বাঁশি শিক্ষা
বাঁশি হল দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাপ্ত অনুভূমিকভাবে বাজানোর এক ধরনের বাদ্যযন্ত্রবিশেষ, যা হিন্দুস্তানি উচ্চাঙ্গ সংগীতে বহুল ব্যবহৃত একটি যন্ত্র। এই যন্ত্রটি বাঁশের তৈরি এবং ফুঁ দিয়ে বাজাতে হয়, অনুরূপে বেণু নামক একটি বাদ্যযন্ত্র আছে, যা দক্ষিণ ভারতের কর্নাটকি উচ্চাঙ্গ সংগীতে ব্যবহৃত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের এক সুপ্রাচীন বাদ্যযন্ত্র হল এই বাঁশি বা বংশী। ঋগ্বেদ আর অন্যান্য হিন্দু-বৈদিক গ্রন্থে বাঁশিকে নাদী এবং তূণব বলে বর্ণনা করা হয়েছে। সংস্কৃত গ্রন্থ নাট্যশাস্ত্রে এই যন্ত্রের গুরুত্ব ও কার্যপ্রণালীর বিস্তৃত বর্ণনা পাওয়া যায়।
বাঁশি সাধারণত একটি ফাঁপা বাঁশের টুকরো দিয়ে তৈরি করা হয়, যার উপর আঙুল রাখার ছয়টি নয়তো আটটি ছিদ্র বানানো হয়। তবে বর্তমানে আধুনিক উপায়ে হাতির দাঁত, ফাইবার গ্লাস আর নানা ধাতু দিয়েও বাঁশি তৈরি করা হচ্ছে। ছয়টি ছিদ্র দিয়ে সুরের আড়াইটে সপ্তক বা স্বরগ্রাম বাজানো যায়। বাঁশির দৈর্ঘ্য সাধারণত ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) থেকে ৭৫ সেন্টিমিটারের (৩০ ইঞ্চি) মধ্যে হয়, আর এর পরিধি হয় মানুষের বুড়ো আঙুলের সমান।এর একটি প্রান্ত বদ্ধ থাকে, আর ওই বদ্ধ প্রান্তের কয়েক সেমি দূরেই থাকে ফুঁ দেওয়ার ছিদ্র। বেশি লম্বা বাঁশি থেকে কম তীক্ষ্ণতার, কিন্তু গভীর সুর নির্গত হয়। প্রথাগত বাঁশির গঠনে কোনো পর্দা বা চাবির ব্যবহার নেই, বাদক তাঁর ইচ্ছেমতো ছিদ্রগুলোকে আঙুল দিয়ে চেপে কিংবা ছেড়ে নানান সুর সৃষ্টি করতে পারেন।
বংশী জাতীয় যন্ত্রকে অনেক প্রাচীন হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন মন্দিরের চিত্র ও ভাস্কর্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের চিত্রায়ণে বাঁশি একটি অপরিহার্য অঙ্গ। কৃষ্ণ ও রাধার প্রেম কাহিনির সাথে বাঁশি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বংশী কৃষ্ণের পবিত্র অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী বাদ্যযন্ত্র হিসেবেও খ্যাত। কিছু গ্রন্থে বংশী শব্দটির স্থানে মুরলী নামটিও লেখা হয়েছে। শৈব ধর্মেও এই যন্ত্রের অনেক উল্লেখ রয়েছে। লক্ষণীয়, আদি-মধ্যযুগের ভারতীয় গ্রন্থগুলোতে এই যন্ত্রের নাম বংশী, কিন্তু মধ্যযুগের ইন্দোনেশীয় হিন্দু ও বৌদ্ধ চিত্রকলা, এমনকি জাভা আর বালির মন্দির ভাস্কর্যে এই যন্ত্রকে ওয়াংসি নামে অভিহিত করা হয়েছে।