিজ এবং কোরিয়ান ইত্যাদি।

 
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত চল্লিশটি সিলেটি ভাষায় ‘আমি’ শব্দটি

ইতিহাস সম্পাদনা

ডিকশনারি সম্পাদনা

Syloti - English - বাংলা

A সম্পাদনা

Ab - Glass - কাঁচ

B সম্পাদনা

Baiju - Side - পার্শ্ব

C সম্পাদনা

Cips - Chips - চিপ

D সম্পাদনা

Dab - Cocoanut - নারিকেল

E সম্পাদনা

Earfut

F সম্পাদনা

Fay

G সম্পাদনা

Gaib

H সম্পাদনা

Hoie

I সম্পাদনা

Izliy

J সম্পাদনা

Jehevu

K সম্পাদনা

Kifta

L সম্পাদনা

Lax

M সম্পাদনা

Manu

N সম্পাদনা

Nam

O সম্পাদনা

Oloiw

P সম্পাদনা

Ponc

Q সম্পাদনা

Qibla

Quran

R সম্পাদনা

Rab

S সম্পাদনা

Sikna

T সম্পাদনা

Tezga

U সম্পাদনা

Uwla

V সম্পাদনা

Venweqa

W সম্পাদনা

Wom

X সম্পাদনা

Xai

Y সম্পাদনা

Yavaiy

Z সম্পাদনা

Zra

Zta

Zti

গ্রামার সম্পাদনা

উদ্ভব অঞ্চল সম্পাদনা

  • দক্ষিণ এশিয়া

ব্যবহারকারী অঞ্চল সম্পাদনা

  • দক্ষিণ এশিয়া
  • দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া
  • পূর্ব এশিয়া
  • মধ্যপ্রাচ্য
  • ইউরোপ
  • উত্তর আমেরিকা
  • ওশেনিয়া
  • উত্তর আফ্রিকা

অন্যান্য বর্ণমালা সম্পাদনা

  • সিলোটি নাগরি[২]
  • পূর্বী নাগরী[৬]
  • সিলোটি ব্রেইল (সিলেটি ব্রেইল)[৭]
  • আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালা (IPA)[৮]

অন্যান্য নাম এবং বানান সম্পাদনা

  • সিলেটি ভাষা
  • সিলোটি ভাষা
  • সিলটি ভাষা
  • ছিলোটি ভাষা
  • ছিলেটি ভাষা
  • ছিলটি ভাষা
  • মুসলমানি ভাষা
  • জৈন্তাপুরী ভাষা
  • শুদ্ধ ভাষা
  • ক্লাসিক্যাল সিলেটি ভাষা
  • আধুনিক শুদ্ধ সিলেটি ভাষা
  • পূর্বী ভাষা
  • পূর্ব ভারতীয় ভাষা
  • বাংলাদেশী ভাষা
  • ভারতীয় ভাষা
  • সিলেটি বাংলা ভাষা

উপভাষা সমূহ সম্পাদনা

সারা বিশ্বে সিলোটি ভাষার বিভিন্ন উপভাষা প্রচলিত রয়েছে, নিম্নে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ১৫ টি উপভাষা দেওয়া হলো:

  • উত্তর সিলোটি বা জৈন্তাপুরী সিলোটি
  • সেন্ট্রাল সিলোটি
  • পূর্বী সিলোটি
  • দক্ষিণা সিলোটি
  • বরাকি সিলোটি
  • হবিগঞ্জী সিলোটি
  • সুনামগঞ্জী সিলোটি
  • কিশোরগঞ্জী সিলেটি
  • ব্রিটিশ সিলোটি
  • আমেরিকান সিলোটি
  • কানাডিয়ান সিলোটি
  • অস্ট্রেলিয়ান সিলোটি
  • ইতালিয়ান সিলোটি
  • ফ্রেঞ্চ সিলোটি
  • স্প্যানিশ সিলোটি

সিলোটি ব্রেইল লিপি সম্পাদনা

সিলোটি ব্রেইল হলো একটি ব্রেইল লিখন পদ্ধতি, যা সিলোটি ভাষার জন্য ব্যবহৃত হয়। ব্রেইল লিপি সাধারণত অন্ধ মানুষদের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য ব্যবহার ও চর্চা করা হয়। সিলোটি ব্রেইল স্যার মাহবুবুল আলম প্রবর্তন করেন। নিচে আধুনিক শুদ্ধ সিলোটির মূল হরফ সমূহের (হরফাইন) সাথে সিলোটি ব্রেইল (সিলেটি ব্রেইল) লিপি তুলে ধরা হয়েছে:

