প্লুটো একটি বামন গ্রহ। ১৯৩০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্লাইড ডব্লিউ. টমবাগ অ্যারিজোনায় এটি আবিষ্কার করেন।[]

নিউ হরাইজন্স মহাকাশযান থেকে দৃশ্যমান প্লুটোর ছবি
⯓ প্লুটোর বৈশিষ্ট্য:

  • প্লুটো একটি বামন গ্রহ, যা পৃথিবীর চাঁদের চেয়েও ছোট।
  • প্লুটো কখনও কখনও নেপচুনের চেয়ে সূর্যের কাছাকাছি চলে যায়।

প্লুটো কত বড়?

সম্পাদনা
 
প্লুটো, ক্যারন, চাঁদ এবং পৃথিবীর আকারের তুলনা

প্লুটোর ভর প্রায় ১২,৫০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০ কেজি।[] দেখতে অনেক বেশি মনে হলেও এটি আসলে পৃথিবীর ভরের মাত্র ৫০০ ভাগের এক ভাগের সমান। প্লুটোর ব্যাস ২২০০ থেকে ২৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে।[] এর ভূ-পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ১,৭৯,৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটার (যা পৃথিবীর ৩০ ভাগের এক ভাগ)।[] প্লুটোর আয়তন ৭,১৫,০০,০০,০০০ কিমি (যা পৃথিবীর ১৫০ ভাগের এক ভাগ)।[]

 
সৌরজগৎ

ভূমিকা
আমাদের সৌরজগৎ
সূর্য
বুধ
শুক্র
পৃথিবী
চাঁদ
মঙ্গল
গ্রহাণুপুঞ্জ
বৃহস্পতি
শনি
ইউরেনাস
নেপচুন
প্লুটো
ধূমকেতু
কুইপার বেষ্টনী
উর্ট মেঘ
পরিভাষাকোষ
পরীক্ষা

প্লুটোর ভূপৃষ্ঠ কেমন?

সম্পাদনা
 
প্লুটোর পৃষ্ঠদেশ

প্লুটোর ভূপৃষ্ঠ বরফ দিয়ে ঢাকা থাকে।[] এটি অত্যন্ত শীতল এবং এর তাপমাত্রা প্রায় -২৩০ °সে. হয়ে থাকে।[] প্লুটোর বায়ুমণ্ডল খুবই পাতলা। এটি যখন সূর্য থেকে দূরে অবস্থান করে তখন এর বায়ুমণ্ডল ঠান্ডায় জমাট বেঁধে যায়।[]

উপরে ডানদিকের ছবিটিতে প্লুটোর পৃষ্ঠভাগের রং দেখা যাচ্ছে।

প্লুটোর উপগ্রহগুলো কেমন?

সম্পাদনা

প্লুটোর তিনটি উপগ্রহের কথা জানা গিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টির নাম "ক্যারন" (বা "শ্যারন")। এর ব্যাস প্লুটোর ব্যাসের প্রায় অর্ধেক। প্লুটো ও ক্যারনের আকার কাছাকাছি হওয়ার কারণে এদেরকে অনেক সময় "ডাবল প্ল্যানেট" বা "দ্বৈত গ্রহ" বলা হয়।[] ক্যারনের পৃষ্ঠভাগ পানির বরফে আবৃত থাকে।[১০] প্লুটোর অপর দুটি উপগ্রহ আবিষ্কার করা হয়েছে ২০০৫ সালে। এদের নামকরণ করা হয়েছে নিক্স এবং হাইড্রা।[১১]

প্লুটোর এক দিন কত বড়?

সম্পাদনা

প্লুটোর এক দিন পৃথিবীর প্রায় ৬.৪৮৭ দিনের সমান। ইউরেনাসের মতো প্লুটোও তার পাশে ঘুরছে।[১২]

প্লুটোর এক বছর কত বড়?

সম্পাদনা

প্লুটোর এক বছর পৃথিবীর প্রায় ৯০,৬১৩ দিন, অর্থাৎ ২৪৮ বছরের সমান।[১৩]

এটি কী দিয়ে তৈরী?