ক্রমিক নম্বর মূল হরফ সিলোটি ব্রেইল ফন্ট ব্রেইল ডটাইন
০১ A a 1
০২ Β b 12
০৩ C c 14
০৪ D d 145
০৫ Ε e 15
০৬ F f 124
০৭ G g 1245
০৮ H h 125
০৯ Ι i 24
১০ J j 245
১১ K k 13
১২ L l 123
১৩ M m 134
১৪ N n 1345
১৫ Ο o 135
১৬ P p 1234
১৭ Q q 12345
১৮ R r 1235
১৯ S s 234
২০ T t 2345
২১ U u 136
২২ V v 1236
২৩ W w 2456
২৪ X x 1346
২৫ Y y 13456
২৬ Z z 1356

নিচে সিলোটি সংখ্যাগুলোর সাথে ব্রেইল ফন্টের তালিকা উল্লেখ করা হলো:

সিলোটি নাম্বার সিলোটি নাম সিলোটি ব্রেইল ফন্ট ব্রেইল ডটাইন
0 Yuinno 3
1 Ex 16
2 Wui 26
3 Vin 126
4 Sair 36
5 Fas 23
6 Soe 235
7 Yav 12356
8 At 356
9 Noe 146

সিলোটি ভাষা শিক্ষা সম্পাদনা

নিম্নে স্যার মাহবুবুল আলম কর্তৃক আবিষ্কৃত একটি সিলোটি প্যানগ্রাম পাঁচটি বর্ণমালায় দেওয়া হলো, যার মধ্যে আধুনিক শুদ্ধ সিলোটি (আশুসি) বর্ণমালার (ল্যাটিন স্ক্রিপ্ট) সকল হরফ বা বর্ণ (২৬ টি বর্ণ) রয়েছে:

Siloti (MSS): Hanife bajar vone zgur, apel, coxlet, kismis, dim & weqey anise.

silɔʈi (IPA): hɐnife bɐd͡ʒɐɾ tɔne ɐŋɡuɾ, ɐpel, t͡ʃɔxleʈ, kismis, ɖim ɐɾ deɽeʃ ɐnise.

ꠍꠤꠟꠧꠐꠤ (Syloti Nagri): ꠢꠣꠘꠤꠚꠦ ꠛꠣꠎꠣꠞ ꠔꠘꠦ ꠀꠋꠉꠥꠞ, ꠀꠙꠦꠟ, ꠌꠈꠟꠦꠐ, ꠇꠤꠍꠝꠤꠍ, ꠒꠤꠝ ꠀꠞ ꠖꠦꠠꠦꠡ ꠀꠘꠤꠍꠦ।

সিলোটি (Eastern Nagri): হানিফে বাজার তনে আংগুর, আপেল, চখলেট, কিছমিছ, ডিম আর দেড়েশ আনিছে।

⠎⠊⠇⠕⠞⠊ (Braille): ⠓⠁⠝⠊⠋⠑ ⠃⠁⠚⠁⠗ ⠧⠕⠝⠑ ⠵⠛⠥⠗ ⠁⠏⠑⠇ ⠉⠕⠭⠇⠑⠞ ⠅⠊⠎⠍⠊⠎ ⠙⠊⠍ ⠁⠗ ⠺⠑⠟⠑⠽ ⠁⠝⠊⠎⠑

ছড়া, কবিতা ও গান সম্পাদনা

সিলোটি ল্যাসন্স সম্পাদনা

  • পরিচিতি পর্ব:

সিলোটি বর্ষপঞ্জি সম্পাদনা

৫৭০ ঈসায়ী সালের (খ্রিস্টাব্দ) আগস্ট মাসের শেষের দিকে (২৯/০৮/৫৭০ ঈসায়ী তারিখে) অর্থাৎ ১লা সিলোটি (মোহাম্মদী) সালের ভাদো মাসের ২৯ তারিখে ইসলামের সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর উনার জন্মের বছর অর্থাৎ ওই বছরের ছৈত্ (মার্চ) মাসের শুরু থেকে মাহাবুবিয়ান ক্যালেন্ডার তথা সিলোটি সালের গণনা করা হয়ে থাকে। সুতরাং যেহেতু নবী মোহাম্মদের (সা.) জন্মের বছর অনুসরণের মাধ্যমে উক্ত সালের গণনা করা হয়, সুতরাং এটাকে মোহাম্মদী সালও বলা হয়ে থাকে। মৌসুমী সুবিধা অনুযায়ী মাহবুবিয়ান ক্যালণ্ডারে বছরের প্রথম মাস হলো ছৈত্ এবং শেষ মাস হলো ফাল্গুন। স্যার মাহবুবুল আলম সিলোটি ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করার কারণে এটাকে মাহবুবিয়ান ক্যালেন্ডার বলা হয়।

সিলোটি বর্ষ সংখ্যা পদ্ধতিতে ১ সিলোটির (Siloti Baw - SB) পূর্বে ১ সিলোটিপূর্ব (Siloti Furbo - SF) আসে এবং কোনো শূন্য বর্ষ থাকেনা। নতুন কোনো শতাব্দী, সহস্রাব্দ বা যুগ শূন্য বর্ষ থেকে নাকি ১ বর্ষ থেকে শুরু হয়েছে, সেটা নিয়ে বিশ্বে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে।

নিম্নে সিলোটি বর্ষের কয়েকটি নববর্ষ তারিখ উল্লেখ করা হলো: সম্পাদনা

ক্যালেন্ডারের ধরণ মাহবুবিয়ান ক্যালেন্ডার গ্র্যাগোরিয়ান ক্যালেন্ডার
বর্ষ পরিচিতি মোহাম্মাদি বা সিলোটি ঈসায়ী (খ্রিষ্টাব্দ) বা ইংরেজি
বিভিন্ন নববর্ষ বছর/মাস/দিন
১৪৫৪/০১/০১ ২০২৪/০৩/০১
১৪৫৫/০১/০১ ২০২৫/০৩/০১
১৪৫৬/০১/০১ ২০২৬/০৩/০১
১৪৫৭/০১/০১ ২০২৭/০৩/০১
১৪৫৮/০১/০১ ২০২৮/০৩/০১
১৪৫৯/০১/০১ ২০২৯/০৩/০১
১৪৬০/০১/০১ ২০৩০/০৩/০১
১৪৬১/০১/০১ ২০৩১/০৩/০১
১৪৬২/০১/০১ ২০৩২/০৩/০১
১৪৬৩/০১/০১ ২০৩৩/০৩/০১

সিলোটি অধিবর্ষ বা লিপ-ইয়ার: এই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ৪ দিয়ে বিভাজ্য বছরগুলোকে অধিবর্ষ বলা হয়। যেমন: ২০০৪ সাল একটি অধিবর্ষ। তবে এই নিয়মের ব্যতিক্রমও আছে। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরতে একদম নিখুঁতভাবে ৩৬৫.২৫ দিন সময় নেয় না, একটু কম নেয়। তাই দেখা গেছে যে চার বছর পর পর অধিবর্ষ ধরলে প্রতি চারশ বছরে ৩ দিন সময় বেশি ধরা হয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধানের জন্য যেসব বছর ১০০ দ্বারা বিভাজ্য,কিন্তু ৪০০ দ্বারা নয় তাদের অধিবর্ষের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।[৯]

নিম্নে সিলোটি সপ্তাহের সাতটি বারের নাম উল্লেখ করা হলো: সম্পাদনা

ক্রমিক নাম্বার আধুনিক সিলোটি নাম ও বানান পূর্বী নাগরী লিপিতে IPA বানান বাংলা নাম
০১ Yukkurbar শুক্কুরবার ʃukkuɾbɐɾ শুক্রবার
০২ Yonibar শনিবার ʃɔnibɐɾ শনিবার
০৩ Robibar রবিবার ɾɔbibɐɾ রবিবার
০৪ Yombar শমবার ʃɔmbɐɾ সোমবার
০৫ Mozgolbar মংগলবার mɔŋɡɔlbɐɾ মঙ্গলবার
০৬ Buwbar বুধবার budbɐɾ বুধবার
০৭ Biroyoivbar বিরশইতবার biɾɔʃɔitbɐɾ বৃহস্পতিবার

সপ্তাহ হচ্ছে সময় পরিমাপের একটি একক, যা সাত দিনের সমষ্টিতে গঠিত। সমগ্র পৃথিবীতে এটি কর্ম-দিবস এবং বিশ্রাম-দিবসের চক্রে সংগঠিত। সিলোটি সপ্তাহে (Yafva/Hafva) সপ্তাহের প্রথম দিন শুক্কুরবার এবং শেষ দিন বিরশইতবার।