সম্পাদনা

বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে প্লুটোর অধিকাংশ অঞ্চল পাথর এবং বরফ দিয়ে তৈরি,[১৪] কিন্তু আরও গবেষণা না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। ক্যারনের আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের প্লুটোর ঘনত্ব অনুমান করতে সাহায্য করে। সংগৃহীত তথ্য থেকে তারা, প্লুটো কী এবং এটি কী থেকে তৈরি হয়নি, সে সম্পর্কে অনুমান করতে সক্ষম হন। কারণ, প্লুটো যদি ভারী কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি হতো, তাহলে এর ঘনত্ব অনেক বেশি হতো। আর যদি এটি গ্যাস দিয়ে তৈরি হতো তবে এর ঘনত্ব খুব কম হতো। কিন্তু প্লুটোর ঘনত্ব এদের মাঝামাঝি। তাই এটি সম্ভবত শিলা এবং বরফ দিয়ে তৈরি।

প্লুটোর মহাকর্ষ আমাকে কতটা আকর্ষণ করবে?

সম্পাদনা

তুমি যদি প্লুটোতে থাকতে, তাহলে প্লুটো তোমাকে পৃথিবীর ০.০৬ গুণ বল দিয়ে আকর্ষণ করত।[১৫] এর অর্থ হচ্ছে তুমি সেখানে লাফিয়ে অনেক উঁচুতে উঠতে পারতে — এমন কি, মানুষ চাঁদে গিয়ে লাফ দিলে যতটা উঁচুতে উঠতে পারবে তার চেয়েও বেশি।

কার নামানুসারে প্লুটোর নামকরণ করা হয়েছে?

সম্পাদনা

প্লুটোর নামকরণ করা হয়েছে রোমানদের পাতালপুরীর দেবতার নামানুসারে। রোমান পুরাণ মতে, তিনি প্রোসার্পিনা (পার্সেফোন) কে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে অপহরণ করেছিলেন। এতে তার মা, কৃষির দেবী সেরেস খুব কষ্ট পান। এর ফলে প্রকৃতিতে শীতকাল নেমে আসে। শীতের অবসান ঘটাতে দেবতাদের রাজা জুপিটার এবং তার ভাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে প্রোসার্পিনা যতক্ষণ পর্যন্ত পাতালের কোন খাবার না খাবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু প্রোসার্পিনা ছয়টি ডালিমের দানা খেয়ে ফেলেছিলেন। তাই জুপিটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তাকে প্রতি বছরে ছয় মাস পাতালে কাটাতে হবে। এটিই শীতের আবির্ভাব সম্পর্কে রোমানদের মিথ। যখন প্রোসার্পিনা পাতালে যায়, সবকিছুর বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। আবার যখন সে ফিরে আসে, তার মা আবার খুশি হয় এবং প্রকৃতি যেন প্রাণ ফিরে পায়।[১৬]

রোমান পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ক্যারন মৃতদের আত্মাকে অ্যাকারন নদীর ওপারে মৃতদের দেশে নিয়ে যান।[১৭]

প্লুটো কি একটি গ্রহ?

সম্পাদনা

প্লুটোকে আনুষ্ঠানিকভাবে বামন গ্রহ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, যা সাধারণ গ্রহগুলো থেকে আলাদা। এর একটি কারণ হল প্লুটোর ছোট আকার। যদিও সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান যেসব বস্তু আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে এটি দশম বৃহত্তম, কিন্তু এটি পৃথিবীর চাঁদ সহ অনেক উপগ্রহের চেয়েই ছোট। বিজ্ঞানীরা আগে প্লুটোকে তার আসল আকারের চেয়ে অনেক বড় মনে করতেন[১৮] এবং অনেক বছর ধরে এটিকে নবম গ্রহ হিসেবে মনে করা হচ্ছিল।