নিম্নে সিলোটি বারো মাসের নাম উল্লেখ করা হলো: সম্পাদনা

ক্রমিক নাম্বার আধুনিক সিলোটি নাম ও বানান সিলোটি নাগরি লিপিতে পূর্বী নাগরী লিপিতে IPA বানান ঈসায়ী মাস
০১ Soiv ꠍꠂꠔ ছৈত্ sɔit মার্চ
০২ Boiyag ꠛꠂꠡꠣꠉ বৈশাগ bɔiʃɐɡ এপ্রিল
০৩ Jet ꠎꠦꠐ জেট d͡ʒeʈ মে
০৪ Aq ꠀꠠ আড় ɐɽ জুন
০৫ Haon ꠢꠣꠅꠘ হাওন hɐɔn জুলাই
০৬ Bawo ꠜꠣꠖꠧ ভাদো bɐdɔ আগস্ট
০৭ Asin ꠀꠍꠤꠘ আছিন ɐsin সেপ্টেম্বর
০৮ Xavvi ꠈꠣꠔ꠆ꠔꠤ খাত্তি xɐtti অক্টোবর
০৯ Agon ꠀꠉꠘ আগন ɐɡɔn নভেম্বর
১০ Fuy/Fu ꠚꠥꠡ/ꠚꠥ ফুশ/ফু fuʃ/fu ডিসেম্বর
১১ Mag ꠝꠣꠉ মাগ mɐɡ জানুয়ারি
১২ Falgun ꠚꠣꠟ꠆ꠉꠥꠘ ফাল্গুন fɐlɡun ফেব্রুয়ারি

নিম্নে সিলোটি বর্ষের ঋতুসমূহ উল্লেখ করা হলো: সম্পাদনা

ক্রমিক নাম্বার আধুনিক সিলোটি নাম ও বানান সিলোটি নাগরি লিপিতে ব্যপ্তি IPA বানান ইংরেজি নাম
০১ Gorom ꠉꠞꠝ ছৈত্, বৈশাগ, জেট ɡɔɾɔm Summer
০২ Baqsa ꠛꠣꠠꠍꠣ আড়, হাওন, ভাদো bɐɽsɐ Monsoon
০৩ Xora ꠈꠞꠣ আছিন, খাত্তি, আগন xɔɾɐ Autumn
০৪ Yiv ꠡꠤꠔ ফুশ, মাগ, ফাল্গুন ʃit Winter

ঋতু বা মৌসুম বছরের একটি খণ্ডবিশেষ যা নির্দিষ্ট সার্বজনীন কোনো সূত্রের ভিত্তিতে স্থির করা হয়। সচরাচর স্থানীয় আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে বৎসরের ঋতু বিভাজন করা হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বসন্ত, গ্রীষ্ম, হেমন্ত ও শীত- এই চারটি প্রধান ঋতু দেখা যায়। বাংলাদেশ এবং ভারতের মতো কিছু দেশের জনগণ ঋতুকে আরো কয়েকভাগে বিভক্ত করেছেন। কিন্তু যদিও বাংলাদেশ এবং ভারতে ছয়টি ঋতু বিদ্যমান, কিন্তু সিলেটিরা মাত্র চারটি ঋতুর সাথে পরিচিত। আর সিলোটি ঋতুতে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর এর পরিবর্তনে এসে থাকে। সিলোটি ঋতু সমূহ হলো গরম, বাড়ছা, খরা ও শিত। সিলোটি ঋতুতে বাড়ছাকে মেঘ-পানির সিজন, খরাকে শুকনো সিজন এবং শিতকে এওত বা ঠান্ডা সিজন নামেও অভিহিত করা হয়। মৌসুমকে সিলোটি ভাষায় মৌসুম, সিজন, ঋতু, দিন এবং সময় হিসেবে সম্বোধন করা হয়।

নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সম্পাদনা

আন্তর্জাতিক সিলোটি ভাষা একাডেমী (আসিভাএ): আন্তর্জাতিক সিলোটি ভাষা একাডেমী (আসিভাএ) সিলোটি ভাষা সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণামূলক, উন্নয়নমূলক, শিক্ষামূলক এবং প্রচারণামূলক পদক্ষেপ বা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সংস্থাটি ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট স্যার মাহবুবুল আলম। প্রায় অর্ধশতাধিক গবেষক এবং সাহিত্যিকদের সমন্বয়ে এই একাডেমী গঠিত। এই প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি নাম: International Syloti Language Academy - ISLA এবং আধুনিক সিলোটি নাম: Anvorjavik Siloti Baya Ekademi - ASBE, যা বাংলাদেশী, ভারতীয়, ব্রিটিশ এবং মার্কিন ভাষাবিদদের পরামর্শ, গবেষণা ও সংযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত।[১০]

সূত্র সম্পাদনা

  1. MSS or MIS Alphabet
  2. ২.০ ২.১ Syloti language and alphabets
  3. MSS or MIS
  4. International Phonetic Alphabet - IPA
  5. International Phonetic Alphabet - IPA
  6. Eastern Nagari
  7. IPA Braille
  8. International Phonetic Alphabet - IPA
  9. Islamic year and leap year
  10. International Syloti Language Academy - ISLA