আরেকটি প্রধান কারণ হল, প্লুটো কুইপার বেল্ট নামক একটি বৃহৎ বস্তু গুচ্ছের অংশ, যেগুলো নেপচুনের বাইরের অঞ্চলে সূর্যের চারদিকে ঘোরে। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে কুইপার বেল্টে আরেকটি বস্তু "এরিস" আবিষ্কৃত হয়। এরিস প্লুটোর চেয়েও বড়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, সৌরজগতের এই অংশে প্লুটো আকারের আরও কিছু বস্তু এবং কয়েক লক্ষ ছোট ছোট বস্তু রয়েছে। এ কারণে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (আইএইউ) প্রথমবারের মতো 'গ্রহ' শব্দটি সংজ্ঞায়িত করেছে। এই সংজ্ঞা অনুসারে, এরিস ও প্লুটো উভয়েই (এবং সেই সাথে সেরেস, হাউমেয়া ও মাকেমাকে) বামন গ্রহ।

এর পরও অনেক মানুষ ঐতিহ্যের কারণে প্লুটো একটি নিয়মিত গ্রহ- এই ধারণাটি ধরে রেখেছেন। এছাড়াও অনেক পাঠ্যপুস্তক এবং রেফারেন্স বই এখনো হালনাগাদ করা হয়নি এবং সেগুলোতে এখনও প্লুটোকে নবম গ্রহ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা আছে।

পরবর্তী বিষয়: ধূমকেতু

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. http://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/factsheet/plutofact.html
  2. Snow, Theodore P. (1996) "The Outer Planets." In The Dynamic Universe: An Introduction to Astronomy. pp. 285. West Publishing Company. আইএসবিএন 0-314-64212-9; http://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/factsheet/plutofact.html
  3. Spinrad, Hyron. 2004 "Pluto." World Book Online Reference Center. 2004. World Book, Inc. http://www.worldbookonline.com/wb/Article?id=ar435500; http://www.nasa.gov/worldbook/pluto_worldbook.html; Snow, Theodore P. (1996) "The Outer Planets." In The Dynamic Universe: An Introduction to Astronomy. pp. 285. West Publishing Company. আইএসবিএন 0-314-64212-9; http://amazing-space.stsci.edu/resources/fastfacts/pluto.php.p=Astronomy+basics@,eds,astronomy-basics.php&a=,eds
  4. http://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/factsheet/plutofact.html
  5. http://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/factsheet/plutofact.html
  6. Snow, Theodore P. (1996) "The Outer Planets." In The Dynamic Universe: An Introduction to Astronomy. pp. 287. West Publishing Company. আইএসবিএন 0-314-64212-9; http://www.nasa.gov/worldbook/pluto_worldbook.html
  7. http://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/factsheet/plutofact.html; Snow, Theodore P. (1996) "The Outer Planets." In The Dynamic Universe: An Introduction to Astronomy. pp. 285. West Publishing Company. আইএসবিএন 0-314-64212-9; http://www.nasa.gov/worldbook/pluto_worldbook.html
  8. Snow, Theodore P. (1996) "The Outer Planets." In The Dynamic Universe: An Introduction to Astronomy. pp. 287. West Publishing Company. আইএসবিএন 0-314-64212-9; http://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/factsheet/plutofact.html
  9. http://solarsystem.nasa.gov/planets/profile.cfm?Object=Plu_Charon
  10. http://seds.lpl.arizona.edu/nineplanets/nineplanets/pluto.html
  11. http://www.space.com/scienceastronomy/060621_nix_hydra.html
  12. http://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/factsheet/plutofact.html; http://www.nineplanets.org/pluto.html
  13. http://solarsystem.nasa.gov/planets/profile.cfm?Object=Pluto&Display=Overview
  14. http://seds.lpl.arizona.edu/nineplanets/nineplanets/pluto.html
  15. Snow, Theodore P. (1996) "The Outer Planets." In The Dynamic Universe: An Introduction to Astronomy. pp. 285. West Publishing Company. আইএসবিএন 0-314-64212-9; http://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/factsheet/plutofact.html
  16. http://www.windows.ucar.edu/tour/link=/mythology/persephone_seasons.html; http://www.pantheon.org/articles/p/persephone.html
  17. http://www.pantheon.org/articles/c/charon.html
  18. Sobel, Dava (2005) "The Planets." pp. 220. Harper Perennial Publishing Company. আইএসবিএন 1-84115-621-3